হেলমেট না পরেও দিব্যি যারা হিরো!
শহরের এখন যা পালস তা হেলমেটহীন বাইক দেখলেই লোকে কেমন একটা চোখে তাকাচ্ছে। ফোটোগ্রাফাররা ওঁত পেতে অপেক্ষা করে আছেন। হেলমেট ছাড়া বের হলেই সেই ছবি তুলে সটান পরদিন পেপারে। আর তাতে ক্যাপশন, ``এরা আপনার চেনাশোনা কেউ``! ঠিক যেন মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল।
পার্থ প্রতিম চন্দ্র: শহরের এখন যা পালস তা হেলমেটহীন বাইক দেখলেই লোকে কেমন একটা চোখে তাকাচ্ছে। ফোটোগ্রাফাররা ওঁত পেতে অপেক্ষা করে আছেন। হেলমেট ছাড়া বের হলেই সেই ছবি তুলে সটান পরদিন পেপারে। আর তাতে ক্যাপশন, ''এরা আপনার চেনাশোনা কেউ''! ঠিক যেন মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল।
আরও পড়ুন- বলিউডের বিখ্যাত সব কন্ডোম মডেল
বেপরোয়া বাইক চালকদের শায়েস্তা করতে পুলিস যা করছে সেটা প্রশংসনীয়। কিন্তু তাতে কতটা কাজ হচ্ছে সেটা আলোচনার বিষয়। কিন্তু বলিউডে বারবার দেখা গিয়েছে হিরোরা আর যাই হোক বাইক চালাতে গিয়ে হেলমেট কিছুতেই পরবেন না (ব্যতিক্রমও আছে, কিন্তু সবাই বলে ব্যতিক্রম উদাহরণ নয়)। হেলমেট জিনিসটা যেন ঠিক হিরোইজমের সঙ্গে যায় না। অথচ বাস্তবটা ঠিক উল্টো। নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য, নিজেকে আরও স্মার্ট লাগার জন্য হেলমেট দারুণ কার্যকরী। এই সরল সত্যটা কবে যে বুঝবে ওসব রোমিও রাইডডাররা!
তবে আসুন এর মাঝে দেখে নিই কিছু সেলেবদের যারা কলকাতার রাস্তায় এভাবে বাইক চালালে নিশ্চিতভাবেই পরদিন পেপারে গোল লাল দাগ করে ভিলেন হয়ে যেতেন--
রণবীর কাপুর (রয়)-রয় সিনেমায় রণবীর কাপুরের লিপে ওই গানটার কথা মনে আছে। তু হ্যায় কে নেহি। ফাটাফাটি একটা বাইক চালানোর সময় রণবীরকে দারুণ স্মার্ট লাগছিল না! কিন্তু কলকাতায় এলে নিশ্চিতভাবে তাঁকে তেড়ে যেতেন পুলিস-সার্জেন্টরা। এই বাজারে গোটা তিনশো টাকা স্পট ফাইন দিতে হত রণবীরকে। রয়-এর যা বক্স অফিস কালেকশন তাতে ওই ৩০০টাকা ফাইন দিলে ক্ষতি বাড়ত প্রযোজকের।
জন আব্রাহাম (ধুম)-- ধুমে জন আব্রাহামকে বেশিরভাগ সময়ই হেলমেট পরতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু সেটা যতটা না ট্র্যাফিক নিয়মের জন্য, তার চেয়ে বেশি নিজেকে লুকিয়ে রেখে চুরির জন্য। কিন্তু যখন জন আর পুলিস অভিষেকের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চাইলোন না তখন একেবারে সটান হেলমেট ছাড়া বাইক চালালেন। একে চোর, তার ওপর আবার হেলমেট পরলেন না। এই বাজারে কলকাতায় থাকলে জনের হাজতবাস নিশ্চিত ছিল।
