শর্মিলা মাইতি


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ছবির নাম- পিঙ্ক


রেটিং- ****


আমাদের ছোটবেলায় তখনও জানতাম, মেয়েদের এগিয়ে যেতে হবে। মেয়েরা এখনও পিছিয়ে আছে। আরও পরে জেনেছিলাম, আমাদেরটা ঠিক ছোটবেলা নয়। মেয়েবেলা। নানা গণ্ডিতে আটকে থাকা, নানান গণ্ডি টানার জীবন। মুক্তমনকে শেকলে-শেকলে বাঁধার জীবন। শিল্প-কাব্য-সিনেমার দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে ভাবতে থাকি, কোথায় নারীর মুক্তি। কারণ, বইতে তো নানা রকম লেখা আছে। গুলিয়ে দেয় সিনেমার সংলাপগুলোও। ঠিকটা কোথায় শিখব?


পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী প্রথম রাতেই বেড়াল মারলেন। অবশ্যই ক্রিয়েটিভ পরিচালক ও প্রোডিউসার সুজিত সরকারের হাত ধরে। বলিউডি ছবির বটগাছ হিসেবে যাঁকে আমরা মান্য করি, তাঁর নামটা টাইটেল কার্ডে তিন নম্বরে। তাঁর আগে কাদের নাম? তাপসী পান্নু, কীর্তি কুলহারি, আন্দ্রিয়া তৈরং.. ভ্রু কুঁচকানোর কিছু  নেই। মেয়েরা এগিয়েছে। অমিতাভ বচ্চনের চেয়েও এগিয়েছে। পিঙ্ক-এর কেন্দ্রবিন্দুতে মহিলাই। নারীকেন্দ্রিক বিষয়ই। অমিতাভ নন। এখন  প্রশ্ন করতেই পারেন, অমিতাভ যদি না-ই হন, তাহলে অমিতাভ কেন? নারীকেন্দ্রিক বিষয় নিয়ে বলতে গেলেও এক নব্য বলিউড পরিচালককে কেনই বা ভর দিতে হচ্ছে এক শালপ্রাংশু মহাভুজ মহারথীর স্কন্ধে! হ্যাঁ, এই প্রশ্নটার উত্তর পেতেই আপনাকে সিনেমাহলে টিকিট বুক করতে হবে।


মেয়েরা এগিয়ে গিয়েছে। যেমনই হোক তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, আর্থিক বৈভব, যেমনই হোক চাকরি। মেয়েরা এগিয়েছে কারণ, মেয়েরা না বলার ক্ষমতায় আলোকিত হয়েছে!


এতটাই সাহসী বাক্যবন্ধ দিয়ে পিঙ্ক ছবির শুরু। তবু একটা জায়গায় হোঁচট খাই, সে-ই তো মেয়েদের আলোকিত হওয়ার পেছনে কোনও না কোনও দয়াবান পুরুষের হাত, কোনও আলোকপ্রাপ্ত বিবেক। তাহলে সমাধান হল কই?


আরও পড়ুন- দাবাং থ্রি নিয়ে সোনাক্ষীর চিন্তার কারণটা জানেন!


গোলাপি রঙের পেলবতা উধাও নামমাহাত্ম্যে। জন্ম থেকেই জামা-কাপড়-জুতো-মোজা-হিসির বিছানায় এই রঙটাই দেখে আসে অভিজাত মেয়েরা। দরিদ্র মেয়েরা এই রঙটা জানতে পারে, চিনতে শেখে আরও হিংস্র কোনও অভিজ্ঞতা থেকে। মেয়েরা পুরুষকে না বলেছে বহুকাল আগে থেকেই। কখনও প্রত্যাখ্যানের স্বরে, কখনও ভব্যতার প্রলেপ মাখিয়ে। কিন্তু না শব্দটা তেমন শিকড় ছড়াতে পারেনি মাটির অন্দরে-অন্দরে। প্রত্যাখ্যাত পুরুষের বিষে আজও নারীরা দংশিত হয়। পোড়ে।  মুখশ্রী হারায় অ্যাসিডের যন্ত্রণায়। গোটা সমাজটাই এখন তাদেরই দখলে। রীতেশ শাহের লেখনীতে তিরের বেগে ছুটে আসে কিছু সংলাপ। সবলার সংলাপ। গুমরে থাকার সময় আর নয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যিনি লিখছেন এই কাহিনি, তিনি নিজেও এক পুরুষসত্তাই।


