পার্কস্ট্রিট কাণ্ডে 'বেসুরো গেয়ে' রোষানলে! সেই দময়ন্তীর কাঁধেই ১০ বছর পর ৪ ধর্ষণ তদন্তের গুরুদায়িত্ব

শাস্তিকেই নিয়েছিলেন  চ্যালেঞ্জ হিসেবে, ফিরে দেখা দুঁদে IPS-এর সাফল্যের খতিয়ান

Edited By: | Updated By: Apr 12, 2022, 02:50 PM IST
পার্কস্ট্রিট কাণ্ডে 'বেসুরো গেয়ে' রোষানলে! সেই দময়ন্তীর কাঁধেই ১০ বছর পর ৪ ধর্ষণ তদন্তের গুরুদায়িত্ব

অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী 

মাঝে কেটে গেছে প্রায় ১০টা বছর। ফের হঠাৎই খবরের শিরোনামে IPS দময়ন্তী সেন(Damayanti Sen)। আদালতের নির্দেশ(Kolkata High Court), রাজ্যের চারটি ধর্ষণ মামলায় এবার তদন্ত হবে দময়ন্তী সেনের(Damayanti Sen) নজরদারিতে। তবে, তদন্তভার গ্রহণ করতে কোনও অসুবিধা থাকলে তাঁকে সেই বিষয়টি আদালতে জানাতে হবে।

প্রসঙ্গত, এদিন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির(Chief Justice, Kolkata High Court) রাজ্যকে প্রশ্ন, "একের পর এক একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। রাজ্যের পরিকাঠামো থাকার পরও কেন এই ঘটনাগুলো ঘটছে?" এরপরই, দময়ন্তী সেনের নজরদারিতে মাটিয়া(Matia), ইংরেজবাজার(English Bazar), দেগঙ্গা(Deganga) ও বাঁশদ্রোণী(Bansdroni) ধর্ষণকাণ্ডের তদন্ত প্রক্রিয়া চালানোর নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। যদিও, রাজ্যের তরফে আরেক IPS সুমন বালা সাহুর নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। 

প্রসঙ্গক্রমে, ১০ বছর আগে এমনই এক গণধর্ষণের ঘটনার তদন্তে নেমে শাসকদলের রোষের মুখে পড়েছিলেন এই দুঁদে আইপিএস। তাঁকে তড়িঘড়ি ব্যারাকপুরে পুলিস ট্রেনিং স্কুলে পাঠানো হয়। সেখানে ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল পদে বদলি করা হয়েছিল তাঁকে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে পাঠানো হয় দময়ন্তীকে। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে কেনও তাঁকে পড়তে হয়েছিল রোষের মুখে?

২০১২ সালের পার্কস্ট্রিট গণধর্ষণ(Park Street Case) মামলায় উত্তাল হয়ে উঠে গোটা রাজ্য। ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয় তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার-অপরাধ দময়ন্তী সেনকে। কিন্তু তারই মাঝে গোটা বিষয়টিকে 'সাজানো ঘটনা' বলে উল্লেখ করে কার্যত আগুনে ঘি ঢালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তাঁর বক্তব্যকে কিছুটা সমর্থন করেই নির্যাতিতার চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলে বিতর্ক আরও উস্কে দেন শাসকদলের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। কিন্তু, গোটা ঘটনায় পটপরিবর্তন ঘটে যখন, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে খণ্ডন করে "অভিযোগ একটি হয়েছে, আমাদের মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে" বলে জানিয়ে দেন তদন্তকারী অফিসার দময়ন্তী সেন। সেইসঙ্গে এই ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতারও করা হয়। পরবর্তীতে তাঁর নেতৃত্বে তদন্তের চার্জশিট পেশ করা হয় এবং সেখানেও ধর্ষণের কথা পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করা হয়। এরপরই রাজ্য সরকারের রোষের মুখে পড়তে হয় দময়ন্তী সেনকে। প্রসঙ্গত, তাঁর এই মন্তব্যের পরই সেই সময় নবান্নে ডেকে পাঠানো হয় তৎকালীন কমিশনার রঞ্জিত পচনন্দা এবং যুগ্ম-কমিশনার শিবাজি ঘোষকে। সেই বৈঠক চলার সময়ই ডাক পড়ে যুগ্ম-কমিশনার হেড কোয়ার্টার জাভেদ শামিম ও  যুগ্ম কমিশনার-অপরাধ দময়ন্তী সেনের। শোনা যায় সেখানে তীব্র ভর্ৎসনার সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের। 

