উপসর্গ প্রকাশের ১৮ ঘণ্টা আগেই ছড়াতে শুরু করে করোনা; ধরা পড়ে না র্যাপিড টেস্টেও!
জেনে নিন এ বিষয়ে কি বলছেন মোহালির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধ্যাপক ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডঃ ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়...
সুদীপ দে: কোনও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি, গলা ব্যথা শুরু হওয়ার আগেই তাঁর থেকে সংক্রমিত হতে শুরু করে শুরু করে এই ভাইরাস! সম্প্রতি একদল গবেষকের এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি সামনে এসেছে।
সম্প্রতি ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে করোনাভাইরাসের ‘ইনকিউবেশন’ পর্ব সম্পর্কিত একটি গবেষণাপত্রের উল্লেখ করা হয়েছে। এখানেই করোনা সম্পর্কে এই নতুন তথ্যটি সামনে এসেছে। এই গবেষণাপত্রের গবেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, সংক্রমণের স্বাভাবিক উপসর্গগুলি প্রকাশ না পাওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতেও পারেন না। বুঝতে পারা তো দূরের কথা, গবেষকরা জানিয়েছেন এই সময় আক্রান্ত ব্যক্তির র্যাপিড টেস্ট করা হলেও করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে না!
ওই গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে, মোট ৯৪ জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে মোট ৪১৪ বার লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আক্রান্তের মধ্যে করোনার উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার দিন থেকে ৩২ দিন পর্যন্ত লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন, শুরুর দিকে ভাইরাসের আগ্রাসন, সংক্রমিত হওয়ার গতি (ভাইরাল লোড) সবচেয়ে বেশি থাকে। ২০ দিন পরে ভাইরাসের আগ্রাসন ও সংক্রমিত হওয়ার গতি সবচেয়ে কম থাকে। তবে Covid-19 পুরোপুরি নির্মূল হয় সংক্রমিত হওয়ার ৩৭ দিনের মাথায়। এমনটাই দাবি করা হয়েছে ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে।
‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিশ্লেষণকে সমর্থন জানিয়ে ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডঃ ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ক্রমাগত চরিত্র বদল করে চলেছে Covid-19। ইদানীং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই র্যাপিড টেস্টেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তাই ধরা পড়ছে না!
মোহালির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধ্যাপক ডঃ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান, চিনে প্রায় ৪৪ শতাংশ করোনা আক্রান্তের শরীরে ভাইরাস সংক্রমণের কোনও উপসর্গই ছিল না। করোনাভাইরাসের এই ‘গা ঢাকা’ দিয়ে সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি অর্থাৎ এই ‘প্রি-সিম্পটোম্যাটিক ট্রান্সিমিশন’ই চিন্তা বাড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন: মশার কামড় থেকেও কি সংক্রমিত হতে পারে করোনাভাইরাস? জানালেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞ
ডঃ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ভাইরাসের উপসর্গগুলি কতদিনে প্রকাশ পাবে তা আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। অ্যান্টিবডি টেস্ট নয়, র্যাপিড অ্যান্টিজেন ডিটেকশন টেস্টেই (RADT) ধরা পড়তে পারে করোনা সংক্রমণ।”
ডঃ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন বা লকডাউন যথেষ্ট নয়। চাই বাড়তি সতর্কতা। আরও র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের প্রয়োজন। তবে ভারতের জনসংখ্যা এবং চিকিৎসা পরিকাঠামোর নিরিখে সকলের ঘন ঘন র্যাপিড টেস্ট করাটা অসম্ভব, তা মেনে নিয়েছেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডঃ বন্দ্যোপাধ্যায়।