Afghanistan: আফগান মেয়েরা অ্যাস্ট্রোনট হওয়ার স্বপ্নও দেখতেন-- বললেন কাবুল-ফেরত তমাল
যে পাঁচ মাস তমাল ভট্টাচার্য কাবুলে কাটিয়েছেন, সেটা তাঁর কাছে এক অমর স্মৃতি।
সৌম্যাদিত্য মুখোপাধ্যায়
আতঙ্কের আফগানিস্তান থেকে অবশেষে দেশে ফেরা। বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে দিল্লি। রাতের দিকে কলকাতায় তমাল ভট্টাচার্য।
নিমতার ওলাইচণ্ডীতলার বাসিন্দা তমাল ভট্টাচার্য পেশায় শিক্ষক। পড়ানোর কাজ নিয়েই কাবুলে গিয়েছিলেন। কাবুলে পা রেখেছিলেন ১৫ মার্চ। তাঁর স্কুলের নাম 'কারদান ইন্টারন্যাশন্যাল স্কুল'। তিনি ওখানে হায়ার সেকেন্ডারিতে অ্যাডভ্যান্স ম্যাথেমেটিক্স, ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রি পড়াতেন।
যখন আফগানিস্তানের একের পর এক প্রদেশের দখল নিচ্ছিল তালিবান, তখন থেকেই তাঁকে নিয়ে তাঁর পরিবারের উৎকণ্ঠা বাড়ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তমাল নিরাপদেই দেশে ফিরেছেন। স্বস্তিতে তাঁর পরিবার।
আরও পড়ুন: Afghanistan: অবশেষে দেশে ফেরা, দিল্লি হয়ে কলকাতায় পৌঁছলেন নিমতার তমাল ভট্টাচার্য
তাঁর ফিরে আসার সময়ে আফগানিস্তানে পরিস্থিতি ঠিক কেমন?
তমাল ভট্টাচার্য জানান-- কাবুলে কোনও যুদ্ধ হয়নি। একটাও গুলি চলেনি। খুব শান্তিপূর্ণভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে। ১৫ অগস্ট যখন স্কুল থেকে ফিরছি, হঠাৎই দেখলাম রাস্তায় সবাই ছোটাছুটি করছেন! কী ব্যাপার? কিছুক্ষণ পর কয়েকজন পুলিস অফিসার এসে বলেন, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যান, তালিবান আসছে।
তালিবান জমানার আগে আফগানিস্তানের সামাজিক পরিবেশ নিয়ে তমাল জানান, তালিবানের কাছে মহিলাদের অধিকার বা উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট ব্যাপারটারই কোনও গুরুত্ব নেই। তবে এর আগে, গত ২০ বছরে সেখানে জীবন ছিল মুক্ত ও স্বাধীন। আফগান মেয়েদের অধিকার দারুণ ভাবে সুনিশ্চিত হয়েছিল সেখানে। সে দেশের মেয়েরা প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই সম্মানের সঙ্গে কাজ করছিলেন। সমস্ত 'সেকটরে'ই মেয়েদের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানের ইচ্ছা ও স্বপ্ন দেখা যাচ্ছিল। ওখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও যথেষ্ট সংখ্যক মহিলা শিক্ষক ছিলেন।
ওখানকার স্টুডেন্টরাও খুব ফোকাস্ড। বাচ্চা-বাচ্চা মেয়েরা জীবনে কিছু করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাদের অনেক-অনেক স্বপ্ন। একটা দেশ গড়ার জন্য যেটা ভীষণ জরুরি। ওরা কেউ অ্যাস্ট্রোনট হতে চায়, কেউ সায়েন্টিস্ট বা ইকোনমিস্ট, কেউ আবার এমপি-এমএলএ হওয়ার স্বপ্নও দেখত!
