অনুষ্টুপ রায় বর্মণ: "আমার মাথায় বন্দুক ধরতে পারেন। মরতে রাজি আছি। কিন্তু দুর্নীতি দেখে চুপ থাকবে না আদালত!" কোনও বাংলা সিনেমার সংলাপ নয়। বক্তার নাম বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এই মুহূর্তে হাইকোর্ট পাড়ায় শাসকের 'হাই প্রেশারের' কারণ। ১৭ নম্বর এজলাসের 'মাই লর্ড'। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সরকারের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়া বিচারপতি। শুধু নিয়োগ মামলা নয়, রাজ্যে গত কয়েক মাসে একের পর একর মামলায় তাঁর এজলাস থেকেই এসেছে CBI তদন্তের নির্দেশ। তালিকায় রয়েছে পার্থ, পরেশদের মতো ভিভিআইপি-দের নামেও দায়ের হওয়া মামলা।  


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

২০০৮ সাল থেকে বিচারপতি হওয়ার আগে অবধি SSC প্যানেলের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন তিনি। ২০১৮ সালে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে আসেন কলকাতা হাইকোর্টে। ২০২১ সাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে একের পর এক গুরুত্বপুর্ণ CBI অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। 


সরকারি চাকরি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন বিচারপতি গাঙ্গুলি। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই চাকরি ছেড়ে আইন নিয়ে পড়াশুনো শুরু করেন তিনি। আইনজীবী হিসেবে অরিজিনাল সাইটের মামলা, ন্যাশনাল ইন্সুরেন্সের মামলা লড়েছেন তিনি। 


স্কুল শিক্ষা কমিশনের দুর্নীতি বাদেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোর্ট সাক্ষি থেকেছে তাঁর মানবিক রায়ের। ৭৬ বছরের বৃদ্ধার ২৫ বছরের বেতন, এরিয়ার সহ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দশ দেন তিনি। টানা ৩৬ বছরের লড়াইয়ের শেষে এজলাসেই কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধা।


দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত সোমা ফিরিয়ে দেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির প্রস্তাব। অন্য চাকরি নয় এজলাসে দাঁড়িয়েই জানিয়ে দেন,'তাঁদের মনে আশা জাগিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়। লড়াই চালিয়ে যাবেন'।


অন্য একটি মামলায় স্কুলের প্রধান শিক্ষেকর বিরুদ্ধে এক শিক্ষকের বেতন আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে। সেই মামলায় বেনজির রায় দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ১০ জুন পর্যন্ত স্কুলে ঢোকা বন্ধ করে দেন শিক্ষকের। স্কুলের গেটে দু'জন সশস্ত্র পুলিস মোতায়েন করার সিদ্ধান্তও নেন তিনি।    


বাদ যায়নি কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও। তাঁর একক বেঞ্চের নির্দেশের উপর বিভিন্ন সময়ে ডিভিশন বেঞ্চের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চিঠি লেখেন তিনি। প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপও দাবি করেন চিঠিতে। 


আরও পড়ুন: পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা মহিলার, CRPF ঘেরা SSC দফতরে টান টান উত্তেজনা


শাসকের প্রেসার এতটাই বেড়ে যায় যে বাদ যায়নি ধর্ণাও। শাসকদলের আইনজীবী সেল তাঁর কোর্টরুমের বাইরে ধর্ণা দেয়। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর এজলাস বয়কটের ডাক দেয় কলকাতা হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় চিঠি লেখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।       


বয়কট, ডিভিশন বেঞ্চের স্থগিতাদেশ সব পেরিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা এই বিচারপতি স্থায়ি জায়গা করে নিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীদের মনে।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)