ঘটনার প্রেক্ষিত এদেশের অভিজাততম রাজধানী। দিল্লি। যে-দিল্লির বুকেই ধর্ষিতা হয়েছে দামিনী। বলা উচিত দামিনীরা, কেন না, আজও আজও ঘটে চলেছে এমনই নানা ধর্ষণকাহিনি। যে-কাহিনি নারীদের বোবা করে দেওয়ার। নারী হয়ে জন্মানোর ভয়, লজ্জা, সম্ভ্রম, আব্রুতে আঁটসাট করে বাঁধার। মিনাল আর ফলকের মতো মেয়েরা এই সমাজেরই প্রতিভূ। কখনও তারা সারা বিশ্বের প্রতিনিধি। এক অপ্রত্যাশি,ত ঘটনাই যাদের ,চিহ্নিত করে সেক্স-ওয়ার্কার হিসেবে। সেক্স, যৌনতা, যৌনব্যবসা.. এমন সব শব্দই তো তৈরি করে পতিতা শব্দের। অঙ্গদ বেদির অভিনয়টাও লক্ষ্য করবেন। কেন বললাম সেটা নিজেরাই বিচার করবেন পরে। আপাতত যেটা দেখার, নারীকে না বলার অধিকারকে প্রকৃষ্ঠ রূপ দেওয়ার জন্যে যাঁরা ঠেসমূলের কাজটা করলেন।


অনেকদিন পরে পার্শ্বচরিত্রের অমিতাভ বচ্চনকে এত ভাল লাগল। রিটায়ার্ড আইনজীবীর ভূমিকায় তাঁর উপস্থিতি অনবদ্য। তিনি না থাকলে বিষয়টাই ঠিক করে বলা হত না। কোর্টরুম ড্রামায় তাঁর ব্যারিটোন ভয়েস, ধাক্কা লাগে দর্শকের মর্মে। শেষ বার্তাটা যেন পৌঁছে দিলেন দীপক সেহগলই। এঁর জায়গায় যে-কেউ অভিনয় করতে পারতেন। ওম পুরি। হয়ত আরও ভাল করতেন। রোশন শেঠ। কে জানে, হয়ত আরও বিশ্বাসযোগ্য। নাসিরউদ্দিন শাহ। হয়ত হতে পারতেন সেরা চয়েস। কিন্তু না। না শব্দটাকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য, দুপায়ে খাড়া হয়ে দাঁড়ানোর জন্যেই প্রয়োজন ছিল অমিতাভকে। তিনি এলেন অমিত-লাবণ্যে। মেয়েদের পাশে দাঁড়ালেন অভিজ্ঞ বয়োজ্যেষ্ঠের তারুণ্যে।


তাপসী পন্নু। এঁকেও অনেকদিন মনে রাখবে ভারতীয় স্ক্রিন। কেন না, এঁর প্রতিস্থাপনের জন্য একটা অন্য ভাবধারার জন্ম দিতে হবে লেখককে। নারীত্বের এক অন্য বিপ্লব। শহরের জনঅরণ্যে একা বেঁচে থাকার সাহস। সব বাধাকে একলা মোকাবিলা করবার সাহস। পোশাক দেখেই কোনও নারীর যৌনতা নিয়ে আঙুল তোলাকে ধিক্কার জানানো। এসবকিছুর ঊর্ধ্বে আরও কোনও প্রতিবাদ থাকলে, সেটাই করে দেখাতে হবে তাঁকে। অন্যজন কীর্তি কুলহারি। তাঁর সংলাপও মনে রাখার মতো।