Kanaklata Barua: তাঁর আত্মদান দেশ জুড়ে মেয়েদের ঘোর দুঃসাহসী করে তুলেছিল

এ বছর স্বাধীনতা দিবস ৭৫ বছরে পা দিচ্ছে। সাড়ে সাত দশকের স্বাধীনতা-যাপনে দেশবাসীর স্বপ্নপূরণ ও স্বপ্নভঙ্গের নানা ইতিহাস রচিত হয়েছে। কিন্তু সেই 'ইতিহাসে'র পথ যাঁরা তৈরি করে দিলেন তাঁদের কীভাবে, কতটা মনে রেখেছে দেশ? প্রায় অনালোচিত বা স্বল্পালোচিত কয়েকজন ব্যক্তিত্বকে ফিরে দেখল Zee 24 Ghanta Digital

Updated By: Aug 12, 2021, 07:01 PM IST
Kanaklata Barua: তাঁর আত্মদান দেশ জুড়ে মেয়েদের ঘোর দুঃসাহসী করে তুলেছিল

সৌমিত্র সেন

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের জাঁতাকল থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘ সময় জুড়ে ভারতে জেগে উঠেছিল যে ব্যাপক স্বাধীনতা আন্দোলন তাতে নারীর ভূমিকা ছিল উভমুখী। কখনও তাঁরা ঘর-সংসারের কথা না ভেবে বিপ্লবের পথে নির্দ্বিধায় এগিয়ে দিয়েছিলেন তাঁদের স্বামী, সন্তান ও সহোদরদের; কখনও তাঁরা নিজেরাই ঘরের আগল ভেঙে বাইরে বেরিয়ে এসে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হয়েছিলেন।

মাতঙ্গিনী হাজরাই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী নারীদের মধ্যে অগ্রগণ্যের মর্যাদা পান। মেদিনীপুর জেলার এই নারী মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ব্রিটিশ-বিরোধী এক মিছিলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার সময়ে পুলিসের গুলিতে শহিদ হন তিনি।

আরও পড়ুন: Hemchandra Ghosh: দেশপ্রেমে 'দীক্ষিত' হয়েছিলেন স্বয়ং স্বামীজির কাছে!

মাতঙ্গিনী হাজরা অবশ্যই নমস্য। কিন্তু মাতঙ্গিনী ছাড়াও আরও অনেক মহিলাই সে সময়ে ব্রিটিশ বিরোধিতায় অতুল সাহস ও দৃঢ়চিত্ততার পরিচয় দিয়েছিলেন। কনকলতা বড়ুয়া ছিলেন তেমনই এক লড়াকু নারী। এখন হয়তো আর ততটা আলোচিত নন তিনি। কিন্তু সালতারিখের হিসেবে বলতে গেলে ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে তিনিই প্রথম শহিদ। মাতঙ্গিনী হাজরা শহিদ হয়েছিলেন ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৯ সেপ্টেম্বরে আর কনকলতা শহিদ হয়েছিলেন এর ন'দিন আগেই, ২০ সেপ্টেম্বর।

'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের সময়ে কনকলতা ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হয়েছিলেন। বিভিন্ন ব্রিটিশ অফিসে ভারতের জাতীয় পতাকা তোলার উদ্দেশ্যে কনকলতা একটি ছোট দল নিয়ে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু কে জানত, সেটাই তাঁর শেষযাত্রা! সেদিন ব্রিটিশ পুলিসের গুলির নিশানা হয়ে শেষ হয়ে গিয়েছিল তাঁর অস্ফুট জীবন।

অসমের বিশ্বনাথ অঞ্চলের গোহপুর এলাকার বরঙাবাড়ি গ্রামে ১৯২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর কনকলতার জন্ম। কনকলতার বাবা বগারাম বড়ুয়া ছিলেন কৃষক। তবে শৈশবেই বাবাকে হারিয়েছিলেন কনকলতা। দেশসেবার লক্ষ্যে জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালার নেতৃত্বে কনকলতা 'মৃত্যুবাহিনী'তে যোগ দিয়েছিলেন। 

১৯৪২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ১৭ বছরের কিশোরী কনকলতা বিশ্বনাথে জাতীয় পতাকা হাতে থানা ঘেরাওয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। লক্ষ্য ছিল, থানায় গিয়ে ব্রিটিশ পতাকা নামিয়ে ভারতীয় পতাকা তোলা। যথারীতি সশস্ত্র পুলিস প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু পুলিসের রাইফেলের সামনেও অকুতোভয় এই কিশোরী সেদিন দুঃসাহসভরে এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও দেশেই তো পুলিস বীরত্বের মর্যাদা দেয় না! সেদিনও দেয়নি। পুলিস গুলি চালায় কনকলতাকে লক্ষ্য করে। লুটিয়ে পড়েন কনকলতা। তবে নিজে লুটিয়ে পড়লেও পতাকা মাটিতে পড়তে দেননি। তাঁর হাত থেকে পতাকা নিয়ে ততক্ষণে থানার দিকে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করেন তাঁরই সতীর্থ মুকুন্দ কাকতি। তাঁকেও অবশ্য সেদিন গুলি করে মারে পুলিস।

'বীরবালা' নামে পরিচিত কনকলতার এই আত্মদান মেয়েদের মনে যেন আগুন জ্বেলে দিল। তাঁরা অনুভব করলেন, শুধু ঘর থেকে নয়, এবার বাইরে বেরিয়ে ব্রিটিশের মুখোমুখি দাঁড়াবার লগ্ন এসে গিয়েছে। 

(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

আরও পড়ুন: Kamaladevi Chattopadhyay: 'সিধুজ্যাঠা'র স্ত্রী শিল্পী-সংগ্রামী কমলাদেবীকে আজ ক'জন মনে রেখেছে?

.