শ্লীলতাহানির বিরুদ্ধে আইন নিয়ে দ্বিচারিতায় মুখ্যমন্ত্রী

কথায় এক, কাজে আরেক। বাংলার মসনদে দুবছর কাটানোর আগেই, এই গুরুতর অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। বিতর্কের কেন্দ্রে নারী নিরাপত্তায় কঠোর আইন প্রণয়নের ইস্যুটি। শনিবারই, কেন্দ্রের কাছে ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Updated By: Dec 30, 2012, 11:43 PM IST

কথায় এক, কাজে আরেক। বাংলার মসনদে দুবছর কাটানোর আগেই, এই গুরুতর অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। বিতর্কের কেন্দ্রে নারী নিরাপত্তায় কঠোর আইন প্রণয়নের ইস্যুটি। শনিবারই, কেন্দ্রের কাছে ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ, তাঁর নিজেরই দফতরে প্রায় আটমাস ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে এরাজ্যে মহিলাদের শ্লীলতাহানির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের বিষয়টি।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্যে প্রকাশ, গত দুই দশকে দশগুণেরও বেশি বেড়েছে রাজ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ। এর মোকাবিলায় ভারতীয় দণ্ডবিধিতে যে ৩৫৪ ধারা রয়েছে তা জামিনযোগ্য। দোষপ্রমাণে শাস্তিও মাত্র দুবছরের কারাদণ্ড। এই তথ্য তুলে ধরেই, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত আইনের ফাঁস আরেকটু শক্ত করার সুপারিশ করেছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। রাজ্য সরকারকে গত ২০ এপ্রিল ওই সুপারিশপত্র পাঠানো হয়। ফাইল নম্বর 81/WBHRC/COM/2012-13। প্রস্তাবে কমিশন জানিয়েছিল, সাম্প্রতিককালে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা যেভাবে বেড়ে গেছে তাতে কমিশন মনে করছে ভারতীয় দণ্ডবিধির তিনশো চুয়ান্ন ধারা আর মহিলাদের বিরুদ্ধে সবরকমের অবরাধ মোকাবিলায় যথেষ্ট কার্যকর নয়।
তাই আইনে সংশোধনীর প্রস্তাব দেয় কমিশন। কমিশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে নারীর সম্মানরক্ষার গৌরবময় অতীত যেখানে রয়েছে সেই পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারায় সংশোধনী এনে আইনকে মানবাধিকার রক্ষায় আরও কার্যকর করা উচিত।
কিন্তু কেন্দ্রীয় আইনে কি কোনও রাজ্য সরকার সংশোধনী আনতে পারে? রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের মতে, পারে। উদাহরণ স্বরূপ অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশার উদাহরণও তুলে ধরা হয়েছে কমিশনের সুপারিশে। অন্ধ্রে উনিশশো একানব্বই সালে ও ওড়িশায় উনিশশো পঁচানব্বই সালে, তিনশো চুয়ান্ন ধারার ওপর উপধারা যোগ করে তাকে আরও শক্তিশালী করা হয়। কমিশনের সুপারিশ, সে পথে হাঁটুক পশ্চিমবঙ্গও।
মানবাধিকার আইনের বলে কমিশনের সুপারিশ, কোনও মহিলার সম্ভ্রমহানি করার উদ্দেশ্যে তাঁর ওপর হামলার ঘটনায় কমপক্ষে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের আইন আনা হোক। এমনকি আদালতের বিচারক্রমে কখনও তা সাত বছরও হতে পারে। বাম আমলেই এই সংক্রান্ত আইনে বদল আনার জন্য কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছিল।

 পালাবদলের পর ক্ষমতায় এসে সেই সুপারিশ নিয়েও এগোয়নি নতুন সরকার। পাশাপাশি, আটমাস ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশও। অথচ দিল্লি গণধর্ষণ নিয়ে শনিবারই মুখ্যমন্ত্রীর গলায় শোনা গেছে অন্যসুর।
কথায় এক, কাজে অন্য। এটা কি দ্বিচারিতা নয়? প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি।
মানবাধিকার কমিশনের সূত্রে খবর, এই সুপারিশ ছাড়াও মানবাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যকে অন্তত সাতাশটি সুপারিশ করেছেন কমিশন। তার মধ্যে তিনটি ক্ষেত্রে লিখিতভাবেই মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ অগ্রাহ্য করার কথা জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। বাকি সুপারিশগুলির গন্তব্যও হয়েছে ঠাণ্ডা ঘরে। দিল্লির এই ঘটনায় কড়া আইনের কথা বলা হলেও, এই রাজ্যে মহিলাদের শ্লীলতাহানি ঠেকাতে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা সদর্থক নয় বলে অভিযোগ উঠেছে।  
 

.