লুকিয়ে বাজপেয়ীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন জ্যোতি বসু!
মাই লাইফ, মাই কান্ট্রি’-তে অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং জ্যোতি বসুর গোপন বৈঠকের কথা উল্লেখ করেছেন লালকৃষ্ণ আডবাণী।
সৌরভ পাল
এক হিন্দুত্ববাদী নেতার সঙ্গে একই টেবিলে একই সঙ্গে বসে নৈশভোজ সারছেন এক কমিউনিস্ট নেতা। ভারতের মতো এমন একটি বহুদলীয় ব্যবস্থায় বিপরীত বিন্দু-তে থাকা নেতদের সৌজন্য সাক্ষাতের ছবি থাকলেও আরএসএস-পন্থী নেতার সঙ্গে কমিউনিস্ট নেতার গোপন বৈঠকের ঘটনা একেবারেই বিরল। তবে এমন একটা ঘটেছিল বটে।
নিজের বই ‘মাই লাইফ, মাই কান্ট্রি’-তে অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং জ্যোতি বসুর গোপন বৈঠকের কথা উল্লেখ করেছেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। দিল্লিতে, উদ্যোগপতি বীরেন সাহার বাড়িতে গোপন বৈঠক করেছিলেন জ্যোতি বসু। ওই বৈঠকে অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণীও।
দিল্লিতে তখন মিলিঝুলি সরকার। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-পাওয়ায় সরকার গঠন করতে পারেনি বিজেপি। করুণ অবস্থা কংগ্রেসেরও। এমন টালমাটাল অবস্থায় জনতা দলের নেতা ভিপি সিং-কে প্রধানমন্ত্রী করে সরকার গঠন করল ন্যশনাল ফ্রন্ট। সেই সরকারের কাজে একেবারেই খুশি ছিলেন না পশ্চিমবঙ্গের তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। সুষ্ঠু উপায়ে দেশ চালানোর তাগিদেই সেই পরিস্থিতি-তে অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন কমিউনিস্ট নেতা।
কলকাতা থেকে মুম্বইয়ের উদ্যোগপতি বীরেন সাহা মারফত্ আডবাণীর কাছে গোপন বৈঠকের প্রস্তাব পাঠান জ্যোতি বসু-ই। ঘটনাচক্রে বীরেন সাহা ছিলেন জ্যোতি বসু এবং এল কে আডবানী, দু জনেরই বন্ধু।
‘মাই লাইফ, মাই কান্ট্রি’ বই-তে লালকৃষ্ণ আডবাণী লিখেছেন, বীরেন সাহাকে দিয়ে জ্যোতি বসু বলে পাঠিয়েছিলেন, তিনি আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চান। তাঁরই প্রস্তাব ছিল, বৈঠক হবে বীরেন সাহার দিল্লির বাড়িতে। তবে তাঁর (জ্যোতি বসু) একটাই শর্ত ছিল- কোনও ভাবেই যেন এই বৈঠকের কথা বেঁফাস না হয়। মূলত দলগত অবস্থানের কারণেই এই বৈঠক গোপন রাখার কথা বলেছিলেন জ্যোতি বসু।
কমিউনিস্ট নেতার সেই প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানিয়ে বৈঠকে সায় দিয়েছিলেন বাজপেয়ী। এবং দিল্লিতে বীরেন সাহার বাড়িতেই বাজপেয়ী এবং বসু-র বৈঠকও হয়েছিল।