জয়ীতা বসু : অন্দরমহলের ‘রানি’ তিনি। ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে রাত সাড়ে নটার দিকে এগোলেই, পরমেশ্বরীকে দেখার জন্য রীতিমত হাপিত্যেশ করে বসে থাকেন দর্শকরা। বুঝতেই পারছেন, অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাই বলা হচ্ছে। পরমেশ্বরীরুপী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ ২৪ ঘণ্টা ডট কম-এর সামনে অকপট। তাহলে চলুন কনীনিকার মুখ থেকেই শুনে নেওয়া যাক তাঁর জীবনের খুটিনাটি গল্প..


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রশ্ন : পরমেশ্বরী তো এখন সবার ঘরের মেয়ে, এটা ভাবতে কেমন লাগে?


কনীনিকা : এর আগে যখন যখন কোনও চরিত্র করেছি, তখনও আমি প্রত্যেকের ঘরের মেয়েই ছিলাম। তারপর নিজে থেকেই অনেকগুলো বছর কাজ করিনি। প্রথম প্রথম যখন মানুষের জীবনে নাম হয়, জনপ্রিয়তা আসে, তখন যে অনুভূতি থাকে, সেটা এই মুহূর্তে আমার নেই। তবে মানুষ যে আমার সিরিয়াল দেখছেন, সেটা ভাবতে ভাল লাগে।


 প্রশ্ন : পরমেশ্বরীর সঙ্গে বাস্তবের কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কতটা মিল?


কনীনিকা : পরমেশ্বরীর বেশ কিছু অংশ আমার নিজের সঙ্গে মিলে যায়। আবার অনেক অমিলও রয়েছে। তবে পরমেশ্বরী যতটা দিলদরিয়া মানুষ, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় অতটা দিলদরিয়া নয়। আমি নিঃসন্দেহে দিলদরিয়া, তবে পরমেশ্বরীর বিষয়টা অতিরিক্ত। সেই সঙ্গে পরমেশ্বরী নিঃশব্দ বিপ্লব চালিয়ে যায়। কিন্তু, কনি যখন বিপ্লব করে, তখন সে নিজেও সামলাতে পারে না। আবার, পরমেশ্বরীর বিপ্লবের ভাষা অন্যরকম। তাই পরমেশ্বরীর সঙ্গে কনির অনেক অমিলও আছে।



প্রশ্ন : অন্দরমহলের পরমেশ্বরী না কনীনিকা, কাকে ফুল মার্কস দেবেন?


কনীনিকা : আমার জীবনে কনীনিকাকেই ফুল মার্কস দেব। সেটাই আমার জীবনে থেকে যাবে। আজ থেকে কয়েক মাস পর পরমেশ্বরী শুধু মানুষের মনের মধ্যে থেকে যাবে। তাই কনীনিকাকেই ফুল মার্কস দেব।


প্রশ্ন : সবে সবে তো বিয়ে করেছেন, তাই সংসার আর কেরিয়ার একসঙ্গে সামলাতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না?


কনীনিকা : এখন আর হচ্ছে না। প্রথম প্রথম হচ্ছিল। বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থেকে কাজ করার যে মজা, সেটা তো শ্বশুরবাড়িতে হয় না। বাপের বাড়িতে যেভাবে রাজত্ব চলত, সেটা শ্বশুরবাড়িতে সম্ভব না। তবে শ্বশুরবাড়িতে যাঁরা এখন আমার সঙ্গে থাকেন, তাঁরা বোঝেন, আমার কখন কী চাই। তবে সেটা চাইতে হয়। ব্যাপারটা আস্তে আস্তে অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। সময় দিলে সবটাই হয়ে যায়।


প্রশ্ন : বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে থাকাকালীন কখনও মনে হয় না যে, বাবা-মায়ের ভাগের সময়টা কিছুটা কম হয়ে যাচ্ছে?


কনীনিকা : হ্যাঁ, ভীষণ মনে হয়। তাই দিনের মধ্যে আধ ঘণ্টা অন্তত বাবা-মাকে দেওয়ার চেষ্টা করি। আগের মত সেভাবে হয়তো একসঙ্গে সব সময় থাকা, খাওয়াদাওয়া হয় না। বিয়ের পর বাবা-মাকে কম সময় দিতে পারায়, সব সময় মনে হয়, আর একটু সময় যদি থাকতে পারতাম...একটু দেখতে পারতাম...বাবা-মায়ের যদি কিছু লাগত, যদি ব্যবস্থা করতে পারতাম। এই অনুভবটা সব সময় ব্যক্ত না করলেও, মনের মধ্যে ঘুরতেই থাকে।


 প্রশ্ন : বিয়ের পর এক বছর হল, নিজেকে কতটা সংসারী করে তুলতে পেরেছেন?


