উরি-কাণ্ডের পর ভারত-পাক সিন্ধু জল চুক্তির ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে

গত পাঁচ দশকে বারবার মাথা চাড়া দিয়েছে অশান্তি। বেঁধেছে যুদ্ধও। তবুও ভারত-পাক সিন্ধু জল চুক্তির গায়ে আঁচ লাগেনি। উরি-কাণ্ডের পর এ বার নেহরুর হাতে গড়া সেই চুক্তির ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। 

Updated By: Sep 25, 2016, 02:20 PM IST
উরি-কাণ্ডের পর ভারত-পাক সিন্ধু জল চুক্তির ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে

ওয়েব ডেস্ক: গত পাঁচ দশকে বারবার মাথা চাড়া দিয়েছে অশান্তি। বেঁধেছে যুদ্ধও। তবুও ভারত-পাক সিন্ধু জল চুক্তির গায়ে আঁচ লাগেনি। উরি-কাণ্ডের পর এ বার নেহরুর হাতে গড়া সেই চুক্তির ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। 

সারা বিশ্বে সফল নদী জলবণ্টন চুক্তিগুলির মধ্যে অন্যতম ভারত-পাক সিন্ধু নদী চুক্তি। সিন্ধু নদ এবং তার পাঁচটি উপনদী - শতদ্রু, চন্দ্রভাগা, বিপাশা, ইরাবতী ও বিতস্তার জল কী ভাবে দু-দেশ ভাগ করে নেবে তা এই চুক্তিতে বলা রয়েছে। একই নদীর জল দু-দেশ কী ভাবে ভাগ করে নেবে তা নয়। বরং কোন নদীর ওপর কার অধিকার তা নিশ্চিত করতেই সই হয় সিন্ধু চুক্তি।

১৯৬০-এর ১৯শে সেপ্টেম্বর জওহরলাল নেহরু ও আয়ুব খান বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় করাচিতে সিন্ধু জল চুক্তি সই করেন। চুক্তি অনুযায়ী শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতীর জলের ওপর ভারতের অধিকার। পাকিস্তানের ভাগে সিন্ধু, চন্দ্রভাগা এবং বিতস্তার জল। চুক্তিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান যাতে সিন্ধু, চন্দ্রভাগা ও বিতস্তার জল বাধাহীনভাবে পায় তা ভারতকে দেখতে হবে।

আরও পড়ুন যে তিন নেতাদের কারণে সবথেকে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে রোজ

চুক্তি অনুযায়ী কৃষি, পরিবহণ এবং জলবিদ্যুতের জন্য এই তিন নদীর জল ভারত ব্যবহার করতে পারলেও জল ধরে রাখতে পারবে না। চুক্তির শর্ত মেনে চলতে গিয়ে সিন্ধু ও তাঁর উপনদীগুলির জলের ২০ শতাংশ ভারত পায়। বাকিটা কাজে লাগায় পাকিস্তান। চুক্তি মানা হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য দু-দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি হয়েছে স্থায়ী সিন্ধু কমিশন।

নিয়মিত কমিশনের বৈঠক বসলেও চন্দ্রভাগা-বিতস্তায় ভারতের বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে একাধিকবার আন্তর্জাতিক মহলের দ্বারস্থ হয়েছে পাকিস্তান। কাশীগঙ্গা এবং বাগলিহার জলবিদ্যুত প্রকল্পের প্রতিবাদে হেগের আন্তর্জাতিক আদালত ও বিশ্ব ব্যাঙ্কের দরজায় কড়া নেড়ে সুবিধা

করতে পারেনি তারা। সিন্ধু জল চুক্তি রূপায়ণে ভারত গোটা বিশ্বের প্রশংসা আদায় করে নিলেও এই চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ভারতে যেমন সিন্ধুর উচ্চ-অববাহিকা অঞ্চল রয়েছে তেমনই ব্রহ্মপুত্রর উচ্চ-অববাহিকা অঞ্চল রয়েছে চিনে। দিল্লি সিন্ধু চুক্তি ছেড়ে বেরিয়ে এলে ইসলামাবাদের বন্ধু বেজিং ব্রহ্মপুত্র নিয়ে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

ভারত সিন্ধু জল চুক্তি বাতিল করলে আন্তর্জাতিক মহলে কাশ্মীর সমস্যা অন্য মাত্রা পাবে। সিন্ধু চুক্তি বাতিল হলে পাকিস্তানে ভারত-বিরোধী শক্তিগুলি সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার নতুন সুযোগ পাবে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন আন্তর্দেশীয় নদী জলবণ্টন চুক্তির ওপরও এর প্রভাব পড়বে।

আরও পড়ুন শক্তির ভারসাম্যে ভারত-পাকিস্তান কে কোথায় দাঁড়িয়ে দেখে নিন

জল কী ভাবে শান্তির উত্‍স। সাধারণ সভার অধিবেশনের ফাঁকে এ সংক্রান্ত আলোচনায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের উপ-মহাসচিব ভারত-পাক সিন্ধু জল চুক্তির কথা উল্লেখ করেছেন। তাই সরাসরি আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা না থাকলেও সার্ক সম্মেলনের আগে চুক্তি বাতিল করা দিল্লির পক্ষে কঠিন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

.