‘অমাবস্যার মতো রাত, অন্ধকার ভেদ করে ফিরবেই শুভদিন’, বারো বছরের শ্রীনিতার কবিতায় করোনা আতঙ্ক
সময় যত গড়িয়েছে করোনার করাল জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়েছে গোটা বিশ্ব। মুহূর্মুহু খবর আসছে মৃত্যুর। দেশ, রাজ্য এমনকি কসবার নিজের এলাকাও করোনার গ্রাসে
নিজস্ব প্রতিবেদন: গরমের ছুটির আগেই স্কুল ছুটি পড়ে গিয়েছে। কবে খুলবে জানা নেই। অফুরন্ত সময়। অনাবিল আনন্দ। বারো বছরের শ্রীনিতার প্রথম প্রথম মনে হয়েছিল, করোনা যেন আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ! চাইতে না চাইতেই সব কিছু ঢেলে দিয়েছে সে। বাবাও কতদিন পর বাড়িতে। বেশ কাটচ্ছিল গার্ডেন হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শ্রীনিতার।
সময় যত গড়িয়েছে করোনার করাল জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়েছে গোটা বিশ্ব। মুহূর্মুহু খবর আসছে মৃত্যুর। দেশ, রাজ্য এমনকি কসবার নিজের এলাকাও করোনার গ্রাসে। শ্রীনিতার বাবা রাজকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সারাক্ষণ নিউজ চ্যানেল খুলে বসে রয়েছেন। শিপিংয়ে মার্কেটিং বিভাগে রয়েছেন তিনি। লকডাউনের পর বাড়িতেই থাকতে হচ্ছে তাঁকে। নিউজ চ্যানেলের ঝাঁঝালো খবরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে শ্রীনিতার পড়ার টেবিলে। করোনার আতঙ্ক, অর্থনীতির বেহাল দশা, মৃত্যু মিছিল অতটুকু মাথায় না ঢুকলেও শ্রীনিতা বুঝতে পারছে, তাঁর চারপাশের পরিবেশ ক্রমশ বিষ হয়ে উঠছে। এমন ছুটি তো সে চায়নি। ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে তার মন।
আরও পড়ুন- 'বন্ধুর' আর্তি ফেরালেন না, আমেরিকায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন পাঠিয়ে পাশে থাকার বার্তা মোদীর
ছোট্ট মনে ভিড় করছে হাজারো প্রশ্ন। আশঙ্কা স্কুল কি খুলবে। তার বন্ধুরা কেমন আছে। ফোনে দু-একটা কথা হলেও, করোনা নিয়ে তার কৌতূহল, প্রশ্ন, ফোনেই কি বন্ধুদের শেয়ার করা যায়! তাই, তার মনের কথা সাদা পাতায় লিখে ফেলল শ্রীনিতা। যে আনন্দ নিয়ে শুরু হয়েছিল নতুন বছর, আজ তা কেমন পাল্টে গেছে। এই সময়টাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে খুদে শ্রীনিতার মনে হয়েছে অমাবস্যার মতো অন্ধকার রাতের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছি আমরা। দারিদ্র, মৃত্যু ভিড় করে আসছে। এক প্রবল ঝড়ে নিভিয়ে দিচ্ছে আশার আলো। প্রচণ্ড কষ্ট, রাগ হচ্ছে তা বলে আশাহত নয় শ্রীনিতা। অন্ধকার ভেদ করে একদিন শুভদিন আসবেই, স্বপ্নের জলোচ্ছ্বাসে আমরা সবাই ভাসবো। এমনটাই মনে করে শ্রীনিতা।
শ্রীনিতার মা সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, এখন যেন কেমন গুম হয়ে থাকে মেয়ে। ওকে বলেছিলাম, মনের কথা লিখে জানাস..কিন্তু ওর মনের ভিতর এমন ঝড় বইছে, কে বা জানতো!