নিজস্ব প্রতিবেদন: ঘড়ির দুই কাঁটা কখন ১২ ঘরের সহবস্থান করবে, সে দিকেই ঠায় তাকিয়ে সামার আলমগ্রেন। রাত ১২ টা বাজলেই কয়েক দশকের অপেক্ষার অবসান হবে। কিন্তু কাঁটা যেন এগোচ্ছেই না। সৌদি আরবে এই প্রথম মেয়েরা ড্রাইভিং করতে পারবেন। এ হেন সন্ধিক্ষণে আর কি ঘরে বসে থাকতে পারেন সাংবাদিক সামার আলমগ্রেন!


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

রবিবার ঘড়িতে ১২ টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়েন সামার। বেরনোর সময় ঘুমিয়ে থাকা চার বছরের সন্তানের গালে হাল্কা চুমু দিয়ে যান। পরনে সাদা নিকাব। ঠোঁটে গোলাপী লিপস্টিক। নাকে নথ। পায়ে স্যান্ডেল। পার্ক করানো সাদা জিএমসি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন সামার। আজ সবই যেন তাঁর সাদা। সামারের কথায়, “এমন দিনে সাদা পরার মানে হলো শান্তির বার্তা দেওয়া।” তাঁর মুখে প্রশান্তির হাসি।


আরও পড়ুন- ‘আদর্শ মুসলিম রাষ্ট্র’ তৈরি করতে পাক নির্বাচনে লড়ছে ২৬৫ জঙ্গি



গাড়ি মোড় ঘোরাতেই দেখা হল এক ব্যক্তির সঙ্গে। তাঁর দুই হাতে বাজারের থলি। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তিনি। সামার কোনও জবাব না দিলেও, ঠোঁটের কোণে উদ্ভাসিত হাসিই বলে দিল ‘আজ শুধু আমাদের দিন।’ সামার সৌদির একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সঞ্চালিকা। কর্মসূত্রে তাঁর কাছে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। বিভিন্ন দেশে ড্রাইভিং করলেও নিজের জন্মভূমিতে সে সুযোগ কখনও হয়ে ওঠেনি। এ দিন যখন কিং ফায়াদ হাইওয়ে ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন, আকাশে তখন চাঁদ তার আলোয় ভাসিয়ে দিচ্ছে রিয়াধের পথঘাট।  দেখলেন রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে বেলুন হাতে এই রাতকে উদযাপন করছেন তরুণ-তরুণীরা। কেউ কেউ আবার সামারের গাড়ি থামিয়েই নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত। সামার বলেন, “বিশ্বাস করুন আমি এখনও ভাবতেই পাচ্ছি না এই রাস্তায় স্টিয়ারিং হাতে গাড়ি চালাচ্ছি। সত্যিই আজ আমার পাখির মতো উড়তে ইচ্ছা করছে।”



 স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখা থেকে প্রকাশ্যে গাড়ি চালানো এক একটি ‘ঐতিহাসিক’ সিদ্ধান্তে সৌদি মহিলাদের জীবনে স্বাধীনতার জোয়ার এসেছে। যদিও এইসব সিদ্ধান্ত এখনও মেনে নিতে পারেনি অনেক রক্ষণশীল পরিবার। বাবা, দাদা, স্বামীর অনুমতি ছাড়া গৃহের বাইরে পা দেওয়াটা এখনও মহিলাদের গর্হিত কাজ বলে মনে করেন তাঁরা। ১৯৯০ সালে ৪৭ জন সৌদি মহিলা আইন ভেঙে রিয়াধের রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে ছিলেন। পরে তাঁদের মাশুল গুনতে হয়। ২০১৩ সালে শেখ সালেহ অল-লুহাইদান নামে এক মৌলবি জানান, মহিলারা ড্রাইভিং করলে না-কি জরায়ুর ক্ষতি হতে পারে। সন্তান ধারণে সমস্যা হতে পারে। এমন নানা ফতোয়ার জালে মহিলাদের বাঁধার চেষ্টা চলেছে কয়েক দশক ধরে।


আরও পড়ুন- রুশ আমন্ত্রণে মুন হ্যাঁ করলেও কুলুপ এঁটেছেন কিম



এ বার দেওয়ালে পিঠ ঠিকে যাওয়ায় রুখে দাঁড়িয়েছে সৌদির তরুণ প্রজন্ম। নেটিজেন মহল্লায় “নো উমেন নো ড্রাইভ” স্লোগানে স্লোগানে ভরে গিয়েছে। কার্যত বাধ্য হয়ে গত সেপ্টেম্বরে আইন সংশোধন করে সৌদি প্রশাসন। গত মাসে বেশ কিছু মহিলাকে ড্রাইভিং লাইসেন্সও দেওয়া হয়। সামার এ দিন শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে গাড়ি চালিয়েছেন সারা রাত। তিনি বলেন “আজ যেন মনে হচ্ছে ছুটির দিন। কাল মা-কে পাশে বসিয়ে ঘুরে বেড়াবো।” সামারের মা কোনও দিন এই স্বপ্ন দেখার সাহস দেখাননি, সকাল হলেই মেয়ের হাত ধরে তা চাক্ষুষ করবেন।


আরও পড়ুন- বিপজ্জনক কিম! দশ দিনের মধ্যেই ‘ভোল পালটে’ গেল মার্কিন প্রেসিডেন্টের