তন্ময় প্রামাণিক : বিশ লাখে এমন ঘটনা একটা ঘটে। হৃদযন্ত্র একটি। অথচ শরীর দুটি। 'একে অপরকে জড়িয়ে ধরে' বেরিয়ে আসছে মায়ের পেট থেকে। হৃদযন্ত্র জোড়া লেগে থাকা অবস্থায় NRS-এ জন্ম নিল যমজ সন্তান। এই ঘটনা মনে করিয়ে দেয় "গঙ্গা-যমুনা"র কথা। করোনা আবহের মধ্যে সবরকম নিরাপত্তা আর প্রস্তুতি নিয়ে মঙ্গলবার বাগুইআটি র বাসিন্দা ২১ বছরের অনিমা ঘোষের অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা। এনআরএস সূত্রে খবর, যমজ দুই সদ্যোজাত আপাতত SNCU-তে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে আছে। ভালো আছে। ভালো আছেন মা'ও।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

একটি হৃদযন্ত্র কিন্তু দুটি সম্পূর্ণ শরীর নিয়ে জন্মানো এই বিরল যমজ সদ্যোজাত এখন নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলে দিয়েছে NRS হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সেখানকার প্রসূতি ও শিশু বিভাগের  একদল চিকিৎসককে। কিভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যায় এই যমজ সদ্যোজাতদের? তারই হিসেবনিকেশ আর অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে NRS-এর চিকিৎসকদের মধ্যে। যমজ দুই শিশুর মস্তিষ্ক, হাত, পা, চোখ, নাক, মুখ সব আলাদা। এককথায় দুটো পূর্ণ শরীর। শুধু "অভিন্ন হৃদয়"। দুই শিশুরই হৃদযন্ত্র একটা। দুজনের বুক জোড়া লেগে আছে ওই হৃদযন্ত্র নিয়ে। জোড়া লেগে থাকা হৃদযন্ত্র  থেকেই দুটি শরীরে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় 'থোরাকফ্যাগাস'। এনআরএস হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত বুধবার ২২ জুলাই একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে ২১ বছরের অনিমা ঘোষ আসেন এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা দীর্ঘ প্রস্তুতি নেন অনিমা ঘোষের যমজ সন্তান ডেলিভারির অস্ত্রোপচারের জন্য।


চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস বলছে, লক্ষ লক্ষ সন্তান জন্মানোর পরে এমন ধরনের ঘটনা একটি করে দেখা যায়। এতটাই বিরল। মঙ্গলবার অবশেষে সফল অস্ত্রোপচারের পর ভূমিষ্ঠ হয় যমজ সন্তান। তখনই দেখা যায় তাদের অভিন্ন হৃদয়। আপাতত চিকিৎসার পর্যবেক্ষণে ওই প্রসূতি এবং তাঁর দুই সন্তান রয়েছে। এখন চিকিৎসকদের কাছে চ্যালেঞ্জ কিভাবে এই শিশু দুটিকে জোড়া লেগে থাকা একটি হৃদযন্ত্র নিয়ে বাঁচিয়ে রাখা যায়। NRS মেডিকেল কলেজের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক দেবরাজ বসু বলেন,  "রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং বিষয়। ওই যমজ শিশুর জন্মের পর SNCU-তে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের অধীনে সযত্নে রাখা হয়েছে। মা ভালো আছেন। এধরনের কনজয়েনড টুইন বেবি খুবই বিরল। এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ শিশু দুটিকে আলাদা করে সুস্থ জীবনে ফেরানো। কিছুদিন পর আল্ট্রাসোনোগ্রাফি এবং ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে দেখা হবে হৃদযন্ত্রের অবস্থান। অতি জটিল বা জটিলতম অস্ত্রোপচার করে যমজ শিশু দুটিকে আলাদা করার পরিকল্পনা আছে। হৃদযন্ত্র একটি হলে অপেক্ষাকৃত যে শিশুর বাঁচার সম্ভাবনা বেশি তার দিকে রেখে অস্ত্রোপচার করা হতে পারে। আমাদের NRSমেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এক চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মুখে দাঁড়িয়ে। অন্য শিশুটিকে বাঁচাতে দরকার সদ্যোজাতের উপযুক্ত হৃদযন্ত্র জোগাড় করে তা প্রতিস্থাপন। সেটা হয়তো সম্ভব নয়। আমাদের চিকিৎসকেরা সবরকম পরিকল্পনা করছেন।" করোনা আবহের মধ্যে বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে ফিরিয়ে দেওয়া প্রসূতিকে দেবরাজ বসুর নেতৃত্বে অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক তনুশ্রী রায়, স্মৃতি রাজ, অনির্বান রায় সহ পুরো ইউনিট।


এপ্রসঙ্গে কলকাতা মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান সুকান্ত দাস বলেন, "এ ধরনের শিশুদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রোটোকল আছে কিভাবে অস্ত্রোপচার করা হবে। বিষয়টি অত্যন্ত বিরল বললেও কম বলা হয়। এক্ষেত্রে একটি শিশুর বাঁচার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে সেক্ষেত্রে বাঁচানো সম্ভব নয়। তবে সবটাই সিদ্ধান্ত নেবেন একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যেখানে পেডিয়াট্রিক সার্জারি, পেডিয়াত্রিক কার্ডিয়লজি, মেডিসিন এবং নিউরো ডক্টর থাকবেন। তবে এখনই নয়। কয়েক মাস পরে এই শিশুদের অস্ত্রপচার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রেও দেখতে হবে অস্ত্রোপচারের উপযুক্ত হয়েছে কিনা।" সদ্যোজাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অরুণ সিংহ বলেন, "অত্যন্ত জটিল বিষয়। একটি হার্ট, দুটি শিশু এমনটা দেখিনি। পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আরও সময় প্রয়োজন। শিশুকে আরেকটু বড় করতে হবে। যদি তারা বেঁচে থাকে তখনই পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগ কিভাবে অস্ত্রোপচার করবে তারা ঠিক করবেন।"


আরও পড়ুন, খুলছে যোগকেন্দ্র ও জিম, লকডাউনে কোথায় কীসে ছাড়? জানাল নবান্ন