স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

 


ছেলেবেলা থেকেই সিনেমা দেখছি। বয়স এখন কত হল, এটা বিষয় নয়। বিষয়, জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আর যাই হোক সিনেমাটা বরাবরই খুব বেশি দেখেছি। ১৯৪৮-এর ফিল্মই হোক অথবা ২০১৬-র। যে কোনও ভাষার সিনেমাই গোগ্রাসে গিলেছি। সিনেমাতে কোনও অ্যালার্জি অন্তত আমার নেই। সম্ভাবত, আপনারও তাই। সিনেমা দেখতে গেলে, কোনও কোনও ক্যারেক্টর থাকে না, খুব ভালো লেগে যায়? আসলে আমরা ওই ফিল্মের ক্যারেক্টর বা চরিত্রগুলোর সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে ফেলি। তাই কোনও কোনও চরিত্রকে দেখে মন বলে ওঠে, ইস্ ও যদি আমি হতাম।


তা সেই শোলের জয় হোক কিংবা শাহরুখের রাহুল কিংবা রাজ অথবা সলমনের প্রেম কিংবা বাস্তবের রঘু ভাই, লাখো ফিল্মি ক্যারেক্টর দেখেছি। কত কত সিনেমা ভালো লেগেছে। কিন্তু কোনওদিনই কোনও ক্যারেক্টরকে এতটাও ভালোবাসিনি যে, মনে হবে ইস্ ওই চরিত্রটা আমি হলে..। এই বিষয়টায় ব্যতিক্রম ঘটল, একটা ফিল্ম দেখার পর। ওয়ানস আপন আ টাইম ইন মুম্বই! হ্যাঁ, এই সিনেমার সুলতান মির্জাকে দেখে আর মন লোভ সামলাতে পারেনি। বলে উঠেছে, হ্যাঁ, কোনওদিন কোনও ফিল্মি ক্যারেক্টরের মতো জীবন পেতে চাইলে সুলতান মির্জার চরিত্রটাই আমার চাই। কেন এত, এত চরিত্র থাকতে সুলতান মির্জার চরিত্রটাই আমার এত পছন্দের? উত্তর দিচ্ছি, এক এক করে। আজ এ কথা বলার আরও কারণ, সুলতান মির্জা মানে পর্দাতে যে অজয় দেবগন। আর আজ অজয় দেবগনের জন্মদিন। তাই আজই কথাগুলো শেয়ার করা।


১) সুলতান মির্জা, নামই যথেষ্ঠ - হ্যাঁ, আমি যে চরিত্র, তার নামটা তো জবরদস্ত হতে হবে। সুলতান। আপনি, রাজা, বাদশা, নবাব, সম্রাটই তো হতে চাইবেন। সুলতান আমার ভালো লাগার। সঙ্গে মির্জা! গালিবকে মির্জা থেকে আলাদা করা যায় নাকি! তাই সুলতান মির্জা নামেই আমার অন্তত পয়সা উসুল।


২) সাদা পোশাক - চিরকাল বিশ্বাস করে এসেছি, যে কোনও মানুষের একটা স্টাইল স্টেটমেন্ট থাকা দরকার। তাঁকে দেখতে খুব সুন্দর হতে হবে, এমন কোনও কথা নয়। কিন্তু একটা মানুষকে যেন তাঁর পোশাক দিয়েই মনে করা যায়। সুলতান মির্জা সবসময় সাদা পোশাক পরতো। তার কারণটাও ভালো খুব। কয়লা স্মাগলিং করে বড় হতে হয়েছে জীবনে। ছেলেবেলাটা গোটাটাই কয়লার মতো কালো। তাই সাদা পোশাকে ওই কালোকে দূর করে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। মন, চরিত্র, ইমেজ কিংবা পোশাক, সাদা লা জবাব। (টাকাও কিন্তু!)


