মৌমিতা চক্রবর্তী - অনুষ্টুপ রায় বর্মণ: পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম প্রার্থীর বাড়িতে হঠাৎ পুলিস। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে পুলিসের আগমনে স্বাভাবিক ভাবেই হতচকিত সৈয়দ আসিফ। জানা গেল নির্বাচনের আগে কমিশন থেকে নিউটাউনের তিন থানায় এসেছে একটি পোস্ট কার্ডের ছবি। জানানো হয়েছে পোস্ট কার্ডে থাকা সই খুঁজে সেই মানুষের বাড়িতে তাঁদের আস্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা এই বছর ভোট দিতে পারবেন।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কিন্তু এমন কেন হল? নিউটাউন অঞ্চলের পুলিসকে হঠাৎ এই কাজ করতে বলছে নির্বাচন কমিশন? খাস কোলকাতা শহর লাগোয়া হাইটেক নিউটাউনও কিন্তু আসলে পঞ্চায়েত এলাকা। রাজারহাট ব্লকের অন্তর্গত জ্যাংরা হাতিয়ারা ২ পঞ্চায়েতের অংশ এই অঞ্চল।    


পোস্ট কার্ড ক্যাম্পেন


জানা গিয়েছে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদলের বিরুদ্ধে ভোট লুঠের অভিযোগ করেই থেমে যায়নি বাম শিবির। পঞ্চায়েত ভোটের সময় সন্ত্রাসের অভিযোগ, ভোট দিতে না পারার অভিযোগে সরব হয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানান নিউটাউন এর বাসিন্দারা। সেভ ডেমোক্রেসি ও সিপিআইএম-এর উদ্যোগে অগস্ট, সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর এই তিন মাসজুড়ে সব নাগরিকদের কাছ থেকে চিঠি নিয়ে পাঠানো হয় কমিশনে।



নির্বাচনের পরে প্রায় ৫ হাজার পোস্টকার্ড ছাপানো হয়। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পোস্টকার্ড বিলি করেন দলীয় কর্মীরা। জানা গিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে পাঠানো সেই পোস্টকার্ডগুলি এবার কমিশনের তরফে ফিরে এসেছে স্থানীয় থানায়। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে যে পুলিস যেন এই পোস্টকার্ডের প্রেরকদের আস্বস্ত করে যে তাঁরা এবার ভোট দিতে পারবেন।


আরও পড়ুন: Lok Sabha Election: চলতি সপ্তাহেই রাজ্যে আরও ১০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী!


বাম নেতা এবং গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজারহাট নিউটাউনের সিপিআইএম প্রার্থী সপ্তর্ষি দেব জানিয়েছেন, ‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিউটাউনের কোনও বাসিন্দা ভোট দিতে পারেননি। আমরা পার্টিগত ভাবে পোস্টকার্ড ছাপাই আইনজীবীদের সাহায্যে। সেটা পাঠানো হয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে। সেখানে জানানো হয় যে আমরা কেউই এখানে ভোট দিতে পারিনি যা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আমাদের এই সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। আপনি এর প্রতিকার করুন।‘


‘থানার অফিসাররা পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু থানা তো একই রয়েছে’


সম্প্রতি কমিশনের তরফে সেই সব নিউটাউন এর বাসিন্দাদের বাড়িতে পুলিস পাঠিয়ে আস্বস্ত করতে বলা হলেও সবাই ভয়মুক্ত নন। তাঁদের বক্তব্য, পুলিস থাকলে হবেনা। কেন্দ্রীয় কোনও আধিকারিক চাই।


গত নির্বাচনের বাম প্রার্থী আসিফ জানিয়েছেন গত নির্বাচনের দিন তাঁকে বাড়িতে আটকে দেয় দুষ্কৃতিরা। এমনকি তাঁর ছেলের মেডিক্যাল রিপোর্টও নিতে যেতে দেওয়া হয়নি তাঁকে। তাঁর অভিযোগ এই অবস্থায় পুলিস তাঁকে বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময়ে মাঝরাস্তায় নামিয়ে দিতে চায়। তিনি জানিয়েছেন মানুষ দেখেছে যখন নিউটাউনের ভোটাররা ভোট দিতে যেতে পারছিলেন না সেই সময়ে পুলিস ছিল নীরব দর্শক। তাঁর দাবি সেই একই পুলিস বাড়ি বাড়ি এসে আস্বস্ত করলেও তাঁরা কোনওভাবেই এই পুলিসের আশ্বাসবানীতে নিশ্চিন্ত হতে পারছেননা।   


