স্বরূপ দত্ত


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

 


প্রত্যেকটা বাজেট আসে, বাজেট যায়। কত জিনিসের দাম বাড়ে। কত জিনিসের দাম কমে। গরিব মানুষের কাজে এই সব বাজেট কোনওদিনও লাগে কিনা তা গরিব মানুষই জানে। তবু বাজেট হয়। কোন কম্মে লাগে, তা নেতা-মন্ত্রীরাই বলতে পারবেন। আমরা এই 'সার্কেলটার' অঙ্গ। তাই খবরে থাকি। না হলে যে লোকে বলবে 'অশিক্ষিত/অসামাজিক/কী জানি দেশদ্রোহীও বলতে পারে'। তবু এ দেশের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে বাজেটে কটা জিনিসের দাম বাড়লে ভালো লাগতো। কয়েকটা জিনিসের দাম কমলে বড় ভালো লাগতো। সেগুলোই নিচে দিলাম। দেখুন তো আপনারা এক মত কিনা?


বাজেটে যে যে জিনিসের দাম বাড়লে ভালো হতো -


১) ভালোবাসার দাম বাড়ুক আর একটু - সত্যিই তো। এই সমাজে দিনের পর দিন কমে যাচ্ছে ভালোবাসার দাম। বড় সস্তা হয়ে গিয়েছে ভালোবাসা। এখনই দাম না বাড়ালে, ভালোবাসা যারা উত্‍পাদন করে, তাঁদেরও গরিব চাষিদের মতো আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে।


২) দেশভক্তির দাম বাড়ুক একটু - কোথাকার কে একটা স্লোগান দিল। কোথাকার কে একটা কথা বলল। তাতেই দেশের সম্মান চলে গেল। দেশভক্তি বলে কিছু থাকল না! দেশের সম্মান এত ঠুনকো হলে চলে! তাই দেশভক্তি বিষয়টার দাম আর একটু বাড়লে ভালো হয়।


৩) নেতা মন্ত্রীদের মুখের কথার দাম যদি বাড়ে - সেই বছরের পর বছর ধরে লোকগুলো কী গুল মারছে। ডাহা মিথ্যে বলছে। নিজেরাই নিজেদের বিশ্বাস করে না। ওদের কথাকে কোনও নাবালক তো দূর, কোনও বাচ্চাও পাত্তা দেয় না। এভাবে নেতা-মন্ত্রীদের সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলে চলবে! তাই অবশ্যই দাম বাড়ানো হোক ওঁদের মুখের কথার।


৪) একজনের দুঃখের দাম যদি আর একজন একটু বেশি দিত - অন্যের দুঃখে আর লোকের মন খুব একটা কেঁদে ওঠে না এখন। লোকের দুঃখের কথা ফেসবুকে বললে, তাতে লাইক পড়ে! দুঃখের একটা 'একক' হয়ে উঠেছে ফেসবুকের লাইক! আর একটু দাম যদি আমরা অন্যের দুঃখকে দিতে পারতাম, সেই দুঃখী মানুষটার কষ্ট হয়তো লাঘব হতো।


৫) বিশ্বাস আর ভরসার দাম বড্ড কমে গিয়েছে - সমাজকে বাঁচাতে এই দুটো জিনিসের দাম এখনই বাড়ানো উচিত। না হলে আর বিশ্বাস এবং ভরসা মানুষের জীবন থেকে লুপ্ত হওয়ার পথে। এই শিল্প ধুঁকছে শুধু নয়, একেবারে শেষের পথে।


৬) মানুষের প্রাণের দাম এখনও বাড়বে না! - আজকের দিনে মানুষের জীবনের দাম এত কমে গিয়েছে যে, যে যাকে পাচ্ছে, যখন ইচ্ছে ধরছে আর ঘ্যাচাং করে মেরে দিচ্ছে! জন্তু-জানোয়াররা নয়, মানুষ অনবরত মরছে মানুষের হাতেই! এভাবে আর কদ্দিন! কেন এখনও বাড়বে না মানুষের জীবনের দাম?


