নিজস্ব প্রতিবেদন: কয়েকঘণ্টার ব্যবধানে জন্ম-মৃত্যুর সাক্ষী থাকার এক মর্মন্তুদ অভিজ্ঞতার শিকার হলেন এক মা। এখানে এই 'মা' শব্দটির আগে (বিশেষণ হিসেবে) 'হতভাগ্য' না 'সৌভাগ্যবতী'-- কোন শব্দটি বসানো উচিত হবে, সেটাই এই মুহূর্তে সব চেয়ে কঠিন জটিল প্রশ্ন।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা মেলে না! অশ্রুতে যার হিসাব মেলে না! আনন্দে যার পরিমাপ হয় না! এ এমনই এক অ-ভূতপূর্ব পরিস্থিতি, যে কখনও এর মধ্যে পড়েনি, সে ছাড়া এর ভিতরের আলো-অন্ধকার কেউ অনুভব করতে পারবে না।


আরও পড়ুন: By-poll: ভবানীপুরে তুঙ্গে নিরাপত্তা, সতর্ক লালবাজার


ভেঙে পড়া বাড়ির মধ্যে চাপা পড়ে মারা গেল যে-মায়ের এক কন্যাসন্তান, সেই মা-ই আবার কয়েকঘণ্টা পরে জন্ম দিলেন আর এক কন্যাসন্তানের! যে হারিয়ে গেল তার জন্যে তিনি এখন কাঁদবেন, নাকি এই ভরা বিপর্যয়ের মাঝখানে কোল আলো করে যে এল তাকে নিয়ে খুশিতে ফেটে পড়বেন?


এতক্ষণে আহিরীটোলার ভেঙে-পড়া বাড়ির ঘটনা সকলে জেনে গিয়েছেন। জেনে গিয়েছেন রাতভর বৃষ্টির জেরে আজ, বুধবার সকালে ১০ নম্বর আহিরীটোলা স্ট্রিটের পুরনো ওই বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বাড়িটিতে বাসিন্দা ছিলেন মূলত ৪ জন-- সুশান্ত ঘোড়ুই, প্রিয়াঙ্কা ঘোড়ুই; তাঁদের একমাত্র মেয়ে বছরদুয়েকের (মতান্তরে বছরতিনেকের) সৃজিতা ঘোড়ুই এবং সৃজিতার দিদা বৃদ্ধা চম্পা গড়াই। বাড়ি ভেঙে পড়লে সকলেই আটকে পড়েন। পরে সকলকে উদ্ধার করা হয়। ছোট্ট সৃজিতা এবং তার দিদা চম্পা গড়াই মারা যান। সুশান্ত-প্রিয়াঙ্কাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সুশান্তকে চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। জানা গিয়েছে, তাঁর 'অ্যাডভান্সড স্টেজ' চলছিল। তিনি আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আজ, বুধবারই এক কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন। অর্থাৎ, সকালে যিনি এক ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় তাঁর বড় মেয়েকে হারালেন, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই তিনিই তাঁর আর এক কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন!  


এক চাষির গল্প ছিল-- সকালে উঠে ঘুম থেকে উঠে সে জানল তার ছেলে মারা গেছে। বাড়িশুদ্ধ লোক কাঁদছে, চাষির বউ আছাড়িৃপিছাড়ি খাচ্ছে পুত্রশোকে। কিন্তু চাষি গুম মেরে বসে আছে। তা দেখে চাষি বউ অনুযোগ করে বলে-- হ্যাঁ গো, তুমি কী পাষাণে গড়া, জলজ্যান্ত ছেলেটা মরে গেল, তোমার চোখে এক ফোঁটা জল নেই! চাষি মনমরা অবস্থাতেই জানায়, রাতে সে স্বপ্ন দেখেছিল, সে সাতছেলের বাপ হয়েছে আর তারা সব রাজা-রাজড়া হয়েছে, অঢেল ধনসম্পত্তি হয়েছে। কিন্তু ঘুম ভাঙতেই তার সেই স্বপ্নও ভাঙল। বউকে সে প্রশ্ন করে, এখন সে ভাবছে, সে ওই সাত ছেলের জন্য কাঁদবে, না এই এক ছেলের জন্য কাঁদবে?
   
এখানে গল্পটা অবশ্য একপেশে মৃত্যুরই নয় শুধু; এখানে মৃত্যুর পাশে জন্মের একটা শুভ-যোগও আছে। মা সততই সন্তানবতী হয়ে খুশি হন। মাতৃত্বের অমৃত-স্বাদ তার জীবনের মাধুর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আহিরীটোলার প্রিয়াঙ্কা ঘোড়ুই যখন সন্তানজন্মের মতো এক বিরল আনন্দের মুখোমুখি হলেন, তার কিছুক্ষণ আগেই তিনি তার এক কন্যাসন্তানের মৃত্যুসংবাদ পেয়েছেন। মৃত্যুর বিষসংবাদ এসে ঢেকে দিয়েছে জন্মের অমৃতগানকে। এক সন্তানের জন্ম দিয়ে অন্য় সন্তানের মৃত্যুকে 'ব্যালান্স' করা যায়, করা সম্ভব? এক সদ্য়োজাতকে কোলে নিয়েও অন্য সন্তান হারানোর হাহাকার কি কুরে কুরে খাবে না প্রিয়াঙ্কার অন্তরের অন্তঃস্থল? 


আপাতত, জানা যাচ্ছে, ভেঙে পড়া এই বাড়িটির মতোই কলকাতা শহরে অনেকগুলিই বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। সংখ্যাটা মোটামুটি আড়াই হাজার। এই বাড়িগুলিতে এখনও বহু মানুষ বসবাস করেন। এগুলির অধিকাংশ বাড়িই নানা ধরনের মামলা-মোকদ্দমায় ফেঁসে আছে। ফলে বাড়িগুলি থেকে বাসিন্দাদের সরানো যাচ্ছে না। এর অর্থ, আগামি দিনেও এ ধরনের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টির মরসুমে এর আগেও এ  শহরে ভেঙে পড়েছে এরকম দুর্দশাগ্রস্ত বাড়ি। এই সেপ্টেম্বরেই ভেঙে পড়েছে বড়বাজারের একটি বাড়ি। কয়েকমাস আগে শিয়ালদহের একটি বাড়ির একাংশও ভেঙে পড়েছিল। এখনই বিষয়টি নিয়ে কোনও যথাযথ সিদ্ধান্ত না নিলে শহরের কপালে কিন্তু দুঃখ আছে!


(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)


আরও পড়ুন: Heavy Rainfall: টানা বৃষ্টিতে আহিরিটোলায় ভাঙল বাড়ি, মৃত শিশু, আহত ৩