স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

গৌতম গম্ভীরের মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছি। বীরেন্দ্র শেহবাগের অবসর ঘোষণার আগের দিনগুলোতে তাঁর মনের অবস্থাটাও বুঝে নিতে পারি। এই দুজনের মনকে যখন অনুভব করার চেষ্টা করি, তখন মনের কথা পড়ার চেষ্টা করি, তাঁরও। শিখর ধাওয়ান!আরও একটা টেস্ট সিরিজ শুরু হওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। ২২ তারিখ থেকেই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট খেলতে নামছে ভারত। সেখানে দিব্যি খেলবেন শিখর ধাওয়ান। বাড়িতে বসে খেলা দেখবেন বীরেন্দ্র সেহবাগ এবং গৌতম গম্ভীর। সেহবাগের উপায় নেই এছাড়া। তিনি তো অবসরই নিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু গৌতম গম্ভীর? তিনি শুধু খেলছেন না, জীবনের সেই শুরুর দিনগুলোর মতোই রানের মধ্যে রয়েছেন। সদ্য ইন্ডিয়া ব্লুয়ের হয়ে যা খেললেন, তাতে কে বলবে, মানুষটা দীর্ঘদিন ভারতীয় দলের বাইরে! আর সেইজন্যই শিখর ধাওয়ানকে নিয়ে কিছু কথা বলার।


শিখর ধাওয়ানকে ভারতীয় দলের সতীর্থরা ডাকেন গব্বর বলে। নামের সঙ্গে মানানসইভাবে গব্বরের জন্যই ভারতীয় ক্রিকেটের জয়-বীরুর (সেহবাগ-গম্ভীর) আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ার শেষ! কথাটা আপাতদৃষ্টিতে শুনতে একটু খারাপ লাগতে পারে। ঠিকও কিছুটা। কারণ, আর কারও কেরিয়ার শেষ হয়ে গেল বলে কোনও একজনকে পুরোপুরু দোষ দেওয়া ঠিক নয়। তাই ওই সংযমটা রাখছি। কিন্তু এটাও ঠিক যে, ভারতীয় দল থেকে সেহবাগ এবং গম্ভীরের ছুট্টি হয়ে যাওয়ার মূল কারণ, শিখর ধাওয়ানের দুর্দান্ত অভিষেক।


অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নিজের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে সেই যে ১৮৭ রানের ইনিংস খেললেন শিখর, সব বদলে গেল! সেহবাগ আর গম্ভীর ক্রমশ দূরে সরতে লাগলেন আর শিখর ধাওয়ান সাফল্যের স্রোতে দিব্যি গা ভাসিয়ে দিলেন! তিনি সেই যে স্রোতে গা ভাসালেন, এখনও ভেসেই আছেন। আর চোখ খোলেননি। নড়েচড়েও বসেননি। প্রায় সাড়ে তিন বছরের টেস্ট কেরিয়ারের পর শিখর ধাওয়ানের প্রোফাইলের দিকে তাকালে যে, সেটাই মনে হচ্ছে শিখর ধাওয়ানের টেস্ট কেরিয়ার একঝলকে খানিকটা এরকম - ২২ টেস্ট খেলে ৩৭ ইনিংসে তাঁর রান মাত্র ১৪৪৬! তাঁর টেস্ট গড় মাত্র ৪০.১৬! অথচ, একদিনের ক্রিকেটে তাঁর গড় প্রায় ৪৪! মাত্র চারটে সেঞ্চুরি আর তিনটে হাফ সেঞ্চুরির মালিক তিনি! শেষ এক ডজন টেস্ট ইনিংসে একবার ৮৪ রান করা ছাড়া আর কোনওবার ৫০-এর কোটায় ঢুকতে পারেননি! অথচ, দিব্যি নিয়মিত ভারতীয় দলে গোঁফ পাকিয়ে খেলে যাচ্ছেন তিনি! আর গৌতম গম্ভীরকে বসে থাকতে হচ্ছে বাড়িতে!


