জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: পশ্চিমবঙ্গ সরকার এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর ২০২২ এর মধ্যে ১৬০ মিলিয়ন মিড ডে মিল বেশি রিপোর্ট করেছে যার পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি পর্যালোচনা কমিটি বলেছে, সুবিধাভোগীদের সংখ্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে তারা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক জানুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গে পরিদর্শন করার জন্য একটি যৌথ পর্যালোচনা মিশন (JRM) গঠন করে। এই মিশন মিড ডে মিল প্রকল্পের বাস্তবায়নের বিষয়টি পর্যালোচনা করেছে। এই প্রকল্পটি পিএম পোষণ নামে পরিচিত।


পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা ভারতীয় জনতা পার্টির শুভেন্দু অধিকারী কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে এই বিষয়ে একটি চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠি লেখার কয়েকদিন পরেই এই প্যানেলটি গঠিত হয়েছিল। চিঠিতে বিরোধী দলনেতা অভিযোগ করেন যে মিড ডে মিল প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ তহবিল পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস অপব্যবহার করছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের ৬০ শতাংশ টাকা দেয় এবং রাজ্য সরকার দেয় বাকি ৪০ শতাংশ।


 



গত ২৪ মার্চ নিজের রিপোর্ট জমা দেয় এই রিভিউ মিশন। জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল এই রিপোর্ট থেকে জেনেছে যে রিভিউ মিশন তাঁদের রিপোর্টে লিখেছে যে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল বিভিন্ন স্তরে স্কুলে এনরোল করা পড়ুয়াদের গড়ে ৯৫ শতাংশকে মিড ডে মিল দেওয়া হয়। যদিও জেআরএম জানিয়েছে যে তাঁদের দেখা স্কুলগুলিতে মাত্র ৬০ থেকে ৮৫ শতাংশ পড়ুয়া প্রতি বছরে এই মিড ডে মিল নেয়। তাঁরা আরও জানিয়েছে যে জেআরএম রাজ্যে বিভিন্ন স্কুলে আসার ঠিক আগের ১০ দিনে গড়ে মাত্র ৫২ শতাংশ পড়ুয়া এই মিড ডে মিল নিয়েছে।


কেন্দ্রীয় সরকারের লেখা চিঠিতে আরও জানা গিয়েছে রাজ্য সরকার তাঁদের প্রথম এবং দ্বিতীয় কোয়ার্টারের রিপোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছে যে পিএম পোষণের অধীনে ১৪০.২৫ কোটি মিল সার্ভ করা হয়েছে। অন্যদিকে জেলাস্তর থেকে রাজ্যকে পাঠানো কিউপিআরে জানানো হয়েছে যে ১২৪.২২ কোটি মিল সার্ভ করা হয়েছে। ফলত প্রায় ১৫ কোটি মিল বেশি সার্ভ করা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে রাজ্যের পাঠানো রিপোর্টে। তাঁরা আরও জানিয়েছে যে এই ১৬ কোটি অতরিক্ত মিলের খরচ ১০০ কোটি টাকার বেশি।


এই রিপোর্টে বলা হয়েছে রাজ্য সরকারকে দেওয়া নিজের রিপোর্টে বীরভূমের জেলা শাসক জানিয়েছেন যে পিএম পোষণ প্রকল্পের টাকা ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট, ২০০৫ এর আওতায় ব্যবহার করা হয়েছে। ২১ মার্চ ২০২২ তারিখে ঘটা অগ্নিকান্ডে ২৪ মার্চ তারিখে এই ফান্ড থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। সেখানে আরও বলা হয়েছে যে পিএম পোষণ প্রকল্পে এই টাকা রাজ্য প্রশাসনের প্রধানের তরফে ফেরানো হয় ২৮ মার্চ তারিখে। যদি এই ট্রানজাকশনের স্বপক্ষে কোনও ডকুমেন্ট দেওয়া হয়নি। ক্যাগের মাধ্যমে এই ঘটনার তদন্তের কথাও বলা হয়েছে রিপোর্টে।


রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে স্কুলগুলিতে এই জেআরএম গিয়েছিল সেখানে তারা দেখেছে যে পরিমাণ ভাত রান্না হওয়া উচিত তার থেকে ৭০ শতাংশ কম এবং যে পরিমাণ ডাল রান্না হওয়া উচিত তার থেকে ৬০ শতাংশ কম ডাল রান্না করা হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে যে ভিজিট করা স্কুলগুলির ৪৭ শতাংশে প্রেস্ক্রাইবড পরিমাণের তুলনায় কম তেল ব্যবহার করা হয়েছে এবং ২৭ শতাংশ স্কুলে উপযুক্ত পরিমাণের তুলনায় কম সবজি রান্না করা হয়েছে।


