নিজস্ব প্রতিবদেন: গত শতাব্দীর সাতের দশক। সে ছিল বাংলা গানের স্বর্ণযুগ। সে সময় পুজোর গান বাঙালির জীবনে অন্য জায়গা করে নিত। পুজো এলেই ব্যস্ত হয়ে পড়তেন গীতিকার, সুরকার থেকে কন্ঠশিল্পীরা। এবার পুজোয় নতুন কী গান  উপহার পাচ্ছেন, সে নিয়ে মুখিয়ে থাকতেন শ্রোতারাও। শ্রোতা এবং শিল্পীর মধ্যে সে সময় কথা দিয়ে যাঁরা সেতু তৈরি করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন- হীরালাল সেন জীবনকৃতি পুরস্কার পেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়


এমনই এক পুজোর সময় কয়েকটি গান লিখে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে উপস্থিত হলেন পুলকবাবু। হাতে একটি খাতা। মোটামুটি খসড়া করে ফেলেছেন হেমন্তকে দিয়ে যে গানগুলি গাওয়াবেন। পুলকবাবু যখন হেমন্তর বাড়িতে পৌঁছলেন, তখন স্নান করছেন গৃহকর্তা। বাড়িতে অতিথি আগমনের বার্তা স্নানঘরে পৌঁছতেই দ্রুত স্নান সেরে প্রায় ভিজে শরীরে পুলকের কাছে এসে হেমন্ত বললেন, “পুলক, কতদিন পরে এলে, একটু বসো..”। ব্যস, এই শব্দগুলোই মনে ধরে গেল পুলকবাবুর। হেমন্ত সেখান থেকে যেতেই খাতা কলম নিয়ে বসে পড়লেন। আর বাকিটা ইতিহাস, থুড়ি, আজকের ভাষায় ভয়ঙ্কর ভাইরাল। এইভাবেই যে কোনও মুহূর্তকে অনুভূতির রঙে রাঙিয়ে গান লিখে ফেলতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। গান লেখার জন্য তাঁকে কখনও বদ্ধঘরে বসে থাকতে দেখা যায়নি।


আরও পড়ুন- 'সঞ্জু'র পোস্টারে রণবীর যেন অবিকল সঞ্জয়


সে সময় উত্তম কুমারের খ্যাতি মধ্যগগনে। উত্তম কুমার আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জুটি হলে তো আর কাথাই নেই। উত্তমের লিপে তখন হেমন্তর গান মানেই সুপার ডুপার হিট। তবে, অগ্রগামীর ছবি ‘শঙ্খবেলা’র জন্য যখন উত্তমের লিপে নতুন কন্ঠ চাইছেন পরিচালক সরোজ দে, তখন এই ছবির সুরকার সুধীন দাশগুপ্ত কালু দা (সরোজ দে)কে বললেন, কিশোর কুমারকে দিয়ে গাওয়ানো গেলে বেশ হয়। সে সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন পুলকবাবু। তিনি মান্না দে-কে দিয়ে ওই গানগুলি গাওয়ানোর প্রস্তাব দেন। পুলকবাবুর আবদারে একটু ইতস্তত করলেও তাঁর প্রস্তাব সে দিন ফেলতে পারেননি পরিচালক। উত্তম কুমারের লিপে সেই প্রথম মান্না দে প্লেব্যাক করলেন। লতা মঙ্গেশকর এবং মান্না দে-র সেই গান এখনও এই প্রজন্মের মুখে মুখে ফেরে, “কে প্রথম কাছে এসেছি...।”



আরও পড়ুন- সোনমের বিয়ে নিয়ে মুখ খুললেন বাবা অনিল কাপুর


গানের জগতের বাইরেও পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক অন্য সম্পর্ক ছিল মান্না দের। মান্না দে-র গায়কি ভীষণ পছন্দ করতেন তিনি। মান্না দে-র মেজাজ বুঝে পুলকবাবু এত সুন্দর গান লিখতে পারতেন যে খোদ মান্না দে-ই অবাক হয়ে যেতেন। একদিন মুম্বইয়ে মান্না দে-র বাড়িতে গেলেন পুলকবাবু। সেখানেই মান্না দে-কে নিয়ে রেকর্ড করিয়ে নেবেন তিনি। বাড়িতে গিয়ে দেখলেন, মান্না দে ছাড়া আর কেউ নেই। আর গায়ক তখন রন্ধনে ব্যস্ত। হেঁসেলে উঁকি মেরে পুলক জিজ্ঞাসা করলেন, “কী রান্না করছো হে।” ব্যস্ত মান্নার হাসি মুখে জবাব, সে তো বলা যাবে না। আগে খাও, তারপর বলবে আমি কী রান্না করেছি। অগত্যা রান্নাঘর থেকে ফিরে এলেন তিনি। ড্রয়িং রুমে বসে খাতা নিয়ে আঁকিবুঁকি কাটতে লাগলেন। মান্না এসে বললেন, কী কোনও গান লিখে ফেললে না-কি! খাতাটা এগিয়ে পুলক বললেন, দেখো তো, পছন্দ হয় কি-না! এখনও কিছু আন্দাজ করতে পারলেন! ওই গান পরবর্তীকালে ‘প্রথম কদমফুল’ ছবিতে সুধীন দাশগুপ্তের সুরে ব্যবহার করা হয়েছিল। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারলেন! হ্যাঁ, আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না...। এমনই প্রতিভাবান গীতিকার ছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।



আরও পড়ুন- সন্তান আর নেই, বিচ্ছেদের পর স্বামীকে বাড়ি থেকে তাড়ালেন সোফিয়া


আজ ২ মে বাঙালির এই কথাশিল্পীর জন্মদিন। তাঁর এই জন্মদিন নিয়ে একটি মজার কথা বলতেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। পয়লা মে মান্না দে-র জন্মদিন। পুলকবাবু বলতেন, সরগমে মা-য়ের পর আসে পা। অর্থাত্ মান্না দে-র সঙ্গে পুলকের নাম অঙ্গাঙ্গিভাবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে, এ কথা তাঁরা আগের থেকেই হয়ত জানতেন।