জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: এ এক অদ্ভুত সমাপতন! ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি, একে একে চলে গেলেন চৌরঙ্গী ছবির নায়িকা অঞ্জনা ভৌমিক, সুরকার অসীমা মুখোপাধ্যায়, বৃহস্পতিবার প্রয়াত হলেন এই ছবির জনপ্রিয় গান 'বড় একা লাগে'-র গীতিকার। 'ও আকাশ সোনা সোনা' থেকে 'এসো মা লক্ষ্মী', বাংলা গানকে যিনি সোনা বাঁধানো শব্দবন্ধ দিয়ে বেঁধেছিলেন, তিনি আর নেই। প্রয়াত ষাটের দশকের জনপ্রিয় গীতিকার মিল্টু ঘোষ(Miltu Ghosh)। বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টা নাগাদ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন- Prabhat Roy: ২ সপ্তাহ পর বাড়ি ফিরলেন প্রভাত রায়, এখন কেমন আছেন পরিচালক?


বাঙালির চিরকালের লক্ষ্মীপুজোর গান, যা আজও সমান জনপ্রিয়, 'এসো মা লক্ষ্মী, বসো ঘরে' লিখেছিলেন মিল্টু ঘোষ। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের এই গান নাকি লক্ষ্মী পুজোয় বাড়িতে বাজাতেন সন্ধ্যা নিজেই। এমনকী সুচিত্রা সেনের বাড়িতেও বাজত সেই গান। আজও লক্ষ্মী পুজোয় তারকা থেকে সাধারণ শ্রোতার মুখে মুখে ঘোরে সেই গান। তবে শুধু এই গানই নয়। মিল্টু ঘোষের লেখা জনপ্রিয় গানের তালিকা দীর্ঘ। মান্না দের সুর করা ‘তুই কি আমার পুতুল পুতুল সেই ছোট্ট মেয়ে', আরতি মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া 'ওগো বন্ধু আমার', ‘চৌরঙ্গী’ ছবির গান ‘বড় একা লাগে এই আঁধারে’, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুর করা ও গাওয়া 'ও আকাশ সোনা সোনা' গানটিও মিল্টু ঘোষেরই লেখা।


পুরনো এক সাক্ষাত্কারে গীতিকার মিল্টু ঘোষ বলেন যে যৌথপরিবারে বড় হওয়া মিল্টু গীতিকার হতে চাননি। ছাত্রাবস্থা থেকেই নিয়মিত কবিতা লিখতেন আর চুটিয়ে ফুটবল খেলতেন। ১৯৫৬ সালে গানের এক প্রতিযোগিতায় তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় সুধীন দাশগুপ্তের। এরপর তাঁকে চারটে গান লিখে দিয়েছিলেন তিনি। তার মধ্যেই সুধীন দাশগুপ্তর পছন্দ হয়ে গেল, ‘কাজল কাজল কুমকুম শিউলি ঝরে’। মিল্টু ঘোষের লেখা সেই গান গেয়েছিলেন স্বয়ং গীতা দত্ত। সেখান থেকেই শুরু গীতিকারের যাত্রা। তবে গান লেখা তাঁর পেশা নয়, ছিল নেশা। বঙ্গবাসী কলেজ থেকে পাশ করার পরে চাকরি নেন রাজ্য সরকারের পরিবহণ দফতরে। পাশাপাশি পুরোদমে চলত গান লেখার কাজ। 


আরও পড়ুন- Pariah: বাংলার বক্স অফিসে বাজিমাত, এবার ভিনরাজ্যে পাড়ি 'পারিয়া'র


হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, অপরেশ লাহিড়ী, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়-সহ বাংলা স্বর্ণযুগের সব সুরকারের সঙ্গেই কাজ করেছেন তিনি। ষাটের দশকে তাঁর দৌড় যে সোজা ছিল না, তা সকলেরই জানা। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামল গুপ্তর মতো গীতিকাররা তখন উজ্জ্বল নক্ষত্র, সেই সময় শব্দের জোরে নিজের জায়গা পাকা করেছিলেন তিনি। গান লিখেছেন উত্তম কুমারের লিপেও। সুরকার বেঁকে বসলেও স্বয়ং মহানায়ক সেই গানের কথাকে মান্যতা দিয়ে ছবিতে জায়গা দিয়েছেন তাঁকে। রবীন্দ্র সদনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমবেত সংগীতের গীতিকার থেকে শুরু করে চিন-ভারত যুদ্ধের পরে তারকাদের ক্রিকেট ম্যাচের ধারাবিবরণী থেকে গান তৈরির কারিগর ছিলেন তিনি, মিল্টু ঘোষ। 


তবে যে মিল্টু ঘোষের জীবন ছিল তারকাবেষ্টিত। তিনিই একসময় দীর্ঘ চার দশকের কেরিয়ার ছেড়ে স্বেচ্ছায় নির্বাসন নিয়েছিলেন। কোনও অভিমান থেকেই কি এই নির্বাসন? জানা নেই। স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে বরাহনগরের মতিলাল মল্লিক লেনের পুরনো বাড়িতে সাধারণ জীবনযাপনই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার নিঃশব্দেই চলে গেলেন স্বর্ণযুগের গীতিকার মিল্টু ঘোষ। 



(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)