আলু ভাজা করতে গিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, বিয়ের ২০ দিন আগে মৃত্যু পাত্রীর!

বছর আঠেরোর তনুশ্রী নন্দীর বিয়ে ছিল দিন কুড়ি পরেই। 

Updated By: Nov 12, 2018, 03:31 PM IST
আলু ভাজা করতে গিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, বিয়ের ২০ দিন আগে মৃত্যু পাত্রীর!

নিজস্ব প্রতিবেদন:   বিয়ের কার্ড ছাপানো হয়ে গিয়েছে, আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ পর্বও প্রায় সারা। বাড়িতে প্যান্ডেলের বাঁশ পড়ে গিয়েছে। উত্সবের মেজাজ। বেনারসি, সাজার জিনিস-বিয়ের সব কেনাকাটা শেষ। আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। গোটা বাড়িতে উত্সবের মেজাজ। একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা! কিন্তু এক রাতেই  তাল কাটল।  আনন্দ বদলে বিষাদে।  গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে ঝলসে মৃত্যু হল পাত্রীর। মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকল বাইরুপুরেই ছোট্ট গ্রাম সাটুইের বাসিন্দারা।

বছর আঠেরোর তনুশ্রী নন্দীর বিয়ে ছিল দিন কুড়ি পরেই। স্কুলে পড়তেই পাড়ারই ছেলে পেশায় চপ ব্যবসায়ী রতন পালের সঙ্গে প্রেম ছিল তার। ২ ডিসেম্বর ছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, যেদিন চার হাত এক হত তাদের।  রবিবার সকালে  তনুশ্রীর  ঝলসে  যাওয়া শরীরটা রতন ছুঁলো বটে, তবে তা শববাহী গাড়িতে তোলার জন্য।

আরও পড়ুন:  ছাদে মেয়েকে নিয়ে বাজি ফাটাচ্ছিলেন আইনজীবী, স্ত্রীকে ডাকতে এসে বেডরুমে যে অবস্থায় দেখলেন...

রবিবার সকালে কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তনুশ্রীর বাবা তামাল। তিনি উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার গাড়ি চালান।দ্বিতল বাড়ির দোতলাতেই বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত তনুশ্রী। বাড়ি পাকা, কিন্তু দোতলার রান্নাঘরটি ছিল টালির চালের। এদিন সকালে তামাল বেরিয়ে যাওয়ার পর তনুশ্রী মা ও ঠাকুমা নদীতে স্নান করতে যান। নিচের তলায় সপরিবারের থাকতেন তনুশ্রীর কাকারা। সেদিন তাঁরাও ছিলেন না। রান্নাঘরে ভাত চাপিয়ে গিয়েছিলেন তনুশ্রীর মা। মেয়েকে   বলে গিয়েছিলেন ভাজা করার জন্য আলু কেটে রাখতে।

আরও পড়ুন: বিয়েবাড়িতে চপার হাতে ঢুকল পাড়ার যুবক, নবদম্পতির সামনেই ভয়ঙ্কর ঘটনা

মায়ের হাতের কাজ এগিয়ে রাখতেই গ্যাসের পাশের ওভেনে আলু ভাজা বসিয়েছিল তনুশ্রী। কিন্তু কোনওভাবে  সিলিন্ডারের পাইপ লিক করে বিস্ফোরণ হয়। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে আগুন।  আগুনের তাপে রান্নাঘরের ইলেকট্রিকের তার ছিঁড়ে পড়ে। ফলে রান্নাঘর থেকে বেরোতে পারেনি তনুশ্রী।  কুণ্ডলীকৃত কালো ধোঁয়া আর তনুশ্রীর আর্তনাদ যতক্ষণ প্রতিবেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। স্থানীয়রা গিয়ে তনুশ্রীকে অচৈতন্য অবস্থায় রান্নাঘরে পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁর শরীরের অর্ধাংশ পুড়ে গিয়েছে।  আগুন নিভিয়ে তনুশ্রীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় তার।

আরও পড়ুন: পাড়ার ছোকড়া ছেলেপুলে নয়, পূর্বস্থলী থানার এই ২ পুলিস কর্তার কীর্তি শুনে চমকে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও!

খবর পেয়েই ছুটে আসেন রতন ও তাঁর বাবামা।  তনুশ্রীকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে রেখেছিলেন রতন। সামনে অনেক সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু এক নিমেষে সব গ্রাস করে নিল আগুন।  বাড়িতে বিয়ের প্যান্ডেলের বাঁশ এখনও রয়েছে।  ঝলসে যাওয়া আসবাবপত্রের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তনুশ্রীর নানা জিনিস। সেগুলিকেই হাতড়ে চলেছেন তনুশ্রীর বাবা-মা। সদ্য সন্তানহারা এই দম্পতিকে সাত্ত্বনা দেওয়ার মতো বুলি পাচ্ছেন না প্রতিবেশীরা। শুধু চোয়াল শক্ত করে তাঁরা বলেছেন, “এই বুঝি ছিল মেয়েটার কপালে!”

.