তমালবাবুদের স্কুলটা ছিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। এটি আফগানিস্তানের প্রথম এবং সব থেকে বড় ডিজিটাল স্কুল। এদের পড়াশোনাটাও ছিল পুরোপুরি ডিজিটাল। বাচ্চাদের পড়ানোর ক্ষেত্রে তাঁদের নানা ডিভাইস ব্যবহার করতে হত। বাচ্চারা ইউটিউব ভিডিয়োর মাধ্যমে পড়তে আগ্রহও বোধ করত। ভিসুয়ালি বিষয়টি খুব আকর্ষণীয়। পড়াশোনাটা তাই অনেক বেশি আদানপ্রদাননির্ভর ও ফলপ্রসূ হত। তাঁর স্কুলে ক্যালিফোর্নিয়া স্ট্যান্ডার্ড এবং এনজিএসএস ফলো করা হত, দু'টিই আমেরিকান সিস্টেম এবং তমালবাবুর মতে, 'ওয়ান অফ দ্য বেস্ট ইন দ্য ওয়ার্ল্ড'।
শিক্ষকতার পাশাপাশি আফগানিস্তানের জনজীবনও দেখেছেন তিনি। তবে তা অল্প। নিজেদের চৌহদ্দির বাইরে খুব বেশি দূর যেতে পারতেন না তাঁরা। তাঁরা যে অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন সেখানকার সিকিউরিটি পার্সোনেল তাঁদের বেশিদূর যেতে নিষেধ করতেন। ফলে ওই কাছাকাছি দোকান-টোকানেই যতটুকু যা যেতে পারতেন তাঁরা। সেখানে তাঁর দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, আফগানরা খুবই অতিথিপরায়ণ। তিনি যে দোকানে যেতে শুরু করলেন, সেখানে দোকানদার তাঁর কাছ থেকে জিনিসের দাম নিতে চাইতেন না। তমাল অবশ্য বাধ্য হয়ে বলেছিলাম, এরকম করলে তিনি আর ওই দোকানে যাবেন না! তমাল জানান, ওই দোকানের মানুষজন তাঁদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করতেন। রাত্রে কোনও জিনিস দরকার পড়লে ওঁরাই দিয়ে যেতেন। তমালদের বলতেন, আপনারা বেরোবেন না।
এত দ্রুত আফগানিস্তান তালিবান-অধিকারে চলে গেল কী করে জানতে চাওয়া হলে, তমাল জানান
US Troop ফিরে গেলে আফগানিস্তান যে খুব তাড়াতাড়িই দখল হয়ে যাবে, এরকম একটা অনুমান ছিলই। তবে সেটা যেন একটু বেশিই দ্রুত হল। কাবুলে একটিও গুলি চলেনি, ক্ষমতা হস্তান্তর খুব পিসফুলি হয়েছে বলেই জানান তিনি। তবে এটা কী ভাবে এত সমৃণ ভাবে হল জানতে চাওয়া হলে তমাল ঘটনাক্রমের কোনও বিশ্লেষণে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। বলেন, এটা পলিটিক্যাল ব্যাপার। এর উত্তর তাঁর দেওয়া ঠিক হবে না।
এখন সেখানে যা-ই চলুক, তমাল তালিবান-পূর্ব আফগানিস্তান নিয়ে খুবই আবেগবিহ্বল। তিনি বলেন, আফগানিস্তান চিরকাল তাঁর হৃদয়ে থেকে যাবে। ওখান থেকে চলে আসার সময়ে তিনি খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন বলে স্বীকার করেন। বলেন, যে পাঁচটা মাস তিনি ওখানে কাটিয়েছেন, সেটা তাঁর কাছে একটা অমর স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে। ফিরে আসতে বাধ্য হয়ে তিনি খুবই দুঃখিত হয়ে পড়েছেন। দুঃখিত হয়ে পড়েছেন আফগান বাচ্চাগুলির জন্য। ওদের মুখগুলো বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে তাঁর। মনে পড়ছে ওখানকার হতভাগ্য মানুষগুলির মুখও, যাঁরা সকলে মিলে চেষ্টা করে একটা নতুন আফগানিস্তান গড়ে তুলতে চাইছিলেন।
(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)
আরও পড়ুন: 'চাকরি ও জীবনের সুরক্ষা দিলে অবশ্যই ফেরত যাব আফগানিস্তানে': বললেন কাবুল ফেরত তমাল