অক্সিজেন নেই! সাংবাদিককে দেখেই অসহায় আর্তি, "বাবা, কষ্ট হচ্ছে খুব"
এমসিএইচ বিল্ডিংয়ে কার্ডিওলজি, হেমাটোলজি, গ্যাস্ট্রোএনট্রোলজি, এন্ডোক্রিনোলজি, মেডিসিন, হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট প্রভৃতি মিলিয়ে প্রায় ৪০০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন।
![অক্সিজেন নেই! সাংবাদিককে দেখেই অসহায় আর্তি, "বাবা, কষ্ট হচ্ছে খুব" অক্সিজেন নেই! সাংবাদিককে দেখেই অসহায় আর্তি, "বাবা, কষ্ট হচ্ছে খুব"](https://bengali.cdn.zeenews.com/bengali/sites/default/files/2018/10/03/145155.jpg)
নিজস্ব প্রতিবেদন : বয়স হয়েছে। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছে শরীর। বার্ধক্যজনিত একাধিক সমস্যা, সঙ্গে রোগ-বিরোগ। ফলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। এসবের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে ফের সুস্থ শরীরে প্রিয়জনদের মাঝে ফিরে যাওয়ার জন্য, প্রতিদিনের মতো এদিন সকালেও ঘুম ভেঙে উঠে হাসপাতালের বিছানায় অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন ওঁরা। কিন্তু হঠাত্ই তাল কাটল একটা চিত্কারে। 'আগুন, আগুন'। মুহূর্তের মধ্যে গ্রাস করল আতঙ্ক। তাড়া করল মৃত্যুভয়। দমকলকর্মীদের তত্পরতায় আগুনের করাল গ্রাস থেকে উদ্ধার পেয়েছেন ৪০০ জন রোগী। কিন্তু এখনও তাঁদের চোখেমুখে আতঙ্ক।
বুধবার সকাল ৮টা নাগাদ আগুন লাগে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। মেডিক্যাল কলেজের এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের ওষুধের কাউন্টারে আগুন লাগে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে দমকলের ১০টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। যুদ্ধকালীন তত্পরতায় শুরু হয় উদ্ধারকাজ। আগুন যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন দমকলকর্মীরা। ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় ভয়াবহ আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে। স্থানান্তরিত করা হয়েছে এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের ৪০০ জন মুমূর্ষু রোগীকে। কাউকে নীচে নামিয়ে আনা হয়েছে। কাউকে অন্য বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন, তিন দিন পরই ছিল জন্মদিন! নাগেরবাজার বিস্ফোরণে মৃত্যু ৮ বছরের বালকের
আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই বহু মুমূর্ষু রোগীকে বিল্ডিং থেকে নীচে নামিয়ে খোলা আকাশের নীচে রাখা হয়। চাদর পেতে, প্লাস্টিক পেতে মাটিতে শুইয়ে রাখা হয় তাঁদের। অনেকেই তাঁদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ। অক্সিজেনের প্রয়োজন তাঁদের। কিন্তু খোলা আকাশের নীচে তখন অক্সিজেন কোথায়? কপালজোরে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন, সেটাই যথেষ্ট মনে করছেন। সন্তানসম সাংবাদিককে হাতের সামনে দেখে সেরকমই এক বয়স্ক রোগী বলেন, "ঘরটা হঠাত্ ধোঁয়ায় ভরে গেল। তাড়াতাড়ি নামিয়ে আনল। কিন্তু অক্সিজেন তো নেই। বাবা, কষ্ট হচ্ছে খুব।"
আরেকজন রোগী জানালেন, আগুন লাগার সময় তিনি এম-১২ বিভাগে ভর্তি ছিলেন। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই ঘরের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তিনি হাসপাতালের বেডের উপর বসেছিলেন। কোথায় যাবেন, কী করবেন, কিছু বুঝতে পারছিলেন না। এমন সময়ই দমকল ও হাসপাতাল কর্মীরা এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। পাঁজাকোলা করে নীচে নামিয়ে আনা হয় অসহায় রোগীদের। প্রসঙ্গত, এই এমসিএইচ বিল্ডিংয়ে কার্ডিওলজি, হেমাটোলজি, গ্যাস্ট্রোএনট্রোলজি, এন্ডোক্রিনোলজি, মেডিসিন, হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট প্রভৃতি মিলিয়ে প্রায় ৪০০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন।
আরও পড়ুন, নাগেরবাজার বিস্ফোরণ: ফরেন্সিক দল আসার আগেই ধুয়ে-মুছে সাফ প্রমাণ
অন্যদিকে, এই বিল্ডিংয়ের নীচের ফার্মাসি ডিপার্টমেন্টে হাসপাতালের সব রোগীদের সারা মাসের ওষুধ মজুত থাকে। যারমধ্যে রয়েছে বহু জীবনদায়ী ওষুধও। কিন্তু আগুনে এখন সব ওষুধ-ই নষ্ট হয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগুনের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পৌঁছে যান কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।