সপ্তর্ষি দেব বলেন, ‘এখন নিউ টাউন, টেকনোসিটি এবং ইকোপার্ক থানা থেকে সাধারণ মানুষের বাড়িতে যাওয়া হচ্ছে এটা বলতে যে আপনারা এবার ভোট দিতে পারবেন। যারা পোস্টকার্ড পাঠিয়েছিলেন তাঁদের নাম চিহ্নিত করেও তাঁদের বাড়িতে যাচ্ছে। সকলে আস্বস্ত হচ্ছেননা। হওয়ার কথাও নয়। কারন থানার অফিসাররা পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু থানা তো একই রয়েছে।‘


আরও পড়ুন: Srijan Bhattacharya | Jadavpur: হাতখরচা বাঁচিয়ে শ্রমজীবী ক্যান্টিনের পরে এবার যাদবপুরে সৃজনের প্রচারে পড়ুয়ারা


তাঁর আরও দাবি, ‘আমরা স্পষ্ট ভাবে চাইছি যে এই শহরের সাধারণ মানুষ ভোট দিতে গেলে যে কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজার দরকার সেটা শুধু থানাকে দিয়ে বা পশ্চিমবঙ্গের পুলিসকে দিয়ে হবে না। সেন্ট্রাল ফোর্স এবং স্টেট ইলেকশন কমিশন সহ সেন্ট্রাল ইলেকশন কমিশনের নমিনেটেড অফিসারদের এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে দেখা করা প্রয়োজন, তাঁদের কথা শোনা প্রয়োজন। দলমত নির্বিশেষে বিরোধী প্রার্থী যাদের বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছিল, তাঁদের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। কথা বলে যাতে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে যেতে আশ্বস্ত হয় সেই কনফিডেন্স তৈরি করতে হবে। এই কাজ বিধাননগর পুলিস করতে পারবে না।‘      


সেভ ডেমোক্রেসির তরফে ডক্টর বিমান সমাদ্দার জানিয়েছেন, ’প্রশাসনের উপর থেকে আমাদের ভরসা উঠে গিয়েছে। প্রশাসন নিজের ভূমিকা পালন করছে তা চোখে না দেখা পর্যন্ত প্রশাসনকে মানুষ ভরসা করতে পারবে না।‘      



দল বেঁধে ভোট দেবে নিউটাউন?


সিপিআইএম-এর তরফে এবার ভোটের দিন নিউটউনের সব ভোটারদের জন্য দলমত নির্বিশেষে বেশ কিছু এলাকা ঠিক করে একত্রিত হয়ে ভোট দিতে যাবার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য; দলের তরফে নয়, বাসিন্দারা চেয়েছেন তাই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


কী হয়েছিল ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে?


২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন। গোটা পশ্চিমবঙ্গজুড়ে শোনা গিয়েছিল বিরোধীদের গেল গেল রব। বামপন্থীদের দাবি ছিল রীতিমতো ভোট লুঠ করে নির্বাচনে জয়লাভ করেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।


বিরোধী শিবির, বিশেষত বাম নেতৃত্বের তরফে দাবি করা হয় যে নিউ টাউনের বেশিরভাগ ভোটারকে নির্বাচনের দিল ভোটকেন্দ্রে পৌঁছাতেই দেওয়া হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা রাজারহাট ব্লকের অন্তর্গত জ্যাংরা হাতিয়ারা ২ পঞ্চায়েতের অংশ হিসাবে স্মার্ট সিটিতে ভোট হওয়া আটটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনের সবকটিতেই জয়লাভ করে।


ডক্টর বিমান সমাদ্দার জানান পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগের রাত থেকেই নিউটাউনের সব জায়গা ভরে যায় বহিরাগত দুষ্কৃতিতে। তাঁরা নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই সকলকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়া থেকে আটকে দেয়। এমনকি প্রার্থীদেরকেও বাড়ি থেকে বেরতে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা অবাক হয়ে দেখেছিলাম যে নির্বাচনের আগের রাত থেকে নিউটাউন ভরে যায় বহিরাগত দুষ্কৃতিতে এবং আশ্চর্যজনকভাবে তারা সরকারি বিল্ডিংগুলিতে ছিল। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া এই কাজ সম্ভব নয়’।


এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা এবং রাজ্যসভার সাংসদ শমিক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘বিধাননগর-নিউটাউনের মানুষ ভোট দিতে পারেননি। দলবদ্ধ ভাবে ভোট দিতে যাওয়া সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। এই ভোটে আগের ভোটের মত সন্ত্রাসের অবস্থা থাকবে না। কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নজরদারি থাকবে’। 


(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)