বাম-কংগ্রেস, তৃণমূল, বিজেপি, কার ঘর কে ভাঙবে? রাজ্যসভা নির্বাচনে তুঙ্গে ক্রস ভোটিংয়ের আশঙ্কা
রাজ্যসভার পঞ্চম আসটিতে জিততে গেলে এই ২৮ জনের সঙ্গে আরও ১৯ জন বিধায়কের ভোট ভাঙাতে হবে তৃণমূলকে। ১৭ জন বিধায়ক নিয়ে রাজ্যসভায় বিজেপি প্রার্থীরও একক জয় অসম্ভব।
নিজস্ব প্রতিবেদন : রাজ্যসভার জন্য পঞ্চম আসেন বাম-কংগ্রেস ছাড়া আর কেউ কি মনোনয়ন দেবে? এই নিয়ে আশঙ্কা ঘনিয়েছে বাম-কং শিবিরে। আশঙ্কার মেঘ কংগ্রেসের ঘরেও। যদিও বামেদের থেকে কোনও ক্রস ভোটিং হবে না বলেই দাবি করেছেন সুজন চক্রবর্তী। পাশাপাশি, কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তীরও দাবি, হাত শিবির থেকে কোনও ক্রস ভোটিং হবে না। তবুও আশঙ্কার চোরাস্রোত বইছেই।
বাম ও কংগ্রেসে যৌথ সমর্থনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার পঞ্চম আসনে প্রার্থী হচ্ছেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। এখন রাজ্যসভায় জেতার জন্য একজন সাংসদ পিছু ৪৯ জন বিধায়কের ভোট লাগবেই। সেখানে কংগ্রেসের ২৫ জন ও বামেদের ২৬ জন বিধায়ক মিলে মোট ভোট দাঁড়ায় ৫১। অর্থাৎ, সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব বলছে, রাজ্যসভায় বাম প্রার্থী বিকাশ ভট্টাচার্যের জয় নিশ্চিত। কিন্তু আচমকাই কাল দুপুরে সব হিসেব যেন 'গোলমাল' হয়ে গিয়েছে।
বুধবার একটি ব্ল্যাঙ্ক নমিনেশন তোলা হয়। কিন্তু সেই মনোনয়নপত্র কার জন্য তোলা হয়েছে? তা সুস্পষ্ট নয়। আর এতেই আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে। কংগ্রেস ও সিপিআইএম-এ কি ক্রস ভোটিং হবে? কে হতে পারে মীরজাফর? দুই শিবিরের অন্দরে কান পাতলেই এখন শোনা যাচ্ছে এই কানাঘুষো। ইতিমধ্যেই দুই দলের বিধায়কদের সতর্ক করা হয়েছে। গদ্দারি কে করবে? তাঁর খোঁজ শুরু হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, বিধায়কদের সতর্ক করার জন্য বাম পরিষদীয় দলকে নির্দেশ দিয়েছে আলিমুদ্দিন।
প্রসঙ্গত, তৃণমূলের নির্বাচিত বিধায়ক ২০৭ জন। কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন ১২ জন। ৪ জন যোগ দিয়েছেন বামেদের তরফ থেকে। একইসঙ্গে একজন নির্দলও যোগ দিয়েছেন। ফলে তৃণমূলের পক্ষে এখন ২২৪ জন বিধায়ক। সেখানে রাজ্যসভায় তৃণমূলের তরফে ৪ জন প্রার্থীর জন্য মোট ১৯৬টি (৪X৪৯টি) ভোটের পরেও, আরও ২৮ জন বিধায়কের ভোট হাতে 'অতিরিক্ত' থাকছে। এখন রাজ্যসভার পঞ্চম আসটিতে জিততে গেলে এই ২৮ জনের সঙ্গে আরও ১৯ জন বিধায়কের ভোট ভাঙাতে হবে তৃণমূলকে।
অন্যদিকে, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিধায়ক আছেন ২ জন। আর বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ১৭। এখন ১৭ জন বিধায়ক নিয়ে রাজ্যসভায় বিজেপি প্রার্থীর জয় অসম্ভব। এদিকে আজই বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, "রাজ্যসভা নির্বাচনে আমাদের বিধায়ক মনোজ টিগগা একটি মনোনয়ন পত্র তুলেছেন। আমরা প্রার্থী দেব কি না কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। যখন ভোট হবে, তখন আমাদের সংখ্যা বোঝা যাবে।"
আরও পড়ুন, 'সাদা পরিষ্কার কাপড় কেটে মাস্ক বানিয়ে নিন', করোনা ঠেকাতে দিলীপের উপদেশ
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যের পরই 'ভূতুড়ে নমিনেশন'-এ ক্রস ভোটিংয়ের আশঙ্কা যেন আরও জাঁকিয়ে বসেছে। ঘাসফুল বা পদ্মফুল, পঞ্চম আসনে নিজেদের প্রার্থীকে জেতাতে দু-দলই ঘর ভাঙানোর হাওয়া চালাবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, "বিধায়ক ভাঙানোর খেলায় সিদ্ধহস্ত বিজেপির মত তৃণমূলও। ওরা যা পারে করুক। আমরা কনফিডেন্ট।" কিন্তু মুখে সুজন চক্রবর্তী যতই 'কনফিডেন্স'-এর কথা বলুন না কেন, কংগ্রেস ও বাম কোনও পক্ষই যে আর নিশ্চিন্ত থাকতে পারছে না, তা স্পষ্ট।