`কী কুৎসিত আমরা`,পরীমণির পাশে Badhon, `ও সুবিচার পাক`, বললেন Mithila
পরীমণির ঘটনায় Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটালের কাছে নিজেদের মতামত তুলে ধরলেন বাংলাদেশের দুই জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, এবং রাফিয়াত রশিদ মিথিলা।
রণিতা গোস্বামী: মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে গ্রেফতার জনপ্রিয় নায়িকা পরীমণিকে। যা নিয়ে উত্তাল গোটা বাংলাদেশ। শুক্রবার দ্বিতীয় দফার রিমান্ড শেষেও জামিন পাননি অভিনেত্রী। তবে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই তাঁকে নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা, নিন্দার ঝড় উঠেছে। পরীমণির জীবনযাপন নিয়ে কদর্য মন্তব্যের শেষ নেই। তবে আবার পরীমণির সমর্থনেও সুর চড়িয়েছেন বাংলাদেশের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। পরীমণির ঘটনায় Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটালের কাছে নিজেদের মতামত তুলে ধরলেন বাংলাদেশের দুই জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, এবং রাফিয়াত রশিদ মিথিলা।
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা : এই মুহূর্তে আমি বাংলাদেশে নেই, তাই পরীমণির বিষয়টা নিয়ে ঠিক কী কী ঘটে চলেছে, তা বিস্তারিত জানি না। তবে পরীমণিকে নিয়ে যে মিডিয়া ট্রায়াল হচ্ছে, আমি সেটা এক্কেবারেই সমর্থন করি না। যতরকমভাবে ওকে অপদস্থ করা যায়, করা হচ্ছে। পরীমণির ক্ষেত্রে সমস্ত মতামত দুইভাগে বিভক্ত, এটা সব ক্ষেত্রেই হয়। শুধু পরীমণি কেন, ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে এমন যেকোনও মেয়েকে নিয়ে কিছু ইস্যু হলেই মিডিয়া ট্রায়াল শুরু হয়ে যায়। এটা অবশ্য শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর সর্বত্রই হয়ে থাকে। কেউ কিছু করলেই, তাঁর লাইফস্টাইল, ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কিছু খুঁড়ে খুঁড়ে বের করার চেষ্টা হয়। পুরুষতান্ত্রিক দিক থেকে সেটার বিচার করা হয়, যেটা এক্কেবারেই ঠিক নয়। সমাজের সার্বিক উন্নতিতে সংবাদ-মাধ্যমের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। সেটা না দেখে, মহিলা সংক্রান্ত কিছু হলেই তাতে ঝাঁপিয়ে পড়া হয়, এটা কেন? ন্যায়, অন্যায় যা কিছুই ঘটে থাকুক না কেন, তার জন্য দেশের আইন, বিচার-ব্যবস্থা রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে একজন মহিলাকে টেনে এনে বিভিন্ন কিছু লেখালেখি হচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব সমাজের উপর পড়ছে। ইন্ডাস্ট্রিতেও এর খারাপ প্রভাব পড়বে। আশা রাখছি, সুষ্টু তদন্ত হোক, অকারণে যেন মেয়েটির কোনও ক্ষতি না হয়ে যায়। পরীমণি যেন সঠিক বিচার পায়।
আজমেরী হক বাঁধন :
প্রথমত, যদি কেউ অপরাধ করে, প্রথমে সেটা প্রমাণ হতে হবে, সেটার বিচার হবে, তারপর শাস্তি। অপরাধটা কিন্তু অবশ্যই প্রমাণ হতে হবে। অপরাধের মাত্রার কোন পর্যায়ে গিয়ে কারোর শাস্তি হবে, সেটার সিদ্ধান্ত কিন্তু সাধারণ জনগণ নেবে না। যদি তার কোনও অভ্যাস থেকে থাকে, যেটা শারীরিকভাবে কিংবা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তার জন্যও কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। কোনও কিছু সংশোধন করার থাকলেও সেটার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আমরা কেউ নই। কোনও অপরাধ করেছে, এমন সন্দেহে যদি কাউকে গ্রেফতার করা হয়, সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু ন্যায়-বিচার পাওয়ার যে প্রক্রিয়া তা নিশ্চিত করা হলে, কোনও সমস্যাই থাকে না। পরীমণির ক্ষেত্রে যেভাবে তাঁকে ফলাও করে গ্রেফতার করা হয়েছে, যে যে কারণে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে (যেটা আমাদের সামনে এসেছে),তাঁকে যেভাবে দিনের পর দিন রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে, এবং তাঁর বিষয়ে সংবাদ-মাধ্যমে এবং বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়া সাধারণ মানুষ তাঁকে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, সেটা খুবই দুঃখজনক এবং লজ্জার এবং একইভাবে এটা অন্যায়। এটা যে অন্যায়, সেটাই আমরা ভুলে গেছি। এই শিক্ষাটাই আজ সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমরা কারোর ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করতে পারি না, এমনকি আমার সন্তানের জীবনেও নয়। আর আমাদের এই শিক্ষা শুরু হয় পরিবার থেকে। পরিবারে কোনও বাচ্চাকে স্পেস দিতে আমরা শিখি না। কেন অন্যের জীবন নিয়ে মাথাব্যাথা থাকবে? আমাদের নিজেরই তো হাজারটা কাজ থাকার কথা, নিজেকে সংশোধন করার কথা ছিল, দেশ, পরিবারের জন্য কাজ করার কথা ছিল। আমরা কেন চায়ের আড্ডায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষের সঙ্গে মানুষেরই কুৎসা করছি? এটা কিন্তু ভীষণই ভয়ঙ্কর!
আর যেটা দেশের আইন ব্যবস্থার সুষ্ঠু প্রয়োগ যদি হয়, তাহলে তো আমাদের এত আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। আমি দেখেছি, যাঁরা ধর্ষক, খুনি, চোর, ডাকাত, যাঁরা ধর্ম নিয়ে খেলছে, দেশটাকে নিয়ে খেলছে, এত অন্যায় হচ্ছে, সেখানে তো সেই অর্থে কোনও আইনের প্রয়োগ দেখি না। অথচ এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করে, একজন নারীর সঙ্গে এতকিছু অতি মাত্রায় হচ্ছে। আর এটা ও একজন নারী বলেই! পরীমণি যদি কোনও গুরুতর অপরাধ করেও থাকে, সেটার শাস্তি কিন্তু আদালত দেবে। এভাবে ঘটনাটা ঘটে গিয়েছে, যেটা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। আমি তো এই সমাজেই বাস করি, আমার সন্তানও এই সমাজে বাস করে। আমার সঙ্গে হয়নি বলে, এই ঘটনাটা যে আমায় ভাবাবে না, তা কিন্তু নয়। আমি একজন মানুষ হিসাবে ভীষণ লজ্জিত, যে একজন নারীকে এভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। একজন নারীকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করা হচ্ছে। একবার ওঁর মানসিক অবস্থাটা ভাবুন! দিনের পর পর দিন তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে, তাঁর পাশে কেউ থাকছে না। কী ভয়ঙ্কর! আমরা কী কুৎসিত। আমি ভাবতেও পারছি না। ও তো আমারই সহকর্মী, বাংলাদশের জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী। ওর সঙ্গে যেটা হচ্ছে তাতে আমি লজ্জিত, এবং আতঙ্কিত। আমাদের দেশে একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে যে এখানে প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটাতে পারে। পরীর বিষয়ে কী ঘটেছে, তা জানি না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবেও এই সংস্কৃতির শিকার।