একটু ভয় পান মানুষ, সেটা খারাপ নয়; এবং টিকাটা অবশ্যই নিন, বললেন শহরের বিশিষ্ট Immunologist
করোনার এই `সেকেন্ড ওয়েভে` টিকা নেওয়া থাকলে অ্যাডভান্টেজ, মত বিশেষজ্ঞের।
নিজস্ব প্রতিবেদন: আশার আলো আছে। করোনার এই সেকেন্ড ওয়েভের সবটাই ঘোর অন্ধকার নয়। আলো দেখতে পেয়েছেন 'ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজি ইন কলকাতা'র সিনিয়র ইমিউনোলজিলস্ট ড. দীপ্যমান গাঙ্গুলি।
আশা বলতে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নতুন ভ্যারিয়ান্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার অবকাশ। ড. গাঙ্গুলি বলছেন, টিকা নেওয়া থাকলে অনেকটা নিরাপদ। যেমন, যেসব বয়স্ক মানুষের এরই মধ্যে টিকার দু'টি ডোজই নেওয়া হয়ে গিয়েছে, এবারে তাঁদের ফের আক্রান্ত হয়ে পড়ার সংখ্যা অনেক কম।
আরও পড়ুন: ডবল মিউট্যান্ট করোনাভাইরাসের প্রতিরোধে সক্ষম COVAXIN: ICMR সমীক্ষা
প্রশ্ন. নতুন স্ট্রেনের বিরুদ্ধে শারীরিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিষয়ে কী বলা যেতে পারে?
দীপ্যমান গাঙ্গুলি. করোনার ভবিতব্য নিয়ে খুব নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা কঠিন। খুবই আনপ্রেডিক্টেবল। এটুকু বলতে পারি, এখনও যা পরিস্থিতি প্যান্ডেমিক হয়তো এন্ডেমিকে গিয়ে শেষ হবে।
প্র. এখনও পর্যন্ত এই দ্বিতীয় ঢেউয়ে re-infections-এর খবর তেমন শোনা যাচ্ছে না। ব্যাপারটা কী?
দী. গা. সেটা বেশ আশাজনক ব্যাপার। এর থেকে মনে হচ্ছে, একবার ইনফেকশন হলে প্রায় বছরখানেক ইমিউনিটি থেকে যায়। এছাড়া ভ্যাক্সিনের দু'টি ডোজ পেয়ে তারপর ইনফেকশন হয়েছে সেটাও তেমন শোনা যাচ্ছে না। তার মানে ভ্যাক্সিনও কাজ করছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা আত্মতুষ্টি এসে গিয়েছিল। তার ওপর চরিত্র বদল হয়ে যাওয়া কিছু ভাইরাসও আছে। তার ফলে এই হাল।
প্র. কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের (covid second wave) মধ্যে বিশেষত্ব কী রয়েছে?
দী. গা. এবারের newly emerging variant strains-এক ট্রান্সমিশন রেট হাই। ফলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এখনই হাসপাতালগুলিতে বাফার প্রায় মার্জিনে। এভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে একটা সময় কিন্তু মানুষকে বিনা চিকিৎসায় থাকতে হবে! সেটা মাথায় রেখেই মানুষকে সচেতন হতে হবে।
প্র. মানুষ কী ভাবে চলবে?
দী. গা. প্রথমবার বলা হচ্ছিল করোনা থেকে নতুন প্রজন্মের অত ভয় নেই। এবার সেই মিথ ভেঙে যাচ্ছে। এবারে কিন্তু কমবয়সিরা আক্রান্ত হচ্ছেন। আসলে এর একটা কারণ অবশ্যই এখনও পর্যন্ত তাঁদের টিকা না পাওয়াটা। এর সঙ্গে আছে একটু উদাসীনতা। আত্মতৃপ্তি, যে, আমাদের তো কিছু হবে না। ফলে দেখা যাচ্ছে, এই ধরনের রোগ থেকে বাঁচতে একটু ভয় পাওয়া দরকার। মানুষ এক্ষেত্রে বরং একটু ভয় পান, সেটা ভাল। ভয় পেলে সাবধানে থাকবেন।
আসলে আগের বার লকডাউন (lockdown) ছিল। মানুষের মনে ভয়ও ছিল। ভয় পেয়েই তারা অনেক কিছু মেনেছে। অথচ সেবার টিকা ছিল না। আর এবার টিকা আছে, তবু সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কারণ, এবার লকডাউন নেই। এবং মানুষের মনে ভয়ও নেই।
প্র. শুধু টিকা (vaccine) নিলেই তা হলে চলবে?
দী. গা. টিকা নিলেই শুধু হবে না। টিকা তো নিতেই হবে। পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে যেসব সুরক্ষাবিধি (Covid protocol) পালন করার কথা বলা হয়েছে, যেমন মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং রক্ষা করা ইত্যাদি সমান তালে মেনে চলতে হবে। এই সমস্ত বিষয়গুলি মেনে চললে তবেই করোনার সংক্রমণ কমবে।
আগের বারে একটা কথা বলা হচ্ছিল, 'ফ্ল্যাটেন দ্য কার্ভ'। সেবার কিন্তু সংক্রমণের এই লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়তে থাকাটাকে একটা সময়ে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছিল। এবারে সেই 'কার্ভ' একেবারে 'স্টিপ' হয়ে রয়েছে। এবার এটা 'ফ্ল্যাটেন' করা কঠিন হবে যদি না মানুষ সচেতন হন।
আরও পড়ুন: Covid 19: একা ডবল মিউট্যান্টে রক্ষা নেই, হাজির ট্রিপল মিউট্যান্ট, মিলল বাংলাতেও