প্রকাশ্য রাস্তায় তরুণী মেয়েকে পেটাল পুলিস বাবা, ভিড় করে নীরব দর্শকের ভূমিকায় জনতা

প্রকাশ্য রাস্তায় বছর ২০-এর এক তরুণীকে বেধড়ক পেটাচ্ছে এক ব্যক্তি। আর সামনে জনা ৫০ লোক নীরব দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছেন সে দৃশ্য। পূর্ব বেঙ্গালুরুর ডোমলুর ফ্লাইওভারের কাছে ঘটেছে অমানবিক এই ঘটনায়। হাট্টাকাট্টা চেহারার এক ব্যক্তি যখন ওই তরুণীর চুল টানতে টানতে ক্রমাগত তাঁকে লাথি আর চড় কষিয়ে যাচ্ছে, মেয়েটির সাহাযার্থে এগিয়ে আসেননি এক জনও।

Updated By: Mar 12, 2015, 08:37 PM IST
  প্রকাশ্য রাস্তায় তরুণী মেয়েকে পেটাল পুলিস বাবা, ভিড় করে নীরব দর্শকের ভূমিকায় জনতা
Photo courtesy: Facebook

ওয়েব ডেস্ক: প্রকাশ্য রাস্তায় বছর ২০-এর এক তরুণীকে বেধড়ক পেটাচ্ছে এক ব্যক্তি। আর সামনে জনা ৫০ লোক নীরব দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছেন সে দৃশ্য। পূর্ব বেঙ্গালুরুর ডোমলুর ফ্লাইওভারের কাছে ঘটেছে অমানবিক এই ঘটনায়। হাট্টাকাট্টা চেহারার এক ব্যক্তি যখন ওই তরুণীর চুল টানতে টানতে ক্রমাগত তাঁকে লাথি আর চড় কষিয়ে যাচ্ছে, মেয়েটির সাহাযার্থে এগিয়ে আসেননি এক জনও।

মাদুরাই পুলিসের সাব ইন্সপেক্টর রাজা রাম নামের ওই ব্যক্তি সম্পর্কে ওই তরুণীর বাবা। মেয়ের একজনের সঙ্গে প্রেম করছে শুনে 'রাগে' প্রকাশ্য রাস্তাতেই তাঁকে পেটাতে শুরু করেন পুলিস বাবা। পেশায় শিক্ষিকা মেয়েটির মাও ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে এই ঘটনা চুপচাপ দেখে গেছেন। একবারও স্বামীকে বাধা দিতে আসেননি।

এই ঘটনাটি যখন ঘটছে বেসরকারি ফার্মে কর্মরত দুই তরুণী ওই অঞ্চল দিয়ে যাচ্ছিলেন। মেয়েটির উপর নির্মম অত্যাচার দেখে অন্যদের মত চুপ করে থাকতে পারেননি তাঁরা। ছুটে গিয়ে বাবার হাত থেকে মেয়েটিকে বাঁচিয়ে নিজেদের গাড়িতে তুলে নেন।

নিবেদিতা ও অর্চনা নামের ওই দুই তরুণী সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ পার্শ্ববর্তী একটি দোকান থেকে ব্রেকফাস্ট সেরে ফিরছিলেন তাঁরা। নিবেদিতা জানিয়েছেন '' আমরা ব্যক্তিকে দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। হাট্টাকাট্টা চেহারার ওই ব্যক্তি সবার সামনেই ক্রমাগত মেয়েটির কুঁচকিতে লাথি মেরে যাচ্ছিল। আমি ও আমার বন্ধু তৎক্ষনাত গাড়ি থেকে নেমে ছুটে যাই। আমার বন্ধু লোকটিকে ঠেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমি মেয়েটির চুল থেকে লোকটির হাত সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি।''

এই দুই তরুণী যখন নিগৃহীতা মেয়েটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন, তখনও চুপচাপ 'নাটক' দেখে যাচ্ছিলেন ভিড় করে থাকা লোকজন। কেউই এক পাও সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি। নিবেদিতা আরও জানিয়েছেন ''আমরা যখন মেয়েটিকে বাঁচাবার চেষ্টা করছি, ওই ব্যক্তি আমাদেরও ধাক্কা মারে।'' এক যুবক নিবেদিতা ও অর্চনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। ওই যুবকটির সঙ্গে বাইক থাকায় এই দুই তরুণী তাঁকে অনুরোধ করে মেয়েটিকে বাইকে করে ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যেতে। কিন্তু মেয়েটির বাবা এসে বাইকটির চাবি ছিনিয়ে নেন।

নিবেদিতা ও অর্চনা তখন একটি অটোতে মেয়েটিকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও বাধা দেন রাজা রাম। বাধ্য হয়ে মেয়েটিকে নিয়ে নিজেদের গাড়িতেই উঠে পড়েন তাঁরা। তালা দিয়ে দেন দরজায়। এই অবস্থায় গাড়ি মধ্যে ঠায় ৩০ মিনিট বসে ছিলেন তাঁরা।

''আমরা ওখান থেকে মেয়েটিকে নিয়ে চলে যেতে চাই ছিলাম। কিন্তু ওই ব্যক্তি গাড়িটির বনেটে চেপে বসে। ওখানে বহু লোক দাঁরিয়ে ছিল। কিন্তু এক জনও ওই ব্যক্তিকে বাধা দেয়নি। যদি একজনও ওই লোকটিকে ঠেলে সরিয়ে দিত আমরা তাহলে অনেক আগেই মেয়েটিকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু একজনও এগিয়ে আসেননি।'' জানিয়েছেন নিবেদিতা।
 
পুলিসকে ফোন করার ৩০ মিনিট পর ঘটনাস্থলে পুলিস পৌছয়। মেয়েটিই জানায় তাঁর বাবা মাদুরাই পুলিসের সাব ইন্সপেক্টর। মেয়ে প্রেম করছে সন্দেহে আজ সকালেই মেয়ের হস্টেলে চড়াও হন তিনি। হোস্টেল থেকে টানতে টানতে মেয়েকে রাস্তায় টেনে এনে মারতে শুরু করেন তিনি। মেয়েটি বারবার জানায় এই প্রেমের কথা নিছকই গুজব। কিন্তু তাঁর কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেননি তাঁর বাবা।

খবর পাওয়ার আধ ঘণ্টা পর পুলিস ঘটনাস্থলে এসে পুরো পরিবারটিকেই থানায় নিয়ে যায়। সংবাদমাধ্যমের কাছে পুলিস জানিয়েছে যেহেতু মেয়েটি বাবার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি তাই তাঁর বাবাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আবার যখন জিজ্ঞাসা করা হয় এই ঘটনায় পুলিস কি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করতে পারে না? উত্তরে পুলিসের তরফ থেকে জানানো হয় ''মেয়েটির কোনও অভিযোগ ছিল না।''

মেয়েটিত জন্য চিন্তিত নিবেদিতা সমগ্র ঘটনাটি তাঁর ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন। পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াটে এই খবর ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

 

.