'আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য নেই', 'বড়লোকের বিটি লো' নিয়ে আক্ষেপের সুর রতন কাহারের
Zee ২৪ ঘণ্টা ডট কমের তরফে রতন কাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কী বললেন রাঢ় বাংলার শিল্পী রতন কাহার?
রণিতা গোস্বামী : 'গেন্দা ফুল', র্যাপার বাদশা ও পায়েল দেব-এর গাওয়া গানটি এতক্ষণে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল। গানের মিউজিক ভিডিয়োতে লাস্যময়ী জ্যাকলিনের কোমর দোলানো হয়ত অনেকেরই মন কেড়েছে। তবে তার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কও তুলে দিয়েছে গানটি। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, বহুল প্রচলিত বাংলা গানকে এভাবে ব্যবহার করার জন্য এবং ভিডিয়োটির বিবরণীতে স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা না প্রকাশের জন্য। কেউ আবার বাংলা গানকে এভাবে ব্যবহার করার জন্য নাক সিঁটকেছেন।
তবে 'গেন্দা ফুল' গানের বাংলা অংশ অর্থাৎ 'বড়লোকের বিটি লো' প্রকৃত পক্ষে যাঁর লেখা বলে দাবি উঠেছে সেই কবি, তথা গানের লেখক ও সুরকার রতন কাহারের এবিষয়ে মতামত কী? বিষয়টি জানতে Zee ২৪ ঘণ্টা ডট কমের তরফে রতন কাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কী বললেন রাঢ় বাংলার শিল্পী রতন কাহার?
'বড়লোকের বিটি লো' গানটি কী প্রকৃতই আপনার লেখা?
রতন কাহার- হ্যাঁ, এই গানটি আমার লেখা, সুরও আমার। এবার যদি মানুষ এভাবে বেইমানি করে আমি কী করবো বলুনতো? আমি অত্যন্ত গরিব মানুষ। অনেকেই আমাকে ব্যবহার করেছে। অথচ আমার নাম দেয়নি। অনেকেই আমার কাছ থেকে গান নিয়ে গিয়েছে, নিজের নামে চালিয়েছে। তাঁদের লেখার ক্ষমতা নেই। আমার গান নিজের নামে চালিয়েছে। আমি অসহায়। আমি মাটির ঘরে থাকা, মাটির গান লেখা মানুষ। কিছু বুদ্ধিজীবি মানুষ তাঁরা অনেক কথাই বলে, আশ্বাস দেয়। কিন্তু আমাদের মতো শিল্পীকে মূল্য দেয় না। আমার এটা নিয়ে প্রতিবাদ করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই।
আপনি কবে প্রথম এই গানটি লিখেছিলেন ও গেয়েছিলেন?
রতন কাহার- একদম ঠিকঠাক মনে নেই। যতদূর মনে পড়ে ১৯৭২ সালে লিখেছিলাম। গানটা আমি প্রসারভারতীতে প্রথম গেয়েছিলাম। পরে আমি গানটি 'আনন' গোষ্ঠীর রাজকুমার সাহাকে দিয়েছিলাম। ওনারা কোরাস গাইতেন। সেখান থেকেই গানটা ছড়িয়ে পড়ে। স্বপ্না চক্রবর্তী গানটি লিখে নিয়ে গিয়েছিল আমার খাতা থেকে। পরে ১৯৭৬ সালে স্বপ্না চক্রবর্তী গানটা রেকর্ড করেন। কিন্তু সেখানেও গানটি আমার (রতন কাহার) লেখা ও সুর বলে কোনওভাবে স্বীকার করা হয়নি। তবে গানটি রেকর্ড হওয়ার বহু আগেই আমি আকাশবাণীতে গানটি গেয়েছিলাম। তখন ওই অনুষ্ঠানের পরিচালক যতদূর মনে পড়ছে মলয় পাহাড়ি, আর্য চৌধুরীও ছিলেন। পাহাড়ি সান্যালই আকাশবাণীতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেসময় স্বপ্না চক্রবর্তীও আকাশবাণীতে অনুষ্ঠান করতেন।
'বড়লোকের বিটি লো' গানটি যে আপনার, অথচ আপনার নাম না দিয়েই রেকর্ড হয়ে গেল বলছেন। আপনি প্রতিবাদ করেননি কেন?
রতন কাহার- বহুবার বলেছি। কিন্তু আইনি লড়াই লড়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য আমার নেই। কেউই মূল্য দেয়নি। কলকাতায় এমন অনেকেই আছেন যাঁরা আমার থেকে গান নিয়ে গিয়েছেন। শিলাজিৎ-ও আমার কাছ থেকে গান নিয়ে গিয়েছেন। পূর্ণচন্দ্রদাস বাউলও আমার গান গেয়েছেন। তবে অনেকেই ঠকিয়েছেন। তবে আমার লড়ার ক্ষমতা নেই। তবে কেউ স্বীকৃতি না দিক মানুষ আমায় স্বীকৃতি দিয়েছে।
স্বপ্না চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ আছে?
রতন কাহার- ওনার সঙ্গে আমার খুব যে ভাব ছিল তা তো নয়। ও আমাকে বঞ্চিত করেছে। তবে এখন মাঝে মধ্যে কথা হয়। ওই যোগাযোগ করে।
আপনি এখন থাকেন কোথায়? সংসার চলে কীভাবে?
রতন কাহার- আমি সিউড়ি (বীরভূম) তে থাকি। বিড়ি বেঁধে সংসার চলতো। গান গেয়ে বিশেষ কিছুই করতে পারিনি। তবে এখন আর কিছু করি না। আমার দুই ছেলে আর এক মেয়ে রয়েছে।
আপনাকে প্রকৃত সম্মান ও মূল্য দেওয়া হয়নি দাবি করে কিছু মানুষ কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন, প্রতিবাদ করছেন। তাঁদেরকে কী বলবেন?
রতন কাহার- তাঁরা আমায় ভালোবাসেন। তাই কথা বলছেন। কিন্তু ঠিক বুঝি না (আবেগঘন গলায়) আমাকে এত মানুষ ঠকিয়েছে যে এখন আর ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। তবে গান গেয়েই আমি বেঁচে আছি। গান গেয়ে অর্থ রোজগার করতে পারিনি। ছেলেমেয়েদের জন্যও কিছু সেভাবে করতে পারিনি।
জানা যাচ্ছে গত দেড়মাস আগে রাঢ় বাংলা কবিতা উৎসবে তাঁকে সংগীতস্রষ্টা হিসাবে সম্মানীত করা হয়েছে ।