নিজস্ব প্রতিবেদন: পরিসংখ্যান বলছে গত ৩ মাসে অ্যাডিনোভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১০টি শিশুর। ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ-এ ইতিমধ্যেই এসেছেন প্রায় ১০০ জন রোগী। বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে ফিরলেও অনেকেই এখনও চিকিৎসাধীন। ফাঁকা নেই শহরের কোনও আইসিইউ। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন এই অ্যাডিনোভাইরাস আগেও ছিল। তবে সম্প্রতি আবহাওয়ার আমূল বদলের কারণেই বেড়েছে প্রাদুর্ভাব। সবমিলিয়ে হঠাৎ এই ভাইরাসের বারবাড়ন্ত চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে চিকিৎসকদের কপালে। তাহলে উপায়? আগাম সতর্ক করছেন শহরের শিশু বিশেষজ্ঞরাই। জেনে নিন পরিস্থিতি সামাল দেবেন কীভাবে । 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কী এই অ্যাডিনো ভাইরাস?
সোয়াইন ফ্লু বা অন্যান্য ভাইরাল ফিভারের মতোই একটি ভাইরাস সংক্রমণ এটি। উপসর্গও প্রায় একই। তবে পার্থক্য, এখনও কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ বা টিকা নেই এই অ্যাডিনোভাইরাসের। চিকিৎসা বলতে শুধুই সাপোর্টিভ কেয়ার। 


উপসর্গ: শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমলেই থাবা বসাচ্ছে অ্যাডিনোভাইরাস।  প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণ ফ্লু-এর মতোই জ্বর, হাঁচি, সর্দি-কাশি, চোখ জ্বালা, ডাইরিয়া, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়ে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছে রোগীর। কোনও কোনও ক্ষেত্রে উপসর্গ থাকছে ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর্যন্ত। চরম পরিণতি ফুসফুসের সংক্রমণ এবং মৃত্যু। ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থের চিকিৎসক প্রভাস প্রসূন গিরি জানাচ্ছেন, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তাঁরাই শেষ পর্যন্ত জুঝতে সক্ষম হচ্ছে এই ভাইরাসের সঙ্গে। 


ঝুঁকিতে কারা: এক্সট্রিম এজগ্রুপ অর্থাৎ শিশু (১ মাস-৩ বছর) এবং বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি, কারণ এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। স্কুল, খেলার মাঠ, সুইমিংপুলে অন্য কোনও বাচ্চার হাঁচি-কাশি থেকে ছড়িয়ে পড়ছে এই সংক্রমণ। 


আরও পড়ুন: কলকাতায় অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত কয়েকশো শিশু


চিকিৎসা কী: পিসিআর (polymerase chain reaction) টেস্ট করে অ্যাডিনোভাইরাস চিহ্নিত করা গেলেও এই ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ নেই। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুদীপ মাইতি এবং ডাঃ প্রভাস প্রসূন গিরি বলছেন, উপসর্গ দেখেই চলছে চিকিত্সা। এই রোগের চিকিৎসার একমাত্র উপায় লাইফ সাপোর্টিভ কেয়ার। অর্থাৎ পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (Picu)-এ রোগীতে ভর্তি করতে হবে।


শহরের কোথায় মিলবে চিকিৎসা: কলকাতার সমস্ত সরকারি হাসপাতালে অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্তের চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলেও প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াগনোসিসের ব্যবস্থা নেই শহরের কোথাও। ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ, পিয়ারলেস, অ্যাপোলো, ইএমআরআই, স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের মতো শহরের বাছাই করা কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালেই রয়েছে পিসিআরের ব্যবস্থা।


খরচ কত: যথেষ্ট ব্যয়বহুল এই পিসিআর টেস্ট। ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে এর জন্য খরচ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। বেসরকারি হাসপাতালে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপিকা ডাঃ কল্পনা দত্ত জানাচ্ছেন, শহরের সরকারি হাসপাতালগুলিতে উন্নতমানের চিকিৎসা পরিসেবা, পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট থাকলেও পিসিআর টেস্ট হয় না কোথাও। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষার জন্য ট্রপিক্যাল মেডিসিন বা NICED (National Institute of Cholera and Enteric Diseases) -এ পাঠানো হয়। 


বাবা মায়েরা সতর্ক হোন


শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুদীপ মাইতি জানাচ্ছেন হাইড্রেশন এবং আইসোলেশনই একমাত্র উপায়। অর্থাৎ উল্লেখিত যেকোনও উপসর্গ দেখা দিলেই তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আক্রান্ত শিশুর স্কুল যাওয়া বা খেলতে যাওয়া বন্ধ রাখুন। নয়তো বাকিদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এই ভাইরাস। এছাড়াও প্রচুর পরিমানে জল, স্বাস্থ্যকর খাবার রাখুন আপনার শিশুর ডায়েটে। খেয়াল রাখবেন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলেও অ্যাডিনোভাইরাসের সঙ্গে জুঝতে পারবে আপনার খুদে।