মধ্যরাতে লাঠিচার্জ, প্রতিবাদ মিছিলে নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী রইল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী রইল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ঘেরাওমুক্ত হতে ক্যাম্পাসে পুলিস ডাকলেন উপাচার্য। ঘেরাও তুলতে গেলে পুলিসের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে আহত হন ৩৩ জন ছাত্র। পুলিস লাঠি ও টিয়ার গ্যাস নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকে এবং ঘেরাও তুলতে তাঁদের ওপর লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ ছাত্রছাত্রীদের। রাত দুটো নাগাদ ঘেরাওমুক্ত হন উপাচার্য। তিরিশজনকে আটক করেছে পুলিস। ঘটনার প্রতিবাদে যাদবপুর থানা ঘেরাও ছাত্রছাত্রীরা। ছবি তুলতে গেলে বাধা পান সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদে গত এক সপ্তাহ ধরে অবস্থান বিক্ষোভ করছিলেন কলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের দাবি ছিল ঘটনায় যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে সেই কমিটিতে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, একজন জেন্ডার বিশেষজ্ঞ, সমাজকর্মী এবং ছাত্রছাত্রীদের প্রতিনিধি রাখতে হবে। তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে থানায় অভিযোগও দায়ের করেন ছাত্রীছাত্রীরা।
মঙ্গলবার দুপুর ২টো-
বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠকে বসেন পরিচালন সমিতির সদস্যরা। সেই বৈঠকেই নিজেদের দাবি পেশ করেন ছাত্রছাত্রীরা।
মঙ্গববার সন্ধে পৌনে ৬টা-
উপাচার্যের স্বাক্ষর করা চিঠি পৌছয় ছাত্রছাত্রীদের কাছে। চিঠিতে উপাচার্য জানিয়ে দেন তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে কর্তৃপক্ষ কোনও অভিযোগ পাননি। একইসঙ্গে জানানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হতে চলেছে আচরণবিধি। এরপরই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পরিচালন সমিতির সদস্য এবং তদন্ত কমিটির সদস্যদের ঘেরাও করে শুরু হয় বিক্ষোভ।
মঙ্গলবার সন্ধে সাড়ে ৭টা-
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের সঙ্গে অবস্থানরত ছাত্রছাত্রীদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়েযায়। ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য ছিল তৃণমূলের মদতপুষ্ট শিক্ষাকর্মীরা বহিরাগতদের এনে তাঁদের মারধর করেছে। ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন শিক্ষাকর্মীরাও।
মঙ্গলবার রাত ৯টা-
কলা বিভাগের আন্দোলন আরও জোরদার হলো। যুক্ত হলেন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্রছাত্রীরাও। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চত্বরেও তখন থিকথিক করছে পুলিস। ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ঘেরাও কোনও মতেই সমর্থনযোগ্য নয়। আলোচনার মাধ্যমেই ছাত্ররা সমাধানের পথ খুঁজতে পারেন বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী। একই সঙ্গে ছাত্রদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে বলেও আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি।
রাত ১২টা-
উত্তেজনা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পুলিসের উপস্থিতি আরও বাড়ে।
রাত ২টো-
বিশাল পুলিস বাহিনী গিয়ে তুলে দেন অবস্থানরত ছাত্রছাত্রীদের। ঘেরাওমুক্ত হন উপচার্যসহ অন্যরাও। ঘেরাও তুলতে গিয়ে পুলিসের সঙ্গে ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয় ছাত্রছাত্রীদের। আক্রান্ত হন কমপক্ষে তিরিশজন ছাত্র। এদের মধ্যে আটজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে পথে নামেন ছাত্রছাত্রীরা। রাতে যাদবপুর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।
অভিযোগ, সংবাদ মাধ্যমকে ছবি তুলতে বাধা দেয় পুলিস। ভেঙে দেওয়া হয় বেসরকারি চ্যানেলের ক্যামেরাও। আক্রান্ত হন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও।