উত্তম কুমারের মহালয়ার পর শুধু ইট ছোড়া বাকি ছিল
আকাশবাণীর ডালপালায় দীর্ঘদিন কাটিয়ে আজ কেরিয়ারের সায়াহ্নে তিনি। রেডিও-র স্বর্ণযুগ যেমন দেখেছেন তেমনই সাক্ষী থেকেছেন কীভাবে ধীরে ধীরে শ্রোতারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন শব্দের মায়াজাল থেকে। ডিজিটাল ও বৈদ্যুতিন জগতের আগ্রাসী আধিপত্যের কাছে দ্রুত ফিকে হতে চলেছে বেতার জগত। এখন শুধু পড়ে রয়েছে স্মৃতিবিজরিত সে সব অনুষ্ঠান, যা মুখে মুখে শুধু ফেরি হয়ে বেড়ায়। এমনই এক শব্দের `ফেরিওয়ালা` ২৪ঘণ্টা ডট কমে উজার করে দিলেন তাঁর অভিজ্ঞতা, আবেগ আরও অনেক না জানা গল্প। তিনি শোভন পাঠক। তাঁর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ছিলেন ২৪ ঘণ্টা ডট কমের প্রতিনিধি সোমনাথ মিত্র।
আকাশবাণীর ডালপালায় দীর্ঘদিন কাটিয়ে আজ কেরিয়ারের সায়াহ্নে তিনি। রেডিও-র স্বর্ণযুগ যেমন দেখেছেন তেমনই সাক্ষী থেকেছেন কীভাবে ধীরে ধীরে শ্রোতারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন শব্দের মায়াজাল থেকে। ডিজিটাল ও বৈদ্যুতিন জগতের আগ্রাসী আধিপত্যের কাছে দ্রুত ফিকে হতে চলেছে বেতার জগত। এখন শুধু পড়ে রয়েছে স্মৃতিবিজরিত সে সব অনুষ্ঠান, যা মুখে মুখে শুধু ফেরি হয়ে বেড়ায়। এমনই এক শব্দের 'ফেরিওয়ালা' ২৪ঘণ্টা ডট কমে উজার করে দিলেন তাঁর অভিজ্ঞতা, আবেগ আরও অনেক না জানা গল্প। তিনি শোভন পাঠক। তাঁর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ছিলেন ২৪ ঘণ্টা ডট কমের প্রতিনিধি সোমনাথ মিত্র।
বাঙালির শোনার আঁতুড় ঘরে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। বড় প্রাপ্তি কী?
এককথায় প্রাপ্তি বলতে, দিয়েছি যত, পেয়েছি তার অনেক বেশি। আমার অভিজ্ঞতা, উপভোগ ক্ষমতা দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। তখন, মনে হয়েছে, বানর যেমন বিশাল গাছে আশ্রয় নিয়েও তার নানা ডালপালায় লম্ফঝম্ফ করে বেড়ায়, ঠিক তেমনই আমিও এই বিশাল প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে কাজ করেছি। কেরিয়ারে বেশিরভাগটা কাটিয়েছি বেতার জগতে। এরপর রিজিওনাল ইউনিট, ডিউটি অফিসার, এডুকেশন ব্রডকাস্ট। এ ভাবে বিভিন্ন জায়গায় লম্ফঝম্ফ করেছি আর কি!
আমার জীবনে বীরেন দা অনেকটা জায়গা জুড়ে রয়েছেন। মানে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র। তাঁর হাত ধরেই আমার প্রথম অভিনয় শুরু। রিহার্সালে তিনি যেমন গালাগালি দিতেন, আবার নিজের পয়সায় চাও খাওয়াতেন। তখন সবে মাত্র আকাশবাণীতে এসেছি। সবকিছুই নতুন আমার কাছে। আমার প্রথম নাটকের দায়িত্ব ভার এসে পড়ল বীরেন দা-র উপর। তাঁর গম্ভীর উপস্থিতি আমাদেরকে রীতিমতো টেনশনে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু বীরেন দা-র রিহার্সালের ট্রেনিং ছিল অভাবনীয়। তিনি বলতেন, "শোনো, শব্দটাকে নাও, ভিতরে গ্রহণ করো, ওজন করো, তারপর সেটাকে উপস্থাপনা করো।" তখন কিঞ্চিত রসিকতা করে শ্রীধর (ভট্টাচার্য) দা বলতেন, "ও বীরেন দা, ওজন তো করবেন, দাঁড়িপাল্লা পাবেন কোন বাজারের থেকে, সেটাও বলে দিন।" প্রথমদিন রিহার্সালে খুব বকুনি খেয়েছি। রিহার্সাল শেষে সবাই যখন চলে গেল, তিনি বললেন, "চল, অনেক গালাগালি খেয়েছিস, এবার চা খাবি চল।" এই ছিলেন বীরেন দা। জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি এটাই।
যতদূর মনে পড়ে মহিষাসুরমর্দিনী শুরু হয়েছিল ১৯৩২ সালে। ষষ্ঠীর ভোরবেলায়। তবে, এটা যদি প্রদীপ জ্বালানো হয়, তাহলে তার আগে একটা সলতে পাকানোর ইতিহাস আছে। এর ঠিক আগের বছর অন্নপূর্ণা এবং বাসন্তী পুজো গায়ে-গায়ে পড়েছিল। এই দুই পুজোর মাঝখানে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। নাম দেওয়া হয় "দেবী বসন্তেশ্বরী।" এই অনুষ্ঠানকে বলা যেতে পারে মহিষাসুরমর্দিনীর রিহার্সাল পর্ব। অনুষ্ঠানটির নেতৃত্বে ছিলেন পঙ্কজ দা (পঙ্কজ কুমার মল্লিক), বাণী দা (বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য), বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র, হরিশচন্দ্র বালি- প্রমুখরা। অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেল অনুষ্ঠানটি। বাঙালির মনে এতটাই জায়গা করে নেয় এই অনুষ্ঠান যে উত্সাহিত হয়ে আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে পরের বছরেই এটি চণ্ডীপাঠ হিসাবে অনুষ্ঠিত হবে। তবে, মহিষাসুরমর্দিনী তৈরির পিছনে আরেক জনের গুরুত্বপূর্ণ হাত ছিল। তিনি হলেন পন্ডিত অশোকনাথ শাস্ত্রী। তিনি বৈদ্যনাথ দা-কে বলেছিলেন মার্কণ্ডেয় পুরাণটা একটু দেখতে। সেখানে থেকেই কিন্তু মহিষাসুরমর্দিনী তৈরি।
এই থ্রি মাস্কেটিয়ার্স একটা মজার তথ্য বলি। উত্তর কলকাতার একটি নাটকের দলের সভ্য ছিলেন তিন জনই। সখের থিয়েটার করতেন তাঁরা। ওই দলটির নাম ছিল চিত্রা সংসদ। 'খবর পড়ছেন বিজন বসু'- তিনি এই নাট্যদলের সদস্য ছিলেন। ১৯৩২ সালে ষষ্ঠীর ভোরবেলায় এই ত্রয়ীর সম্মিলিত প্রয়াসে তৈরি হল মহিষাসুরমর্দিনী। বাকিটা তো ইতিহাস। তবে মহিষাসুরমর্দিনীর শুরুটা ওই ১৯৩১ থেকেই বলা উচিত।
আরও পড়ুন- দেবীরূপের মাহাত্ম্যটা স্মরণে রেখে যেন কাজ করেন আজকের দুর্গারা
ভোরবেলায় গঙ্গাস্নান করে আসতেন বীরেন দা। পরনে নতুন থানের ধুতি। উর্দ্ধাঙ্গ অনাবৃত। বাকিরাও স্নান করে গেরুয়া বসনে স্টুডিওয় আসতেন। অনুষ্ঠান শুরুর আগে বীরেন দা বলতেন, "সবাই ধ্যান করে নাও।" আমি পুণরায় বলছি, বীরেন দা বলতেন একটু ধ্যান করে নাও। আসলে ওই ধ্যানের উপর জোর দিচ্ছি কারণ, ধ্যানের ভিতরই লুকিয়ে ছিল আসল মন্ত্র। কেউ ভাবতেন মনোযোগ করার জন্যই ধ্যানের কথা বলছেন। আবার কেউ ভাবতেন, মা-কে নিয়ে ধ্যানের কথা বলছেন বীরেন দা। নৃপেন দা অর্থাত্ এই অনুষ্ঠানের সর্বময় কর্তা নৃপেন্দ্র মজুমদার বলতেন, "উনি যেটা বলছেন, সেটাই করো। আমরা এখানে কেউ নই। যা করার মা নিজেই করে নেবেন।" এই কথাটা নৃপেন দা প্রায়ই বলতেন।
১৯৩১ সাল থেকে টানা এই অনুষ্ঠানটি হয়ে এসেছে। মাঝে ১৯৪৭ সালে লাইভ অনুষ্ঠান করা যায়নি। সে সময় সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার কারণে কলকাতাবাসীর জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছিল। ওই ভোরবেলায় কলাকুশলীদের স্টুডিও-তে নিয়ে আসার ঝুঁকি নেয়নি আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ। যদি কোনও বিপদ হয়ে যায়! এরপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এই অনুষ্ঠান রেকর্ডিং করা হবে। হতেই পারে এমন ঘটনা ফের হতে পারে। বা প্রাকৃতিক দুর্যোগও বাধা হতে পারে। সেই থেকে রেকর্ডিংয়ের ভাবনা শুরু।
** যদি এখনও লাইভ মহিষাসুরমর্দিনী হত, তাহলে সেই চার্মটা থাকত?
আমি সোজাসুজি এর উত্তরে যাব না। তবে উত্তর আমি অবশ্যই দেব। মাঝে আমজনতার মনে হয়েছিল, মহিষাসুরমর্দিনী এবং বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠ একঘেঁয়ে হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে সংবাদপত্রে বিস্তর লেখালিখি হয়। নতুনত্ব আনতে রীতিমতো তোলপাড় হয়ে ওঠে গোটা বাংলা। চাপে পড়ে আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, নতুনভাবে মহিষাসুরমর্দিনী তৈরি করা হবে। নাম দেওয়া হয়, " দেবী দুর্গতিহারিনী্।" তাতে কে ছিলেন না! উত্তম কুমার, বসন্ত চৌধুরী, লতা মঙ্গেশকর থেকে শুরু করে তাবড় তাবড় তারকা। বিশাল আয়োজন। বিজ্ঞাপন। সংবাদপত্রে লেখালেখি। এই যজ্ঞের কোনও ত্রুটি ছিল না। কিন্তু মহালয়ার দিন এই অনুষ্ঠান লাইভ হওয়ার পর বিশ্রী অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছিল কর্তৃপক্ষকে। খালি ইট মারা বাদ দিয়ে বিভিন্ন ভাবে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাদের। তখন কর্তৃপক্ষের হুঁশ ফিরল, জনমানস তো এটা চাইছে না। যতদূর মনে পড়ে, আবার সে বছর ষষ্ঠীর সকালে ওই পুরনো রেকর্ডিংটাই সম্প্রচারিত হয়। পুণরায় পুরনোয় ফিরে আসে কর্তৃপক্ষ। হ্যাঁ, নতুন কিছু তৈরি হলে অনেক এক্সপেরিমেন্ট হয়, নতুন নতুন বিষয় উঠে আসে। তবে, সাধারণ মানুষের কান কতটা নিতে পারবে, আমি এই বয়সে এসেও নিশ্চিত নই।
** শুধুই কী বীরেন্দ্র কৃষ্ণের কন্ঠই ইউএসপি এই অনুষ্ঠানের?
পুজোর শুরুতে হাল্কা ঠান্ডা পড়ে। মহালয়ার ভোরে ওই চারটের সময় বাঙালিকে খুব সচেতনভাবে ঘুমের আড়মোড়া ভাঙাতে যুদ্ধের দামামা তৈরি করা হয়েছিল। সংগীত, বীরেন দা-র কন্ঠ সব মিলিয়ে যে আবহ তৈরি হয় তা বাঙালির কানে প্রবেশ করে স্নায়ুগুলোকে সজাগ করে তোলে। এরপর চক্র দিলেন অমুক। এরপর অগ্নি দিলেন অমুক। এই যে যুদ্ধের একটা প্রস্তুতি তাতে দমকে দমকে মানুষের ঘুমটা ভেঙে ভেঙে যাচ্ছে। উত্তম কুমারের এই অনুষ্ঠান বাঙালির ঘুম ঠিকঠাক ভাঙাতেই পারল না। সেই মাত্রায় পৌঁছয়নি বলে আমার ব্যক্তিগতভাবে ধারণা। বীরেন দা-র কণ্ঠ, পঙ্কজ দা-র সুর এবং বাণী কুমারের স্ত্রোত্র- এই তিন জাদুতেই হার মেনেছে উত্তমের ' দেবী দুর্গতিহারিনী্।'
বীরেন দা-র টিমে যাঁরা লিডিং পজিশন সামলিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম সুপ্রীতি ঘোষ। "বাজল তোমার আলোর বেণু..." এই গানটি গেয়েছিলেন উনি। বীরেন দা ওনাকে ডেকে বলেছিলেন, "সুপ্রীতি শোনো, তোমায় এই গানটি দরদ দিয়ে গাইতে হবে। কারণ, তুমিই প্রথম অনুষ্ঠানকে সুরে বাঁধছো।" এই যে প্রত্যেকটা বিষয় ধরে ধরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, বলা যেতে পারে একেবারে অঙ্ক কষেই পরিচালনা করা হত গোটা অনুষ্ঠান। সত্যি কথা বলতে কী, এটা ব্যাখ্যা করা কঠিন।
এরপর অনেক নতুন শিল্পী এসেছেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী এই গানটি পরবর্তীকালে দ্বিজেন দা গেয়েছিলেন। কিন্তু বেসিকটা কখনও চেঞ্জ হয়নি।
একেবারে গোড়ার দিকে যে সব শিল্পীরা ছিলেন, তাঁদের নাম আজকের প্রজন্ম তো জানেই না। আভাবতী, মানিকমালা, কৃষ্ণঘোষ, বিমলভূষণ, প্রফুল্লবালা. বীণাপানি- এনারা আজও অগোচরে রয়ে গেলেন। এমন বলছি বলে আহত হবেন না, এটা সত্যি দুঃখের। কিন্তু তারপর যে সব শিল্পী এসেছেন তাঁরা আপামর জনগণের কাছে বেশ জনপ্রিয়। হেমন্ত, সুপ্রীতি, জগন্ময়, প্রতীমা, তরুণ, শ্যামল, রাজারানি, শৈলদেবী, সন্ধ্যা, দ্বিজেন, উত্পলা, সাবিত্রী- সবাই পরিচিত মুখ। কিন্তু ধীরে ধীরে এই পরিবর্তন ঘটলেও বাঙালি কতটা লাভবান হয়েছেন তা নিয়ে কখনও প্রশ্ন ওঠেনি।
** প্রস্তুতি- সেদিন এবং আজ
মহালয়া অনুষ্ঠানের আগের থেকে পুরো স্টুডিও ফুল দিয়ে সাজানো হত। ধূপ- ধুনোর গন্ধে ছেয়ে যেত চারপাশ। গোটা স্টুডিওটা যেন পুজো পুজো পরিবেশে পরিণত হত। মহিষাসুরমর্দিনী শুরুর আগে বীরেন দা-কে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। আকাশবাণীর অনেকেই অভিযোগ, কায়স্থ সন্তান হয়ে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র কীভাবে চণ্ডীপাঠ করবেন? তখন নৃপেন দা বলেন, উনিই করবেন। বাণী কুমারও বেঁকে বসেন। তিনি ঠিকই করে নিয়েছিলেন, যদি বীরেন দা-কে না নেওয়া হয়, তাহলে তিনি স্ত্রোত্রই লিখবেন না।