৩) দুর্দান্ত প্রেমিক - প্রেমিক তো শাহরুখ, আমির, সলমন, ঋত্বিক, মিঠুন, অমিতাভ, ঋষি কাপুর, জিতেন্দ্র, রাজেশ খান্না, ধর্মেন্দ্র, সঞ্জীব কুমার, রাজেন্দ্রে কুমার, দীলীপ কুমার, মনোজ কুমার, দেবানন্দ সবাই। কিন্তু সুলতান মির্জার মতো প্রেম করতে কাউকে দেখিনি। সে প্রথমবার কঙ্গনা রানাওয়াতের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে। ইচ্ছে একটা উপহার দেওয়ার। কিন্তু রাস্তায় ছিল শুধু এক ঠ্যালাওয়ালা। যার কাছে আছে বলতে শুধু পেয়ারা। কিন্তু একটা পেয়ারার দাম মাত্র ৪ টাকা। অগত্যা, সেই পেয়ারাটাকেই সুলতান মির্জা কিনল ৪০০ টাকায়! এবং দোকানদারকে বলল, ভাবো এটাই দুনিয়ার শেষ পেয়ারা। বলো তাহলে এর দাম কত নেবে! বেচারা দোকানদার একটা পেয়ারার দাম ৪০০ টাকার বেশি আর কী করে হাঁকে! যদি সে বেশি দাম চাইতো, তাহলে সুলতানও আরও বেশি দাম দিয়ে কিনতো! আর কঙ্গনার হাতে পেয়ারাটা তুলে দেওয়ার আগে সুলতান বলেছিল, 'দামি জিনিস আনতে পারিনি। রাস্তায় পাইনি। তাই কম দামি জিনিসই বেশি দাম দিয়ে কিনে এনেছি!'না, সুলতানের মতো প্রেমিক আমি অন্তত পর্দায় কখনও দেখিনি।


৪) খারাপ কাজ সাগরে, শহরে নোংরামো করতো না সুলতান - রবিন হুড মার্কা ক্যারেক্টর সিনেমার পর্দায় অনেক দেখেছি। যারা বড়লোকের থেকে কেড়ে নিয়ে গরিবের ভালো করে। না, সুলতান গরিবদের অনেক ভালো করতো, সেসব দেখানো হয়নি ওয়ানস আপন আ টাইম ইন মুম্বইতে। শুধু সুলতান যেটা মেনে চলত, তাহলো- স্মাগলিং বা খারাপ কাজ সাগরে করব। কিন্তু শহরের মধ্যে কখনও নয়।


৫) যে জিনিসের অনুমতি পুলিশ দেয় না, সেটা আমি করি। যার অনুমতি মন দেয় না, সেটা আমি করি না! - এর থেকে ভালো ডায়লগ আমার অন্তত কোনও ভিলেন মার্কা হিরোর মুখ থেকে শোনা হয়নি। সিনেমাটা অন্তত ২০০ বার দেখেছি। আর মনে মনে, এই ডায়লগটা ২ কোটি বার আউরেছি। ভেবেছি শুধু যে, এই ক্যারেক্টরটাই আমি। সব কিছু নুইয়ে দিতে পারি। কিন্তু মন, মাথা আর প্রিন্সিপাল নয়।


৬) শোয়েবরা আমার জীবনেও আছে ! - হ্যাঁ, তো। বিভীষণ, মিরজাফর, নামগুলো শুধু পাল্টায় বিশ্বাসঘাতকদের। কিন্তু চরিত্রটা একই থাকে। আমার, আপনার চারপাশেও ওয়ানস আপন আ টাইম ইন মুম্বইয়ের মতো শোয়েবরা ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু শোয়েবরা উন্নতির শিখরে হয়তো পৌঁছতে পারে। কিন্তু মানুষের মনের রাজা 'সুলতান'-ই হয়। সুলতানকে ভালো লাগার আরও অনেক কারণ আছে। আজ এটুকুই থাক। জানাবেন কিন্তু যে, আপনি কোন ক্যারেক্টর হতে পছন্দ করবেন।