স্বামী-কে কার্ড দিয়ে টাকা তুলতে পাঠান ATM-এ? গড়বড় হলে কিন্তু মার যাবে টাকা

আপনার এটিএম কার্ডটি সেটির সিকিউরিটি পিন-সহ কাউকে দিতেই পারেন। কিন্তু লেনদেনে প্রযুক্তিগত ত্রুটির ফলে টাকা হাতে না পাওয়া গেলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কোনও রকম দায়িত্ব নেবে না।

Updated By: Jun 7, 2018, 05:44 PM IST
স্বামী-কে কার্ড দিয়ে টাকা তুলতে পাঠান ATM-এ? গড়বড় হলে কিন্তু মার যাবে টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদন: আপনার হঠাত্ কিছু টাকা তোলার প্রয়োজন হল। কিন্তু হাতে কাজ থাকায় বা বাইরে বেরতে ইচ্ছে করছে না মোটেই। দেখলেন, আপনার স্বামী বা স্ত্রী, ছেলে বা মেয়ে কেউ কাছেপিঠেই কোথাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেরি না করে তার হাতেই আপনার এটিএম কার্ডটি ধরিয়ে দিয়ে অনুরোধ করলেন টাকা তুলে আনার জন্য। কার্ডের চার অঙ্কের পিন নম্বরও বলে দিলেন। ব্যাস, ঘরে বসেই আপনার নগদের প্রয়োজন মিটে গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই। কিন্তু এটিএম-এ কোনও গন্ডগোলে যদি টাকাই না বের হয় আর তা সত্ত্বেও আপনার টাকা কেটে যায় কী করবেন?
এমনিতে ব্যাঙ্ক নেটওয়ার্ক বা এটিএম-এর গন্ডগোলে ভুলবসত টাকা কেটে গেলে ব্যাঙ্কের ‘কাস্টোমার কেয়ার’-এ ফোন করে এটিএম মেশিনের অবস্থান, লেনদেনের সময় এবং আইডি (transaction ID) দিলেই ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওই টাকা ফেরত পাওয়া যায়। তবে আপনার এটিএম কার্ড থেকে অন্য কেউ আপনারই নির্দেশে টাকা তুলতে গেলে যদি এমন বিভ্রাট হয়, সেক্ষেত্রে টাকা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। এমনটাই জানিয়ে দিল বেঙ্গালুরুর ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।

আরও পড়ুন: দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলে হতে পারে এই মারাত্মক অসুখ!

সমস্যার সূত্রপাত, ১৪ নভেম্বর, ২০১৩। কর্ণাটকের মারাথাহালির বাসিন্দা বন্দনা তাঁর স্বামী রাজেশ কুমারকে নিজের এসবিআই এটিএম কার্ডটি দিয়ে ২৫ হাজার টাকা তুলে আনতে অনুরোধ করেন। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ পর তাঁর স্বামী খালি হাতেই ফিরে আসেন। রাজেশ বন্দনাকে জানান, মেশিনে কার্ড সোয়্যাপ করার পর লেনদেনের রসিদ বেরিয়ে আসে ঠিকই কিন্তু টাকা বের হয়নি। এ দিকে লেনদেনের রসিদ দেখে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়! টাকা হাতে না এলেও অ্যাকাউন্ট থেকে ইতিমধ্যেই ২৫ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। অগত্যা, ব্যাঙ্কের ‘কাস্টোমার কেয়ার’-এ ফোন করে অভিযোগ জানান বন্দনা। কিন্তু ব্যাঙ্ক সাফ জানিয়ে দেয়, এটিএম কার্ডের মালিক এবং ওই দিন এটিএম কার্ডটির লেনদেনকারী এক ব্যক্তি নয়। তাই এ ক্ষেত্রে কোনও টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। 
ব্যাঙ্কের এ হেন সিদ্ধান্তে রীতিমতো অবাক হয়ে যান বন্দনা। ব্যাঙ্কের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২১ অক্টোবর, ২০১৪-এ বেঙ্গালুরুর ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন বন্দনা ও রাজেশ কুমার। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে বন্দনা জানান, তিনি সে সময় সন্তানসম্ভবা, অসুস্থ ছিলেন। তাই নিরুপায় হয়েই স্বামীর হাতে নিজের এটিএম কার্ডটি তুলে দিয়েছিলেন নগদ টাকার প্রয়োজনে।

আরও পড়ুন: টিকিট কনফার্ম না হলেও ট্রেনে যাত্রা করতে পারবেন ই-টিকিটধারীরা, রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট

কিন্তু ২০১৪-র সেই মামলার নিষ্পত্তি সহজে হওয়ার ছিল না। মামলায় এটিএম-টির ওই দিনের সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আছে। এই ফুটেজের ভিত্তিতে ব্যাঙ্কের দাবি করে, টাকা তোলার সময় কার্ডের মালিক বন্দনাদেবী এটিএম-এ উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর এটিএম কার্ডের সিকিউরিটি পিন ব্যবহার করে অন্য কেউ লেনদেনের চেষ্টা করছিলেন। ব্যাঙ্কের যুক্তি, বন্দনাদেবী নিজের এটিএম কার্ডের সিকিউরিটি পিন অপর কোনও ব্যক্তিকে ব্যবহার করতে দিয়ে সুরক্ষা বিধি লঙ্ঘন করেছেন। তাই এই লেনদেনে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকলেও এ ক্ষেত্রে কোনও টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না।
অবশেষে, ২৯ মে, ২০১৮-এ বেঙ্গালুরুর ক্রেতা সুরক্ষা আদালত ব্যাঙ্কের সুরক্ষাবিধি লঙ্ঘনের যুক্তিকেই স্বীকৃতি দিয়ে বন্দনাদেবী মামলাটি খারিজ করে দেয়। বন্দনাদেবীর সে সময়ের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত জানায়, এমন পরিস্থিতিতে তিনি চেকের মাধ্যমে বা অনলাইনেও টাকা স্বামীর অ্যাকাউন্টে পাঠাতে পারতেন। দুই ক্ষেত্রেই বন্দনাদেবীর স্বামী অনায়াসে টাকা তুলতে পারতেন।
সুতরাং, আপনি আপনার এটিএম কার্ডটি সেটির সিকিউরিটি পিন-সহ কাউকে দিতেই পারেন। কিন্তু লেনদেনে প্রযুক্তিগত ত্রুটির ফলে টাকা হাতে না পাওয়া গেলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কোনও রকম দায়িত্ব নেবে না। তাই নিজের এটিএম কার্ডটি আর সেটির সিকিউরিটি পিন নিজের দায়িত্বে রাখুন এবং নিজেই ব্যবহার করুন।

.