এ বার যন্ত্রী শিল্পীদের কথায় আসা যাক। রাই চাঁদ বড়াল ওই যন্ত্রী শিল্পীদের পরিচালনায় ছিলেন। এই বিষয়ে একটি মজার ঘটনা বলি। যন্ত্রী শিল্পীদের হিন্দু যেমন ছিলেন, মুসলিমও ছিল। মুসলিমরা আবার উর্দুভাষী। রাইদা তাঁদেরকে ভাল করে পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলেন। তাঁদেরকে বলা হল, যখন সংস্কৃত স্ত্রোত পাঠ হবে, তোমরা ইন্সট্রুমেন্ট সাপোর্ট দেবে। আর যখন বাংলায় স্ত্রোত্র পাঠ হবে বাজাবে না ইন্সট্রুমেন্ট। তাঁরা তো কী বুঝলেন জানি না। ওই অধিকারি ভাবিলেন সবই বোঝালাম, কপালকুণ্ডলা ভাবিলেন সবই বুঝলাম। অনুষ্ঠান শুরু হল। সংস্কৃতের পর বাংলায় শুরু হল স্ত্রোত্রপাঠ। নির্দেশ মতো হিন্দুরা বাদ্যযন্ত্র বন্ধ রাখলেও মুসলিম বাদকরা বাজিয়েই চলেছেন। তা দেখে চক্ষু কপালে উঠেছে রায় দা, নৃপেন দা, রাজেন সেন (মোহনবাগানের সেই বিখ্যাত ফুটবলার) দের। হতচকিত বীরেন দা। কিন্তু তাঁদের ওই বাজনায় অদ্ভুত সুরেলা আবহ তৈরি হচ্ছে। বীরেন দা সেটা বুঝতে পারলেন। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে, গদ্যে ছেড়ে সুরে চণ্ডীপাঠ করতে শুরু করলেন। হিন্দু যন্ত্রীরা অগত্যা সেই রেশে আবার বাজাতে শুরু করল। মুসলিম বাদ্যযন্ত্রীদের এমন কাণ্ডেই তৈরি হল নতুন সৃষ্টি।
সত্যিই কথা বলতে গেলে, স্টুডিওয় এখন আর সেই উন্মাদনা নেই। এখন ট্রাফিক সিগন্যালেই শোনা যায়, বাজল তোমার আলোর বেণু...। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানেও একই গান শুনতে পাচ্ছি। এমনকী অন্নপ্রাশনে চলছে জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী। ফলে, সেই পাগলের মতো আকর্ষণটা আর নেই। আবার বলব আছেও। এখনও বক্স কিংবা মাইকের মাধ্যমে সারা পাড়া জাগিয়ে মহালয়া শোনানো হয়। তবে, ওই যে রেডিও-র ভিতরে কী যে লুকিয়ে রয়েছে, তার রহস্য সব সময় থেকে গিয়েছে। তখন মনে হত, ওই অনুষ্ঠান মিস করলে, জীবনটাই যেন ব্যর্থ হয়ে গেল। সে সময় দেখা যেত মা-ঠাকুমারা স্নান করে, নতুন কাপড় পরে চণ্ডীপাঠ শুনতে বসতেন। সেই ভক্তির আবহটা সময়ের বিবর্তনে স্বাভাবিকভাবেই আর আশা করতে পারি না।
** প্রতিযোগীতায় লড়ছে আকাশবাণী নাকি নিজের মতোই চলতে চায়-
এটা সত্যি, এখন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে হাঁটছে আকাশবাণী। চেষ্টা অবশ্যই জারি রয়েছে। পরীক্ষামূলক নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে মানুষের বিনোদনের ধরন বোঝার চেষ্টা করছে আকাশবাণী। তবে, কতটা সফল হচ্ছি সময়ই বলবে।
** আমি যা কিছু বললাম সবই আমার মেমরি থেকে। আর মেমরি তো এই বয়সে বর্তমানের দিকে এগোয় না। যদি একটু-আধটু কোনও ত্রুটি থেকে যায়, যদিও থাকার কথা নয়, তাহলে দোষটা আমার নয়, আমার বয়সের। অকপটে স্বগতোক্তি শোভন বাবুর।