কনীনিকা: আমার বর খুব সংসারী। সব সময় সংসারী হলেই যে সংসার ভাল হবে, সেটা কিন্তু নয়। সেটা বিয়ের পর জেনেছি। আমার মনে হয় যে, সংসার পাওয়ার জন্য সব সময় ঘরণী হতে হবে, এমন নয়। যদি সবকিছু সহজে ম্যানেজ করা যায়, তার জন্য সংসারী হতে হয় না। আমাদের জেনারেশনটা অনেক পাল্টে গিয়েছে। আমরা অনেক ব্যস্ত এখন। তাই আমরা কাজকর্মের মধ্যে দিয়ে জীবনটাকে ম্যানেজ করি। আমি তো শুটিং শেষ করে রাত একটা দেড়টায় বাড়ি ফিরি। সেই জায়গা থেকে স্বামী হিসেবে সব মানিয়ে নেওয়াটা অনেক বড় কৃতিত্বের। আমি ওই জায়গায় থাকলে এতটা ম্যানেজ করতে পারতাম না।



প্রশ্ন : বাড়িতে থাকলে কীভাবে সময় কাটান?


কনীনিকা : বাড়ি থাকলে অনেক কাজ থাকে। বাড়িতে কী কী আনতে হবে, রেশন কতটা আছে, সব ভাবতে হয়। আমার কুকুরের জন্য কী কী লাগবে, সব কিছুই ভাবতে হয়।


প্রশ্ন : ছেলের সঙ্গে কতটা সময় কাটান?


কনীনিকা : বাড়িতে থাকলে সময় কাটাই। ছুটির দিনে একসঙ্গে খেতে যাই বা সিনেমা দেখতে যাই। তবে ওর বাবাই বেশি সময় কাটায়। কারণ, আমি তো বাড়ির বাইরেই থাকি বেশিরভাগ সময়।


প্রশ্ন : ফুল কমার্শিয়াল ছবিতে কখনও কি দেখতে পাব কনীনিকাকে?


কনীনিকা : না বোধ হয়। (একটু ইতস্তত করে) জানি না। কমার্শিয়াল বলতে সেভাবে কিছু বুঝি না। যে ছবির গল্প ভাল লাগে, সেটাই করি। চরিত্র ভাল লাগলে, ছোট চরিত্র হলেও করি। পরে মনে হয়, এত ছোট চরিত্র করার কোনও মানে নেই। সবচেয়ে বড় কথা হল, আমার হাতে অপশন নেই। যা কাজ আসে, আমাকে নিতে হয়। একটা সময় এত না করেছি, এখন আমি বুঝে গিয়েছি যে, যা কাজ আসবে নিতে হবে। না হলে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে পারব না।


প্রশ্ন : পরমেশ্বরী এত জনপ্রিয়তা পাওয়া সত্ত্বেও হাতে অপশন নেই?


কনীনিকা : প্রডিউসাররা তো আমায় নিয়ে সিনেমা করার কথা ভাবেন না। আমি যদি এতই জনপ্রিয় হই, তাহলেও আমায় ছোট চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে আমার তাতে কোনও আপত্তি নেই। যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের যে সিনেমা চলে বা হিট করেছে তা নয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা কাজ করছেন। তাই যা আসছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করাই ভাল।



প্রশ্ন : কখনও কি মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রির আরও কিছু দেওয়ার ছিল আপনাকে?


কনীনিকা : দেয়নি। দেবে। এর আগে তো এমনও গিয়েছে যখন বছরের পর বছর কাজ পাইনি, করিওনি। তাই কম কাজ করব, কিন্তু ভাল কাজ করব। একগাদা কাজ একসঙ্গে করলাম কিন্তু তার কোনও কোয়ালিটি নেই, এমন কাজ করে কি হবে? কষ্ট করে যাব, খাটনি করে যাব, নিশ্চই ফল পাব।


প্রশ্ন : বিগ বস-এর ঘরে অতগুলো মাস কাটাতে কোনও অসুবিধা হয়নি?


কনীনিকা : না হয়নি। কারণ প্রথমত, আমি ক্যামেরার সামনে ছিলাম। রোজগার করছিলাম। তাই কোনও অসুবিধা হয়নি। ক্যামেরার জন্য কাজ করেছি বলে অনেকেই মন্তব্য করতেন, আমি বাসন মজা থেকে আরম্ভ করে কাপড় কাচা, সব আনন্দ করেই করেছি। যখন ৩ মাস ধরে সবাইকে খেতে দিতাম, তখন যেন একান্নবর্তী পরিবারের মত মনে হত।


প্রশ্ন : বিগ বস জিততে পারেননি, কেমন লেগেছিল তখন?


