সৌজন্যের রাজনীতি, অটল স্মরণে মহাজাতি সদনের ভাড়া নিল না রাজ্য সরকার
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে বাংলার মসনদে বিগত সাত বছর ধরে মা-মাটি-মানুষের সরকার। আর এখন সেই মসনদের দাবিদার হিসাবে বঙ্গীয় রাজনীতিতে বিজেপির উত্থানও বেশ স্পষ্ট।
অঞ্জন রায়: জননেতা, স্থিতপ্রাঞ্জ রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট রাষ্ট্রনেতা, শক্তিশালী বক্তা, কবি-সাহিত্যিক- এই সব বিশেষণের আধারে জাতীয় রাজনীতির একটি যুগের নাম অটল বিহারী বাজপেয়ী। অসাধারণ বর্ণময় এক চরিত্র। এসব গুণাবলীর মাধ্যমেই তিনি বরাবর মন কেড়ে নিয়েছেন বিরোধী নেতৃত্বেরও। রাজনীতির উর্ধ্বে তিনি সর্বজনশ্রদ্ধেয়, উদারনৈতিক রাজনীতির এক মখ। সেই অটল স্মরণেই সৌজন্য দেখাল পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
অটলবিহারী বাজপেয়ীর স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত করতে রাজ্য বিজেপির তরফে কলকাতার মহাজাতি সদন ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তবে যেহেতু 'বাজপেয়ীজি'র স্মরণসভা তাই বিজেপি-কে ভাড়ার টাকা ফেরত দিয়ে সৌজন্য দেখাল রাজ্য সরকার। সূত্রের খবর, মহাজাতি সদন বুকিং-এর সময় ২৬ হাজার ৬২০ টাকা জমা করেছিল রাজ্য বিজেপি। কিন্তু সে খবর শোনা মাত্র 'সিকিউরিটি মানি' নিতে অস্বীকার করে রাজ্য সরকার। এরপর পুরো টাকাটাই পদ্ম শিবিরকে ফেরত্ দেওয়া হয়। মনে করা হচ্ছে, প্রয়াত রাজনীতিবিদ অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রতি শ্রদ্ধাতেই রাজ্য সরকারের এমন পদক্ষেপ। তবে রাজ্য সরকার ভাড়া না নিলেও কলকাতা পুরসভা প্রমোদ কর বাবদ ৩ হাজার টাকা গ্রহণ করেছে। তবে বিজেপির অন্দরে শোনা যাচ্ছে, সম্ভবত বিষয়টি সঠিকভাবে না জানার ফলেই কর নিয়েছে কলকাতা পুরসভা।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে বাংলার মসনদে বিগত সাত বছর ধরে মা-মাটি-মানুষের সরকার। আর এখন সেই মসনদের দাবিদার হিসাবে বঙ্গীয় রাজনীতিতে বিজেপির উত্থানও বেশ স্পষ্ট। সামনে আবার লোকসভা নির্বাচন। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বিজেপির সঙ্গে রাজ্যের শাসকদলের এই সৌজন্যের রাজনীতি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তবে এই সৌজন্য নিঃসন্দেহে অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্যই। বাজপেয়ীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কটা বরাবরই ঘনিষ্ঠ। রাজনৈতিক মহলে অনেকেই বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনে একসময়ের অভিভাবকের মতো ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী।
আরও পড়ুন: দিল্লির রামলীলা ময়দানের নামকরণ করা হচ্ছে বাজপেয়ীর নামে!
মৃত্যুর আগে বাজপেয়ীর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক শুনেই কলকাতা থেকে দিল্লিতে তড়িঘড়ি ছুটে গিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে শুধু এবারই না, মমতা যখনই দিল্লি গিয়েছেন, প্রায় প্রত্যেকবারই তিনি দেখা করে এসেছেন ক্যাবিনেটে তাঁর একদা সহকর্মী 'বাজপেয়ীজি'র সঙ্গে। এমনকি বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসার পরও, মমতা গিয়েছিলেন বাজপেয়ীর আশীর্বাদ নিতে। আসলে বাজপেয়ী-মমতার নৈকট্য আজকের নয়। অতীতেও বাজপেয়ী মন্ত্রিসভায় মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন (২০০০ সাল) তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে সকন্যা এসেছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা গায়েত্রী দেবীর পায়ে হাত সেদিন প্রণাম করতে দেখা গিয়েছিল দেশের প্রধানমন্ত্রীকে। এখানেই শেষ নয়, তৃণমূল নেত্রীর বহুআলোচিত কালীঘাটের টালির বাড়িতে ঘাটে বসে হাতে বানানো নাড়ুও খেয়েছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। আর এসব থেকেই সম্পর্কের গভীরতা অনুমেয়।
মমতা-বাজপেয়ী ব্যক্তিগত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মমতার দলের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বি বাজপেয়ীর দলই। তবে, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বারংবারই বলেছেন, "বাজপেয়ীজির বিজেপি ছিন অন্য রকম"। আর এই তুলনা থেকেই স্পষ্ট, দলীয় রাজনীতিতে যে মোদী-শাহ জুটি এই মুহূর্তে বাজপেয়ীর উত্তরাধিকার পেতে ব্যস্ত, তাঁদের রাজনীতিকে কোন চোখে দেখেন মমতা।