সিল্ক কিংবা বিদ্যা বালানেরই যেন, বাস্তব জীবন বলিউডের এই অভিনেত্রীর
স্বরূপ দত্ত
আজ ৩১ জুলাই। জন্মদিন বলিউড অভিনেত্রী মমতাজের। শুধু মমতাজ নামেই তো শেষ হয় না। ওই নামের সঙ্গে সিনেমার পর্দায়, বাস্তবের কল্পনায় রয়েছে, অনেক অনেক রূপকথা। ইতিহাসের মমতাজের জন্য আস্ত একটা তাজমহল বানিয়ে দিয়েছিলেন সেদিনের সম্রাট শাহজাহান। কিন্তু বাস্তবের মমতাজের জীবনে রঙ হয়তো ছিল। সঙ্গে ছিল, অনেক কালো ছোপও। আজ জন্মদিনে মমতাজ সম্পর্কে কয়েকটা কথা বলার। পড়তে ভালো লাগবে। মমতাজ শুধুই একজন অভিনেত্রী ছিলেন না। গত শতাব্দীর ছয়ের এবং সাতের দশকে বলিউডে তিনি রাজ করেছেন। তাঁকেই সেক্স সিম্বল হিসেবে দেখেছিল ছয় এবং সাতের দশকের দেশের তামাম পুরুষ। চওড়া ঠোঁট, একটু ভারী শরীর। আজকের দিনের মতো সেদিন পুরুষের মেয়েদের সাইজ জিরোর উপর আকর্ষণ ছিল না। তখন একটু মাংসল মহিলা সৌন্দর্যেই মন ভরতো আমাদের উত্তরপুরুষের।
মমতাজের এমন নায়িকা হয়ে ওঠা বা সেক্স সিম্বল হয়ে ওঠাটাও এত সহজ ছিল না। ধর্মেন্দ্র থেকে রাজেশ খান্না সবাই তাঁর সঙ্গে অভিনয় করতে রিফিউজ করেছিলেন পর্দায়। রাজেশ খান্না কিংবা ধর্মেন্দ্ররা না হয়, স্টার অথবা সুপারস্টার ছিলেন সেই সময়। তা বলে দারা সিংও রিফিউজ করে দেবেন মমতাজের বিপরীতে অভিনয় করতে? হ্যাঁ, বাস্তবে ঘটেছিল সেটাই। আপনি আজকের যুগের মানুষ হলে মেলাতে পারবেন ডার্টি পিকচারের সিল্ক বা বিদ্যা বালানের সঙ্গে। পর্দার চিত্রনাট্যের মতোই যেমন বাস্তবেও সেদিনের সিল্কস্মিতাকে শুনতে হত মোটা হওয়ার গঞ্জনা, মমতাজের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ছিল না। রাজেশ খান্না পরে শুধু তাঁর সঙ্গে ছবি করতে রাজিই হননি। বরং, দশ-দশটা ছবি করেছিলেন মমতাজের সঙ্গে। সবকটাই সুপার ডুপার হিট! রাজেশ খান্না - মমতাজ জুটি সেই আমলে শাহরুখ-কাজল জুটির থেকেও বেশি হিট বই কম ছিল না!
আজ রাজেশ খান্নার মৃত্যুর পর নাসিরুদ্দিন শাহের মন্তব্য ঘিরে কত বিতর্ক বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তথা সারা দেশ জুড়ে। অথচ, বছর চারেক আগেও এক ইন্টারভিউতে মমতাজ বলেছিলেন, 'প্রথম ফিল্মে একসঙ্গে শুটিংয়ের সময় রাজেশ খান্না আমায় ডাকতো - এই মোটি লেড়কি বলে!' অত মোটা, পুরু, চওড়া ঠোঁটের জন্য ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রির মানুষগুলোর কাছ থেকে কম ঠোঁট কাটা কথা শুনতে হয়নি তাঁকে। পরে তিনি যখন বলিউডের অন্যতম হিট অ্যাকট্রেস হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান, তখনও হয়েছিল আর এক জ্বালা। যেহেতু মমতাজ সেই আমলেও যথেষ্ঠ শরীরী আকর্ষক ছিলেন, তাই নাকি বলিউড তারকাদের স্ত্রীরাও, তাঁদের স্বামীর কাছাকাছি ঘেঁষতে দিতেন না মমতাজকে! এই বিষয়েও মমতাজ বলেছিলেন দুঃখ করে, 'খারাপ লাগতো না। বুঝে নিয়েছিলাম, আমি সুন্দরী। তাই আমাকে দেখে সবাই জ্বলতো!'
অবশ্য এমন ব্যবহার সকলেই করেননি। শাম্মি কাপুর তো তাঁকে নাকি বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। তাই তো শাম্মির জীবনের অন্যতম হিট গান, বার বার দেখো, হাজারবার দেখোর সঙ্গে জড়িয়ে রইলেন তিনি চিরকাল। দেবানন্দ এবং জিতেন্দ্রর সঙ্গেও ছিল, তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কিন্তু মমতাজরা যে অন্যরকমই হন। তাই তো পৃথিবীর ইতিহাসে এত কোটি নারী থাকতেও তাজমহলটা তৈরি হয় 'মমতাজ'-এর জন্যই। ভূগেছেন ক্যানসারে। ফিরেও এসেছেন জয় করে। অভিনয়ের প্রস্তাব আজও পান। কিন্তু পুরুষকে নিজের শরীরী সৌন্দর্যে গলিয়ে দেওয়া নারীর কী আর নায়িকা ছাড়া পর্দায় অন্য কিছু হতে ইচ্ছে করে! তাই তো মমতাজ দিব্যি বলে দিতে পারেন, 'সিনেমা থেকে আমার নতুন করে কিছু পাওয়ার নেই। কেরিয়ারের কথা না ভেবেও মাত্র ২৬ বছরে বিয়ে করে ফেলেছিলাম। সন্তানের মা আমি অনেক আগে থেকেই। তাহলে আর আজ পর্দায় গিয়ে শাহরুখ, অক্ষয়ের মা হতে যাব কেন!'
সত্যিই তাই। আজকের যুগ, এই প্রজন্ম হয়তো আর মমতাজদের মনে রাখবে না। তাতে কী এসে গেল! তাজমহলকে যত সুন্দরই বলুন, দিনের শেষ ওই সব প্রশংসা মমতাজরাই বুকে শুষে নেয়।
আরও পড়ুন আবেশ এটা তোর জন্য