কনীনিকা: খারাপ লেগেছিল বটে। কিন্তু, প্রথমে তেমন কিছু মনে হয়নি। তবে যিনি জিতেছেন বা যাঁরা ছিলেন, তাঁদের জনপ্রিয়তার তুলনায় আমি অনেক বেশি জনপ্রিয় ছিলাম।


প্রশ্ন : বিগ বস-এর জনপ্রিয়তা না অন্দরমহল-এর জনপ্রিয়তা, কোনটা বেশি উপভোগ করেছেন বা করেন?


কনীনিকা : (একগাল হেসে) এই কথায় ফিরে গেলাম সেই সময়টায় যখন আমার হাতে একটাও কাজ নেই। আর আমি বসে বসে ভাবছি, কেন আমার কাছে কাজ নেই? আমার কাছে বাড়ি থেকে বেরোবার পয়সাও ছিল না তখন। সেই দিনটাও যেমন ভাবায়, তেমনি এই দিনটাও আমায় ভাবায়। হতেও পারে, আবার কোনওদিন নতুন কোনও কাজ করব। এটা একটা সার্কেলের মত। আমি জনপ্রিয়তা এনজয় করি না। জনপ্রিয়তা অনুভব করি। মায়ের সমান বা ঠাম্মার সমান কেউ জড়িয়ে ধরেন, তখন ভাবি, আরও বেশি করে কাজ করতে হবে কারণ আমার উপর অনেক দায়িত্ব রয়েছে।



প্রশ্ন: জনপ্রিয়তার অনুভবটা কার সঙ্গে ভাগ করে নেন?


কনীনিকা : দর্শক আছেন বলেই আমি আজ আছি। সত্যি বলতে, দশটা বছর ভাল কোনও কাজ করিনি। কিন্তু, এই যে দর্শক ছোট্টবেলা থেকে আমার পাশে রয়েছেন। এটা নিয়েই আমি খুশি। নিজের কাছেও এর জন্য কৃতজ্ঞ।


প্রশ্ন : ইন্ডাস্ট্রির গসিপ নিয়ে কী বলবেন?


কনীনিকা : আমার ভাল লাগে। অনেককে এখন বলতে শুনি, আমার নাকি এই কাজটা (অন্দরমহল) করার পর মাথা ঘুরে গিয়েছে। আমার নাকি অহঙ্কার হয়ে গিয়েছে। এগুলো শুনে হাসি পায়। ভাবি, সত্যি যদি হত। কারণ, কীভাবে অহঙ্কার করতে হয়, সেটাই তো জানি না। তবে আমি সামান্য অহঙ্কারী বটে। কিন্তু, সেটা মানুষ হিসেবে। সেই অহঙ্কারটা দেখাতে হয় না।


প্রশ্ন : ইন্ডাস্ট্রিতে বন্ধু বলে কাকে মনে করেন?


কনীনিকা : বন্ধু শব্দটা খুব কঠিন। বন্ধু অর্থে কেউ নেই। কিন্তু, চেনা মানুষ প্রচুর। নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে হয় যে এত ভাল মানুষ আমার সঙ্গে রয়েছেন। তাঁদেরই বন্ধু বলে মনে করি।


প্রশ্ন : এখন আর পার্টিতে দেখা যায় না কেন?


কনীনিকা : সময় পাই না বলে যাই না। সময় পেলে আবার যাব। আমার পার্টি করতে খুব ভাল লাগে।


প্রশ্ন : বর-কে আর প্রযোজনা করতে দেবেন না?


কনীনিকা : বাড়ির টাকা বাড়িতে ফিরে এলে কোনও সমস্যা নেই। তবে এই মুহুর্তে কোনও ভাবনা নেই।


প্রশ্ন : বরের প্রযোজনায় কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নায়িকা হিসেবে দেখতে পাব কখনও?


কনীনিকা : বরের প্রযোজনায় তো নায়িকা হিসেবে আসিনি। আমি তো জানতাম-ই না, ও আমার বর হবে। আর আমি সেরকম নই যে, প্রযোজনা হলে আমাকে নিতেই হবে। তবে এখন সেরকম কোনও পরিকল্পনা নেই।


প্রশ্ন : দ্রনের মা আপনি, আবার কি কখনও মা হিসেবে দেখতে পাব?


কনীনিকা : আবার একগাল হাসি। হলে তো নিশ্চই জানতেই পারবেন।


প্রশ্ন : পরমেশ্বরীর ভক্তদের জন্য কী বার্তা দেবেন?


কনীনিকা : আমি কৃতজ্ঞ সবার কাছে। সময়ের কাছেও কৃতজ্ঞ, আর মানুষের কাছেও। তাই আরও ভাল করে কাজ করতে চাই। আমাকে দেখে মানুষের মুখে যে হাসি দেখতে পাই, সেটা দেখে মনে হয়, ওই মানুষগুলো যেন আমার বাড়ির লোক। মানুষ যেভাবে আমার পাশে থেকেছেন, তাতে প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞ আমি।