অয়ন ঘোষাল:  অনলাইনে সার্চ করে পাওয়া গিয়েছিল ওয়েবসাইটের খোঁজ। শরীরে উপসর্গ থাকায় নমুনা পরীক্ষার জন্য যোগাযোগ করেছিলেন, বিশ্বাস করে আগেই অনলাইন ট্রানজাকশন করেছিলেন আট হাজার টাকা। নমুনা সংগ্রহ করতে বাড়িতে লোক এসেছিল বটে, নির্দিষ্ট দিনে অনলাইনে দেখেছিলেন নিজের রিপোর্ট! কিন্তু সবটাই ভুয়ো, মনগড়া। আর যতক্ষণে এসব হল, শরীরে আরও জাঁকিয়ে বসেছিল করোনার কামড়! নিজের জীবন দিয়েই প্রতারণার দাম দিলেন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি! করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্বাক্ষী থাকল কলকাতা। তদন্তে নেমে হতবাক দুঁদে পুলিসকর্তারাও।

COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

নেতাজিনগর থানা সূত্রে খবর, গত ৩০ জুলাই ২৩ বাই ২১ নাকতলা রোডের বাসিন্দা সলমা সিনহা ও তাঁর মেয়ে সীমা একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি মূলত একটি ভুয়ো সংস্থাকে কেন্দ্র করে । সলমা পুলিসকে জানান, তাঁর স্বামী বিমল সিনহা কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। গত ২৪ জুলাই অনলাইন সার্চ করে একটি ওয়েবসাইটের খোঁজ পেয়েছিলেন তিনি। এই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

সলমার দাবি, সংস্থার তরফে জানানো হয়, বাড়িতে গিয়ে লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হবে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে লগ ইন করলে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। সেইমত আট হাজার টাকা অগ্রিম অনলাইন ট্রান্সফার করা হয়। ২৫ তারিখ বাড়িতে লোক যায়। লালারস ও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে। জানিয়ে দেওয়া হয়, ২৭ তারিখ রিপোর্ট পাওয়া যাবে।

২৭ তারিখ সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায় বিমল সিনহার রিপোর্ট নেগেটিভ । ততক্ষণে বিমলবাবুর শরীরে উপসর্গ মারাত্মক আকার নিয়েছে। তীব্র শ্বাসকষ্ট, ধুম জ্বর। তড়িঘড়ি তাঁকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা করে দেখা যায় তিনি পজেটিভ এবং আশঙ্কাজনক । তাঁকে দ্রুত ভর্তি করা হয়।

৩০ তারিখ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় করোনায় তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর সেই সংস্থার ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন সলমা ও সীমা। হাজরার একটি নামকরা ল্যাবে বিমলবাবুর কোভিড টেস্ট করানো হয়েছে বলে এই সংস্থার দাবি ছিল । হাজরার সেই
ল্যাব জানিয়ে দেয়,  তাঁরা এই নামের কোনোও ব্যাক্তির নমুনা পরীক্ষা করেনি।

এরপর পুলিসের দ্বারস্থ হন তাঁরা। তদন্তে নেমে পুলিস জানতে পারে, একাধিক ব্যাক্তিকে একই ল্যাব থেকে পরীক্ষা করানোর নাম করে ঠকানো হয়েছে। এরপর ফোন নম্বরের সূত্র ধরে যে নমুনা সংগ্রহ করেছিল, সেই যুবককে গ্রেফতার করে। ধৃত অনিত পাড়িয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুই পাণ্ডা ইন্দ্রজিত্ ও বিশ্বজিতকে গ্রেফতার করে পুলিস। ধৃতদের ৩ অগাস্ট পর্যন্ত পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আরও পড়ুন: নরম-গরমের সম্পর্কের মাঝেই দিলীপের জন্মদিনে ফেসবুকে ঢালাও শুভেচ্ছা বাবুলের!

ধৃতরা সাইবার এক্সপার্ট কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিস। জেরায় ধৃতরা স্বীকার করেছেন, একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল যিনি যে এলাকার বাসিন্দা তাঁর নিকটবর্তী কোনও বড় বেসরকারি ল্যাব থেকে টেস্ট করিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অনলাইনে রিপোর্ট দেওয়া হবে। ওয়েবসাইটেই ক্লিক করলে এই রিপোর্ট দেখা যাবে।