১৩ তম জয়েন্ট রিভিউ মিশন ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের আটটি জেলার বিভিন্ন স্কুলে পরিদর্শন করে। এই জেলাগুলি হল উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪  পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, নিউ জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, মালদহ, আলিপুরদুয়ার, এবং পুরুলিয়া। তারা পর‍্যা, অভিভাবক, রাঁধুনি, রাঁধুনির সহকর্মী সহ জেলা এবং ব্লক স্তরের আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন বলেও জানা গিয়েছে।


আরও পড়ুন: First Merto Reck runs under Ganga: গঙ্গার তলা দিয়ে প্রথম চলল মেট্রো রেক, পৌঁছল হাওড়া ময়দান


 



রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ট্যুইট করে লিখেছেন, ‘আগেই বলেছি, মমতা  ছাত্রদের প্লেট থেকেও চুরি করতে দ্বিধা করে না। একটু ভাবুন যদি তারা একটি আর্থিক বছরের ২ কোয়ার্টার থেকে ১০০ কোটি টাকা চুরি করে, তাহলে গত ১২ বছরে তারা কতটা চুরি করেছে? বিশ্বব্যাংক সরকার শাসনের নামে দিবালোকে ডাকাতি করছে।‘



আরও পড়ুন: Kolkata Lift Accident: মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কলকাতায়, লিফট ভেঙে মৃত্যু লিফটম্যানের


বিজেপি নেতা অমিত মালব্য ট্যুইটে লিখেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারে দুর্নীতি ব্যাপক। এমনকি তার প্রশাসন প্রধানমন্ত্রী পোষণ তহবিলও ছাড়েনি। রাজ্য ও কেন্দ্রের যৌথ পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে পশ্চিমবঙ্গ অন্য উদ্দেশ্যে ১০০ কোটি টাকা সরিয়েছে! শিশুদেরকে কম খাওয়ানো হয়েছে। সরবরাহ কাটা হয়েছে। বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধকারি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন'।


যদিও এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে ট্যুইট করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।


 



নিজের ট্যুইটে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমার প্রতিক্রিয়া হচ্ছে যে এই JRM রাজ্য সরকারের একমাত্র প্রতিনিধি রাজ্য অধিকর্তা, কুকড মিড ডে মিল-এর সই ছাড়াই এই রিপোর্টটি জমা দিয়েছে। সেই রিপোর্টটা যদি রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিকে দেখানো পর্যন্ত না হয়, তাহলে Joint Review Mission অর্থাৎ যৌথ পর্যালোচনা কমিটি-র ‘যৌথ’তা-টা কোথায় রইলো? কাজেই এটা তো পরিষ্কার যে রাজ্য সরকারের বক্তব্য ওই রিপোর্টে যথাযথ ভাবে স্থান পায়নি। বিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগ সেই মর্মে প্রতিবাদ করে একটি চিঠি ওই কমিটির চেয়ারপার্সনকে দিয়েছে, যার কোনও জবাব আমরা আজ অবধি পাইনি। এই ‘লুকোচুরি’ খেলাটার কী উদ্দেশ্য, যদি না এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্য কোনও অভিসন্ধি থাকে? এখন প্রেস রিপোর্ট থেকে যা দেখছি, সেখানে প্রচুর তথ্য ও সংখ্যা আছে, যা যাচাই না করে প্রতিক্রিয়া দেওয়া অসম্ভব। দ্বিতিয়ত এটাও দেখা প্রয়োজন যে, JRM রিপোর্টটিতে যা তথাকথিত ‘অবৈধতা’ বলা হচ্ছে, তাতে রাজ্য সরকারের বক্তব্য কতটা প্রতিফলিত হয়েছে। তারপরেই আমরা যথাযথ প্রতিক্রিয়া দিতে পারব'।


তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘CAG ২০২১-২০২২ অর্থবর্ষ অবধি তাদের অডিট সম্পূর্ণ করেছে, যার মধ্যে কিন্তু এই ধরণের কোনও প্রতিক্রিয়া পাইনি। আমরা JRM রিপোর্টটা পাই বা না পাই, বা আমাদের প্রতিনিধির সই থাক বা নাই থাক, এবং কেন সই নেই, তার উত্তর চেয়ারপার্সনের কাছ থেকে পাই বা না পাই, আমরা বিশদে এই রিপোর্টের জবাব পাঠাবো। পশ্চিমবঙ্গ ভারতের মোট ১২ কোটি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ১.২ কোটি ছাত্রছাত্রীদের মিড ডে মিল পরিষেবা দেয় – যার অডিট CAG আবার রাজ্যজুড়ে করছে। কাজেই তাঁদের রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকা যাক!’ 


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)