অনেকের মতে, পার্কস্ট্রিটের ঘটনায় দময়ন্তী সেনের এই অতি সক্রিয় ভূমিকা পছন্দ করেননি মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই, হঠাৎ কলকাতা পুলিস থেকে বদলি করে দেওয়া হয় এই সুদক্ষ IPS আধিকারিককে। প্রথমে তাঁকে ব্যারাকপুরে পুলিস ট্রেনিং স্কুলে পাঠানো হয় ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল পদে। তারপর সেখান থেকে দার্জিলিঙে ডিআইজি রেঞ্জে পাটানো হয় এই আইপিএসকে। পরবর্তীতে দময়ন্তী সেনকে পাঠানো হয় সিআইডি-তে। সেখানেও ডিআইজি পদ-মর্যাদায় তাঁকে বহাল রাখা হয়। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের অনেকেই বলেন, এই শাস্তি তাঁকে দমিয়ে দিতে পারেনি। বরং এই গোটা বিষয়টিকে তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তবে এই বিষয়টিকে শুধুমাত্র  IPS-দের বিভাগীয় সিদ্ধান্ত বলে জানিয়ে দেয় সরকার।   

পরবর্তীতে ২০১৯ সালে সেপ্টেম্বর মাসে দীর্ঘ ৭ বছর পর তাঁকে ফের লালবাজারে ফিরিয়ে আনা হয়। অতিরিক্ত পুলিস কমিশনার-৩ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। প্রসঙ্গত, কলকাতা পুলিসের কমিশনার পদে তিনিই প্রথম মহিলা আধিকারিক হিসেবে দায়িত্ব নেন গতবছর। যদিও, বর্তমান কমিশনার সৌমেন মিত্র ছুটিতে থাকায়, মাত্র ৩ দিনের জন্য কার্যনির্বাহী কমিশনারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। ২০২১ সালের ২২ থেকে ২৪ ডিসেম্বর কলকাতা পুলিসের কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন দময়ন্তী সেন। 

১৯৯৬ ব্যাচের এই আইপিএস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী হিসেবে নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন। পরবর্তীতে নিজের কর্মক্ষেত্রেও নির্ভীকতার ছাপ রেখে চলেছেন তিনি। 

প্রসঙ্গত, মাটিয়া, ইংরেজবাজার, দেগঙ্গা ও বাঁশদ্রোণী ধর্ষণ মামলায় মঙ্গলবার শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, "আমরা প্রতিটি ঘটনার দিকে আলাদা করে নজর রাখছি। যদি কোনও ঘটনায় আলাদা করে কোনও এজেন্সি বা কোনও বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্তের প্রয়োজন হয়, সেটাও আমরা করব। এই ধরনের ঘটনায় আমি বাকরুদ্ধ। আগে দিল্লি বা দেশের অন্য জায়গা থেকে এই ধরনের অভিযোগ পাওয়া যেত।"        

একইসঙ্গে রাজ্যকে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, "পরিকাঠামো থাকার পরেও কেন এই ঘটনা? কেন বারবার একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে?" উত্তরে অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, "এই রাজ্য মহিলাদের জন্য অন্যতম সুরক্ষিত রাজ্য। আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছি।" আগামী ২০ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানি।

আরও পড়ুন- Damayanti Sen: রাজ্যের ৪ ধর্ষণ মামলার তদন্তে IPS দময়ন্তী সেন, নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

.