সিঙ্গাপুরেও লকডাউন, ৩৭ তলার ফ্ল্যাটে কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন `বন্দি` ঋতুপর্ণা?
Zee ২৪ ঘণ্টা ডট কমের সঙ্গে সিঙ্গাপুর থেকেই ফোনে কথা বললেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী।
রণিতা গোস্বামী : করোনার জেরে দেশ যখন লকডাউনের পথে হাঁটতে চলেছিল, ঠিক তখনই সিঙ্গাপুরে উড়ে গিয়েছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সেখানেই থাকেন তাঁর স্বামী সঞ্জয় চক্রবর্তী এবং তাঁর দুই ছেলেমেয়েে অঙ্কন ও ঋষণা। আপাতত সিঙ্গাপুরে পরিবারের সঙ্গেই কাটছে অভিনেত্রীর জীবন। কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন, কী কী করছেন? এই সমস্ত কিছু নিয়েই Zee ২৪ ঘণ্টা ডট কমের সঙ্গে সিঙ্গাপুর থেকেই ফোনে কথা বললেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী।
কীভাবে সময় কাটাচ্ছো?
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বলেন, ''পুরোপুরি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটছে, ছেলেমেয়ে,স্বামী, সংসার নিয়ে কেটে যাচ্ছে দিব্যি। গাজু (মেয়ে ঋষণাকে এই নামেই ডাকেন) অনলাইনে নাচের ক্লাস করছে। কখনও আমি ওকে বলছি, চল আমিও করি তোর সঙ্গে (হাসি)। আবার কখনও ও হয়ত কিছু বানাচ্ছে, তখনও আমি ওর সঙ্গে থাকছি। এই যেমন টেন্ট বানাচ্ছিল। আমিও ওকে সাহায্য করলাম। আমার ছেলেরও (অঙ্কন) অনলাইনে ক্লাস চলছে। ও পড়াশোনা করছে। এরপর ওর আমেরিকায় পড়তে যাওয়ার কথা। যদিও এখন যা অবস্থা, তাতে কী হবে জানি না (চিন্তিত হয়ে)! ওর স্কুলে একটা অনুষ্ঠান ছিল ওটা বাতিল হয়ে গেছে লকডাউনের জন্য। তাই ওর মনটা খুব খারাপ। আবার এসবের মাঝেই আমরা বাড়ির মধ্যে বিভিন্ন Indoor Games-এ সময় কাটছে। কখনও আবার কমপ্লেক্সের মধ্যে আমাদের যে সুইমিং পুল আছে সেখানে চলে যাচ্ছি ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়েই (হাসি)।''
আরও পড়ুন-দেশজুড়ে করোনার প্রকোপ, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
স্বামী সঞ্জয় চক্রবর্তীর কথা বলতে গিয়ে অভিনেত্রী বলেন, ''সঞ্জয় আবার বলে, আমি থাকলে খাবারগুলো একটু অন্যরকম লাগে। আসলে আমাদের বাড়িতে যিনি রান্না করেন, তিনি খুবই ভালো রান্না করেন। তবুও আমি থাকলে একটু অন্যরকম কিছু করার চেষ্টা করি। এই যেমন সুন্দর করে স্যালাড সাজালাম। আবার আজই যেমন টোফু, গার্লিক, সয়াসস দিয়ে একটা পদ বানালাম।''
পরিবারের সঙ্গে ছাড়া নিজে আলাদা করে কি সময় কাটাচ্ছো?
''হ্যাঁ, এই যেমন এই সবের মধ্যেই ১৫ মিনিট হলেও একটু ওয়ার্কআউট করার চেষ্টা করছি। আমরা যেখানে থাকি সেটা ৩৭ তলা। তাই এখান থেকে গোটা সিঙ্গাপুরের ভিউটা খুব ভালো। সমুদ্রও বেশ ভালো দেখা যায়। সেগুলো উপভোগ করছি। আকাশ দেখছি। এগুলো একটা অন্যরকম পাওয়া। আবার কখনও সিনেমা দেখছি। আমার একটা নৃত্যনাট্য করার কথা রয়েছে, ওটা লিখে ফেলছি এই সময়। ''
ঋতুপর্ণা বলেন, ''দেখো, আমার তো দুটো সংসার একটা সিঙ্গাপুরে আরেকটা কলকাতায়। আমি এখানে আছি। আবার কলকাতায় আমার শাশুড়িমা, মা রয়েছেন। ওদের জন্যও চিন্তা হচ্ছে। পরিস্থিতি তো ভালো নয়। তাই ওখানেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।''
বর্তমানে এই যে করোনার প্রকোপে গোটা বিশ্বকে টলিয়ে দিয়েছে, এই পরিস্থিতি নিয়ে কী বলবে?
ঋতুপর্ণার কথায়, ''দেখো সবকিছুরই একটা পজিটিভ ও নেগেটিভ দিক রয়েছে। এটা যেমন কঠিন একটা সময়, আবার এই পরিস্থিতির জন্যই আমার পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারছি। যেটা আমরা প্রায় করতেই পারতাম না। সকলের জীবনই ভীষণ যান্ত্রিক হয়ে গিয়েছিল। আমরা আবার বেসিকে ফিরে গিয়েছি। খাবার, জল, আর বাসস্থান, এর বেশি আমাদের এখন আর কিছু প্রয়োজন নেই। সকলেরই এক চাহিদা। আসলে একটা কথা বুঝতে হবে। প্রকৃতির আমাদেরকে প্রয়োজন নেই, আমাদের প্রকৃতিকে প্রয়োজন আছে। তাই প্রকৃতির যত্ন নিতে হবে।''
অভিনেত্রী আরও বলেন, ''তবে একটা চিন্তা হচ্ছে, যে যাঁরা দৈনিক রোজগেরে তাঁদের জন্য। তাঁদের কাছে এই পরিস্থিতি খুবই সমস্যার। তাঁদের জন্য আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আমি চেষ্টা করছি বিভিন্ন NGO-র মাধ্যমে আমার পক্ষে যতটা সম্ভব সাহায্য করতে। এইভাবে সকলে এগিয়ে এলে কিছু সুরহা হবে বলেই আমার আশা।''
আরও পড়ুন-টালিগঞ্জ ও লেক গার্ডেন এলাকার গরিব মানুষদের চাল, ডাল ও আলু বিলির উদ্যোগ ঋতুপর্ণার
করোনার প্রকোপে গোটা বিশ্ব যখন উদ্বিগ্ন, তখন এসবের মধ্যেও পজিটিভিটি খোঁজাতেই বিশ্বাসী অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তাঁর কথায়, যত বড় সমস্যাই আসুক, ঐক্যবদ্ধ থাকলে এই লড়াই আমরা লড়তে পারব।