তুলনায় গম্ভীরের টেস্ট কেরিয়ার এরকম - ৫৬ টেস্ট খেলে ১০০ ইনিংসে ব্যাট করেও তাঁর গড় কিনা ৪২.৫৮! শিখরের থেকে অনেক বেশি! সেহবাগের তো ১০৪ টেস্টে ১৮০ ইনিংস খেলেও গড় প্রায় ৫০! তবু, তাঁরা একে একে দলের বাইরে চলে গিয়েছিলেন শিখরের ওই ১৮৭-র দাপটে! কিন্তু শিরোনাম হয় এক মিনিটের। আর অনুষ্ঠান হয় আধ ঘণ্টা বা এক ঘণ্টার! শিখর ওই ঝলকটাই দেখিয়ে শিরোনাম হয়ে গিয়েছিলন। অনেক গুণগত মান বেশি থাকা সত্ত্বেও সেহবাগ এবং গম্ভীর থেকে গেলেন আড়ালে। না খেলে! সেইজন্যই শিখর ধাওয়ানকে ভেবে ওই স্কুলের ছেলেবলার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। কিছু ছেলে দিব্যি বুক ফুলিয়ে ফার্স্ট বেঞ্চে বসতো। অথচ, তারা পড়া করে আসতো না। কিন্তু স্যর ভাবতেন, পিছনের ছেলেরাই পড়া পারবে না। তাই চোখা চোখা প্রশ্ন উড়ে যেত পিছনের বেঞ্চের সেহবাগ গম্ভীরদের দিকেই। বেশি প্রশ্ন। তাই না পাড়ার সংখ্যা তো বাড়তোই। আর পাড় পেয়ে যেতো সামনে বসে থাকা পড়া না জানা ছেলেও!


শিখর ধাওয়ান যেন সেই একইরকম স্টাইলে ভারতীয় টেস্ট দলে দিব্যি কয়েক বছর কাটিয়ে দিলেন। মনের দুঃখে ''পড়াশোনাই'' ছেড়ে দিলেন সেহবাগ। আর গম্ভীরই বা কদিন না ছেড়ে পারবেন, সময়ই জানে। সেহবাগের ওরকম বিদায় এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা কোনওদিন মেনে নিতে পারবেন না। গম্ভীরেরটাও কিন্তু একইরকম। মনে রাখবেন, গৌতম গম্ভীরকে বাদ দিয়ে রাখা হয়েছে তাই। তাঁর জীবনে রয়েছে ব্যর্থতা। কিন্তু সেটা এত বেশি নয় যে, শিখর ধাওয়ান রোজ খেলবেন। আর গম্ভীর বাড়িতে বসে থাকবেন। শিখর ধাওয়ান কিন্তু স্রেফ গোঁফে তা দিয়ে কাটিয়ে দিলেন সাড়ে তিনবছর। অন্তত টেস্ট ক্রিকেটে। একদিনের ক্রিকেটে তিনি খেলুন। কিন্তু টেস্টে কেন! খেলা তো তাঁকেও একদিন ছাড়তে হবে। সেদিন মনে হয় জয় - বীরু অনেক অনেক বেশি এগিয়ে থাকবেন গব্বরের থেকে। কেউ কেউ সেদিন বলবে, গব্বরের জন্যই ভারতীয় ক্রিকেট আসতে আসতে হারিয়ছিল জয়-বীরুকে। দোষ নির্বাচকদেরই। কিন্তু প্রশ্ন সেদিন সামনের বেঞ্চে বসা শিখরের দিকেও উড়ে আসবে। ধাওয়ান আর সেদিন পালাবেন কোথায়! গোঁফ দিয়ে মানুষ চেনা যায় অথবা বিড়াল। কিন্তু জাত ব্যাটসম্যান চিনতে গেলে রান আর সেটা কীভাবে করা হয়েছে, সেটা দেখে চিনতে হয়।


আরও পড়ুন দেশের সেরা তিন দীপিকার মধ্যে আপনার ভোট পাবেন কোন দীপিকা?