'গঙ্গাজল' তো পুরোনো, প্রকাশ ঝা এবার একটা 'গুড়জল' বানান

Updated By: May 2, 2016, 05:34 PM IST
'গঙ্গাজল' তো পুরোনো, প্রকাশ ঝা এবার একটা 'গুড়জল' বানান

স্বরূপ দত্ত

 

আজ থেকে ১৩ বছর আগের আগস্ট মাসে মুক্তি পেয়েছিল সিনেমাটা। গঙ্গাজল। পরিচালক প্রকাশ ঝা। ফিল্মের হিরো অজয় দেবগন। সঙ্গে গ্রেসি সিং, মোহন আগাসে, মোহন যোশি, আয়ুব খানরা। গঙ্গাজল থিয়েটারে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল জনমানসে। ফিল্ম বক্স অফিসে সুপার ডুপার হিট। অন্তত হিন্দবলয়ে এই ছবির প্রভাব পড়েছিল মারকাটারি। শুধু হিন্দবলয়ের কথা বললে সম্পূর্ণ হবে না। বেশ কিছু রাজ্যে এই ফিল্মের বক্স অফিস কালেকশন ভালো ছিল। শুধু টাকাই তো আর মাপকাঠির একমাত্র বিচার্য বিষয় হয় না কখনও। লোক তাই ঢালাও প্রশংসা করেছিল প্রকাশ ঝায়ের ফিল্মের।

গঙ্গাজলের প্রভাব দর্শকমনেও অনেকটা রেশ রেখে গিয়েছিল। তাই টেলিভিশনে প্রতি শনি কিংবা রবি রাতে গঙ্গাজল মাস্ট! গঙ্গাজল কিন্তু কোনও কল্পনায় তৈরি প্লটের উপর নাট্যরূপ নয়। গঙ্গাজল রীতিমতো বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। ১৯৭৯-'৮০ নাগাদ বিহারের ভাগলপুর জেলায় এমনটাই ঘটেছিল। ৩১ জন অভিযুক্তকে 'অন্ধ' করে দিয়েছিলেন সেখানকার পদস্থ পুলিশ কর্তারা। ভাগলপুরের ওই ৩১ অপরাধীকে ওভাবে সাজা দেওয়াতে নড়েচড়ে বসে তখনকার মানবাধিকার কমিশনও। সুপ্রিম কোর্ট ছেড়ে কথা বলেনি, এমন স্বতপ্রণোদিত হয়ে অন্ধ করে দেওয়ার শাস্তিটা। তবু, দর্শক তো এই সমাজের সাধারণ মানুষই। অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা তো আর সকলের হাতে থাকে না। তাই পর্দায় অপরাধী নৃশংস শাস্তি পেলে, হল জুড়ে হাততালির বন্যা বয়ে যায়।

প্রশ্ন হলো, এতদিন পর হঠাত্ করে ১৩ বছর আগে মুক্তি পাওয়া, লোকের দুশোবার করে দেখা একটি ছবি নিয়ে পড়লাম কেন? দিচ্ছি উত্তর। আসলে একটা দিন ছিল, যখন বিহার আমাদের থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল। সব ক্ষেত্রে। আজ বলতে খারাপ লাগে। লোকে রে রে করে আসতে পারেন। কিন্তু আজকের দিনে অনেক কিছুতেই আমরা বিহারের থেকে অনেক পিছিয়ে। আর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তো আমরা রীতিমতো নকল করছি বিহারকে! ছবি তৈরিতে হুবহু টুকছি তামিল, তেলেগু ফিল্ম। আর রাজনীতিতে এখন আমাদের আদর্শ 'বিহার মডেল'! আমাদের রাজ্যেও এখন বিহারের মতো এমএলএ কেনাবেচা হয়! আমাদের রাজ্যে এখন ভোট করাতে নির্বাচন কমিশনকেও 'বিহার মডেল দাওয়াই' দিতে হয়! আমাদের রাজ্যেও এখন নেতারা 'সাধু যাদব' মার্কা হয়ে গিয়েছেন (নিশ্চয়ই সকলে নয়)!

আমাদের রাজ্যেও এখন নেতারা দিব্যি বলতে পারেন, 'আমি বলছি, পুলিশকে বোম মারুন!' এখন আমাদের রাজ্যের নেতা-প্রার্থী জেলের ভিতরে থেকে নির্বাচনে লড়েন! আমাদের রাজ্যের নেতাদের এখন ভোটের দিন নজরবন্দি করে রাখা হয়! আর হ্যাঁ, আমাদের রাজ্যের নেতারা এখন ভোটারদের সমঝে দিতে দাওয়াই বাতলে দেন 'গুড়জল'! ব্যাস্, আর কী! গঙ্গাজল দেখে আমরা এখন গুড়জল বলা শিখে গিয়েছি। তাই তো প্রকাশ ঝাকে অনুরোধ। গঙ্গাজল তো এক যুগ হয়ে গেল। এবার গুড়জল তৈরি করুন একটা। মনে হয খারাপ চলবে না। লোকে নেবে। আগে হিন্দবলয়ের জন্য ছবি তৈরি করতেন। এখন বাংলার জন্য ছবি তৈরি করুন। হিন্দবলয়ের মানুষ হল থেকে বেরিয়ে দিব্যি বলবে, 'আরে এ যে আমাদেরই গল্প!' হ্যাঁ, বাংলা এখন বিহার মডেলেই চলছে রাজনীতির ক্ষেত্রে! ওদের গঙ্গাজল ঢেড় পুরোনো। আমাদের গুড়জলটাই এখন নিউ ট্রেন্ড। তাই আপনার নতুন ফিল্মের অপেক্ষায় থাকলাম।

সবশেষে, এই লেখায় কোনও নেতাকে অসম্মান করা নেই। তবু যদি কারও একটুও খারাপ লাগে, তাহলে মার্জনা করবেন। দেশ, রাজ্য, প্রশাসন যেমন চালাচ্ছে, তেমনই চালাক। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে, এবার একটা গুড়জল সিনেমা তৈরি হলে, বিনোদনটা ভালোই জমতো, এই যা।

 

.