৭) মেয়েদের সম্মানের দাম শীঘ্রই বাড়ুক - রোজ ধর্ষণ। রোজ শ্লীলতাহানি। রোজ উত্যক্ত করা। রোজ অসম্মান করা। রোজ মেয়েদের উপর যেভাবে অত্যাচার হচ্ছে, সমাজে আর মেয়ে থাকবে তো! আর কবে মেয়েদের সম্মানের দাম একটু  বাড়বে?


 


বাজেটে যে যে জিনিসের দাম কমলে ভালো হতো -


১) সময়ের দাম বড্ড বেশি - সময়ের দামটা একটু কমানো যাবে না? এ যে বড় মূল্যবান হয়ে উঠেছে। কিছুতেই যে পেরে ওঠা যাচ্ছে না সময়ের সঙ্গে। পারলে একটু সময়ের দাম কমান।


২) পুলিসের মাইনে কমবে কবে? - ওরা মাইনে নিয়ে করবেটা কী! ওদের কেউ কেউ পেশাটাকে যে পর্যায়ে নামিয়ে নিয়েছে তাতে পুলিশ আর কিছুদিন পর হয়তো আমাদের সমাজে কটুকথা হিসেবে গন্য হবে! তাই ওদের দাম আর একটু কমুক। খুব ভয়ে ভয়ে কথাটা লিখতে হল। ওই যে, এখনও ওদের দাম বেশি। কমার অপেক্ষায় সবাই আছে। ভয়ে বলতে পারে না। সাহস করে বলে ফেললাম।


৩) ডাক্তারের ভিজিট কমবে না! - কী বলি বলুন তো? যার পরিবারে রোগী আছে, তিনিই বুঝবেন। ডাক্তাররা কেমন যেন এমন এক ধরনের মানুষ হয়ে উঠেছেন, যাদের শরীরে মানুষের মতো ২০৬ টা হাড় আছে ঠিকই। কিন্তু হৃদয় নামক যন্ত্রটাই নেই। তাই ডাক্তারদের ভিজিট কমানো উচিত এখনই। (সব ডাক্তারদের উদ্দেশ্য করে লেখা নয়। বুঝবেন প্লিজ)।


৪) উকিলদের যুক্তির দাম কমলে ভালো হয় - এই পেশাটা আজব। অভিযুক্ত গীতায় হাত দিয়ে উত্তর দেন। কিন্তু উকিলরা গীতায় হাত দিয়ে প্রশ্নও করেন না। আবার মক্কেল যে খুশি হোক, তাকে ছাড়বেন না। না হলে কত লোকের জন্য কত বড় নামের উকিলরা লড়েন। সবাই সব দেখে। সব বোঝে। কেউ কখনও উকিলদের দেশদ্রোহী বলেন না। ওদের দাম একটু কমলে ভালো হয়।


৫) আশা আর স্বপ্নের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গিয়েছে - এই দুটো জিনিস যদি মানুষের জীবন থেকে চলে যায়, মানুষ বাঁচবে কী নিয়ে! বামুন হয়ে চাঁদ ধরতে যেও না বলে, বেঁধে দেয় মানুষের মনটা। একটু আশা আর স্বপ্নের দাম কমালে ভালো হতো। মানুষ আর একটু বেশি দেখতে পারতো।


৬) সিনেমার নায়িকার পোশাকের দাম কমবে না!- যে হারে সানি লিওন, পুনম পাণ্ডে, শার্লিন চোপড়াদের প্রায় নগ্ন হয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হয়, দেখে খুব লজ্জা লাগে। একটু পোশাকের দাম কমানোর ব্যবস্থা করুন আগে। প্যাহেলাজ নিহালানিরা শুধু চুম্বনটাই কাটছে। পোশাক আর কাটতে পারছে না। ওই এক ফিতের বিকিনিতে কাঁচি চালালে সব যে খুলে যাবে!


 


যে জিনিসটা ফ্রিতে করা উচিত বাজেটে -


শিক্ষা। কী জানি ছেলেবেলা থেকে যে শিক্ষা পেয়েছি, তার মানে, শিক্ষার বিনিময়ে পয়সা নিও না। গোটা সমাজটা তাহলে কতটা অশিক্ষিত বুঝুন! স্যালুট ওই সত্যিকারের পড়াশোনা না জানা মানুষগুলোকে। তাঁরা এই নেতা-মন্ত্রী-শিক্ষক, সমাজের বড় মানুষদের মতো 'অশিক্ষিত' নন।