শাহরুখ খান (দিওয়ানা ও রব নে বানা দি জোড়ি)-- কিং খান বাইক যে খুব চালাতে ভালবাসেন তা নয়। কিন্তু সিনেমায় তাকে কিছুবার চালাতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু দিওয়ানা সিনেমায় বাইক চালানোর সময় তাঁর মাথায় হেলমেট দেখা যায়নি। আর রব নে বানা দি জোড়ি সিনেমায় অনুষ্কা শর্মার পিছনে বসে রোমান্টিকতা দেখাতে গিয়েও হেলমেটহীন ছিলেন।
অক্ষয় কুমার (কমবক্ত ইসক)-- অক্ষয় কুমারের বেশ কিছু সিনেমায় বাইক চালাতে দেখা গিয়েছে। ও মাই গড থেকে কমবক্ত ইসক। তবে ও মাই গডে কিছু সময়ের জন্য হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোর জন্য তাঁকে ছাড়া যায়। কিন্তু 'কমবক্ত ইসক'সিনেমায় যে কায়দায় ঝুঁকি নিয়ে হেলমেট ছাড়া বাইক চালালেন সেটা এ বাজারে কিছুতেই ক্ষমা করা যায় না।
বিপাশা বসু, রানা ডাগুবাতি (দম মারো দম)-- থি আমো, থি আমো। গানটা এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে গোটা দেশে সবাই গাইত। গানের কথা, সুরের সঙ্গে দৃশ্যটাও জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু বিপাশা বসুকে বাইকের পিছনে নিয়ে রানা ডাগুবাতি যেভাবে হেলমেটহীন বাইক চালালেন, সেটা এখন চোখে লাগছে।
ইমরান হাসমি (দিল তো বাচ্চা হ্যা জি, রাজ টু)--কিসিং কিংয়ের বাইক রাইডটা যে একটু রোমিও টাইপ হবে সেটা স্বাভাবিক। হয়েওছে তাই ইমরান হাসমি বড় পর্দায় বাইক চালালে হেলমেনট পরেছেন এমন দৃশ্য তন্নতন্ন করেও খুঁজে পেলাম না।
সলমন খান (দাবাং টু)-- হরিণ মারা থেকে ফুটপাতে গাড়ি চালিয়ে মানুষ মারা। তার ওপর আবার সাম্প্রতিক ধর্ষণ মন্তব্য। ভাইজান এমনিতেই অনেক বিতর্কে। তাই দাবাং টু-তে ওভাবে বেশ ভারী সোনাক্ষিকে নিয়ে হেলমেটহীন বাইক সফরটা নিয়ে আর জল না ঘোলা করাই ভাল। ভাই না হয় লালবাজারে লোক পাঠিয়ে লাইন দিয়ে ওমনই ফাইন দিয়ে দেবেন।
এই তালিকাটা সবে শুরু। সব লিখতে গেলে হাঁফিয়ে যাব। আমার পুরো লেখাটা পরে পাশ থেকে কে জানো বলল, উত্তম কুমার যখন সপ্তপদীতে বাইকের পিছনে সুচিত্রা সেনকে ওরকম একটা রোমান্টিক গান করেছিলেন, তখন উনিও তো হেলমেট পরেননি। পাল্টা যুক্তি দিয়ে কে জানো বলল, আরে বাবা তখন এসব নিয়ম ছিল না। তখন রাতেবেরেতে মা উড়ালপুলের ওপর ওরকম ভোঁ ভোঁ রেসিং চলত না। পুলিস তখনও হেলমেট না পরার জন্য তেড়ে যেত না।
যাক সে সব যুক্তি। একটা কথা ঠিক সিনেমার প্রয়োজন, আর বাস্তব জীবনের প্রয়োজনটা একেবারে আলাদা। হেলমেটটা মাথায় নিয়ে বাইক সফরটা একই রকম রোমান্টিক, সুন্দর, আর হিরোএটিক হয়। এত বলার পরও যারা বুঝলেন তাদের পক্ষে ভাল। যারা বুঝলেন না, তারা তৈরি থাকুন, সামনে একটা গাড়ি খুব জোরে গাড়ি আসছে...