শিখর ছুঁতে গিয়ে কেন বারবার চির নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছেন বাঙালি পর্বতারোহীরা?

শিখর ছুঁতে গিয়ে কেন বারবার চির নিরুদ্দেশে চলে যাচ্ছেন বাঙালি পর্বতারোহীরা? কঠিন প্রকৃতির কোলে কেন নিথর হয়ে যাচ্ছে এরাজ্যের অভিযাত্রীদের জীবনীশক্তি?

Updated By: May 23, 2016, 09:11 PM IST
শিখর ছুঁতে গিয়ে কেন বারবার চির নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছেন বাঙালি পর্বতারোহীরা?

ওয়েব ডেস্ক: শিখর ছুঁতে গিয়ে কেন বারবার চির নিরুদ্দেশে চলে যাচ্ছেন বাঙালি পর্বতারোহীরা? কঠিন প্রকৃতির কোলে কেন নিথর হয়ে যাচ্ছে এরাজ্যের অভিযাত্রীদের জীবনীশক্তি?

ছন্দা গায়েন, রাজীব ভট্টাচার্য, সুভাষ পাল। শিখর ছুঁয়ে অথবা ছুঁতে গিয়ে ফিরে না আসা বাঙালি অভিযাত্রীর তালিকাটা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে। এবছর একদল বাঙালির এভারেস্ট জয়ের আনন্দ ছাপিয়ে তাই বিষাদই যেন বেশি!

বেসক্যাম্প থেকে সামিট, বিশ্বের রহস্যময় সরণি। দুর্গম শিখর জয়ের স্বপ্ন যাঁরা দেখেন, তাঁরা বিলক্ষণ জানেন কথাটা। নিস্তব্ধ তুষার সাম্রাজ্যের বাঁকে বাঁকে এক এক রকম প্রতিকূলতা। ঝুঁকির শিখরে একটু অসাবধান হলেই সব শেষ। বিপদ যেখানে পায়ে পায়ে, সেখানে বাড়তি সাবধানতাই সুরক্ষার সেরা পথ। কিন্তু বাঙালি অভিযাত্রীদের মৃত্যুর ময়নাতদন্তে দেখা যাচ্ছে সুরক্ষারই হাঁড়ির হাল।

বাঙালির শৃঙ্গ জয় যেন ঢাল তরোয়াল হীন নিধিরাম সর্দারের মতো। শুধু শৃঙ্গ পর্যন্ত পৌছনোর স্পনসরশিপটুকু জোগাড় করতে পারলেই হল! আপত্কালীন বিমা করানোর কোনও ব্যাপারই সেখানে নেই। এর একটা দিক যদি হয় অর্থাভাব, তাহলে অন্যটি অবশ্যই অসচেতনতা। তাই বিপদে পড়লে বিদেশিরা তুরন্ত ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও, উদ্ধারকাজের অভাবে খোলা আকাশের নীচে ফ্রস্ট বাইট নিয়ে পড়ে থাকতে হয় বাঙালিদের। 

কম করে ৬ থেকে ৭ হাজারি শৃঙ্গ জয়ের অভিজ্ঞতা না থাকলে, ৮ হাজারি শৃঙ্গের দিকে এগনো যাবে না। এভারেস্টে ওঠার অনেক আবেদনই আটকে যেত এই গাইডলাইনে। কিন্তু এখন ছবিটা উল্টো। অনেক মাউন্টেনিয়ারিং এজেন্সি ব্যবসার খাতিরে গাইডলাইন মানছে না। ৬ হাজারি শৃঙ্গ জয়ের অভিজ্ঞতা যাঁর নেই, তাঁকেও এভারেস্টের ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। 

বিশ্ব বিখ্যাত শৃঙ্গ ছুঁতে গেলে পকেটে যে রেস্ত লাগে, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাঙালি পর্বতারোহীদের তা নেই। আর্থিক প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করেই অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। খরচ কমিয়ে সামিট করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে শেরপাদের কথা শোনা হয় না। কখনও সেটাই চরম বিপদ ডেকে আনে।  

প্রসঙ্গত, স্যর এডমন্ড হিলারি তখনও বেঁচে। অনেক বয়স হয়েছে। সাক্ষাত্‍কার প্রার্থী এক তরুণ সাংবাদিককে বলেছিলেন, তাঁর এখন একটা রেকর্ডই বাকি, পিছন দিক দিয়ে হেঁটে এভারেস্টে ওঠা।

এমন ঔদ্ধত্যের কথা বলেছিলেন যে মানুষটি, পরে তিনিই বলেছিলেন, শৃঙ্গে পা রাখা যায়, কিন্তু পাহাড়কে কখনও জয় করা যায় না। আর এখানেই লুকিয়ে শিখর জয়ের নেশা। যার টানে কাঞ্চনজঙ্ঘা সেরে ইয়ালুংখাং ছুটে যান ছন্দা গায়েন, শরীর দেবে কিনা, তার তোয়াক্কা না করে ধৌলাগিরি ছুটে যান রাজীব ভট্টাচার্য। কিন্তু তাতো কেউ চায় না। গগনভেদী শৃঙ্গের দিকে তাকানোর স্পর্ধা বাঙালির থাকুক। পুরোপুরি সচেতন হয়ে অ্যাডভেঞ্চারের পথে পা রাখুক সে। এটাই কাম্য।

.