দেবীরূপের মাহাত্ম্যটা স্মরণে রেখে যেন কাজ করেন আজকের দুর্গারা
ভোরবেলায় শিউলির আদুরে গন্ধ, আকাশে পেজা তুলোর মত মেঘের যখন আনাগোনা শুরু হয়, তখন প্রকৃতি যেন জানান দেয়, পুজো এসেছে। আর পুজো মানেই আপামর বাঙালির কাছে যেমন পরিচিত বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সুর, তেমনি টেলিভিশনের পর্দায় ‘অসুরদলনী’। মহালয়ায় পিতৃ পক্ষের অবসানে দেবীপক্ষের সূচনা হয়, সেই লগ্নে বাঙালির চোখে এখনও ভেসে ওঠে দুর্গারূপী সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ।আজ সেই সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় হাজির ২৪ ঘণ্টা ডট কম-এর প্রতিনিধি জয়ীতা বসু। সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মুখোমুখি, তখন তো মহিষাসুরমর্দ্দিনীর সেই ছবি হাজির হবেই। সেই সঙ্গে ব্যক্তি জীবনে সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় কেমন, সেটাও জেনে নিন..
প্রশ্ন – সামনেই পুজো। আর পুজোর আগে সেই মহালয়ার সুর। এই সময়টায় বাঙালির প্রথম ‘জীবন্ত’ দুর্গা হিসেবে কেমন অনুভূতি হয় সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় – দুর্গাপুজো প্রত্যেক বাঙালির কাছে বিশেষ কয়েকটা দিন, বিশেষ মুহূর্ত। তাই আর পাঁচজন বাঙালির মত এটা আমার কাছে ‘মা ঘরে আসছেন’ বলে একরকম আলাদা অনুভূতি। যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন – পুজো এলে এখনও বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটে ট্রেন্ড করে দুর্গারূপী সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহালয়া? তখন কেমন লাগে?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় – অসাধারণ লাগে। এটা ঈশ্বরের আশীর্বাদ। পাশাপাশি দর্শকদের ভালবাসা ও আশীর্বাদ ছাড়া এটা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। এখনও আমি অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে মেসেজ পাই। তাঁরা যে এখনও আমায় মনে রেখেছেন, সেটা অনেক বড় পাওয়া। আর মানুষের সেই ভালবাসা নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই।
প্রশ্ন- মানুষ যখন এখনও আপনার মধ্যে ‘অসুরদলনীকে’ দেখতে পান, এ বিষয়ে কী বলবেন?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় – খুব ভাল লাগে। কাজ করতে গিয়ে প্রতি মুহূর্তে শিখেছি। আমার দিদার বয়সী অনেক বৃদ্ধা যখন আমায় দেখে এগিয়ে আসছেন, প্রণাম করতে যাচ্ছেন রাস্তায়, এটা অনেক বড় পাওয়া। আমায় শুধু ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যাল ডান্সার বললে ভুল হবে। (মহালয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে) আমার মনে হয়, আমার ওই একটাই পরিচিতি। দর্শক যে ভালবাসা দিয়েছেন, সেটা আমার কাছে বড় পাওয়া।
প্রশ্ন – বিভিন্ন চ্যানেলে এখন দুর্গার নানা মুখ। তাঁদের কত মার্কস দেবেন?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় – এটা আমার একদম বলা উচিত নয় (প্রায় হেসেই উড়িয়ে দিলেন)। একদম বলব না। আমি তাঁদের উপর রেসপেক্টফুল। শুধু বলব, যাঁরা মহালয়া করছেন, তাঁদের প্রত্যেকে কেউ সুপ্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী, কেউ বা প্রতিষ্ঠিত শিল্পী। তবে, তাঁরা যেন দেবীরূপের মাহাত্ম্যটা স্মরণে রেখে কাজটা করেন। দেবীরূপের যে একটা ডিগনিটি, একটা ডিভিনিটি, একটা এলিগেন্স, যেটা মা হিসেবে আমরা দেখতে চাই, সেটাই যেন দেখতে পাই।
প্রশ্ন – এখন তো বিভিন্ন শো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, তার মধ্যে পুজোর সময় কতটা সময় পান?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় – পুজোর প্রত্যেক দিনই প্রায় শো থাকে। কিন্তু, তার মধ্যেই আমার ছেলে আছে, স্বামী আছেন। তাঁদেরকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। তাঁরাও আমাকে সব সময় সাহায্য করে থাকেন। আমার বাবা-মা, আমার গুরু-রা সব সময় আমায় সাহায্য করেছেন, এই জায়গাটায় পৌঁছনোর জন্য। পাশাপাশি দূরদর্শনের প্রত্যেক প্রোডিউসার, ডিরেক্টরের কাছেও আমি এর জন্য কৃতজ্ঞ।
প্রশ্ন – আবার কি কখনও মহালয়াতে সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে পাব আমরা?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় – কেউ যদি কখনও মনে করেন, এই চরিত্রের জন্য সংযুক্তাকেই দরকার, তাহলে অবশ্যই আমি করব। আমি সেখানে হাজির থাকব। সেটা যেখানেই হোক না কেন। ওই ধরণের চরিত্রে বার বার ফিরে আসা, সেটা অনেকখানি ভাগ্যের বিষয়।
প্রশ্ন – ব্যক্তিগত জীবনে কেমন সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় – আমি একজন মেয়ে, কোনও বাবা-মায়ের মেয়ে। বিদেশে থাকার জন্য অনেক দূরে হলেও, তাঁদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখি। তবে দেশের দূর্গাপুজো অনেক বছর মিস করেছি। তবে পুজোর ক'দিন এখানেও শো থাকে। তার মধ্যে থেকে সময় বের করে দেশের যাঁরা আত্মীয়স্বজন আছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরিবারের সঙ্গেও সময় কাটানোর চেষ্টা করি।
প্রশ্ন – কখনও কি মনে হয়, ইশ, এখন যদি দুর্গা হতাম আরও বেশি প্রচার পেতাম?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় – নাগো, একেবারেই না। কখনও প্রচার পাওয়ার জন্য কাজ করিনি। নিজের কাজকে সব সময় মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার উপর যে দায়িত্ব পড়েছে, সেটা কতটা নিষ্ঠা সহকারে করতে পেরেছি, সেটাই দেখেছি।
প্রশ্ন – বাঙালি আপনাকে কতটা মনে রেখেছে? কী মনে হয়?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় – সেই ১৯৯৪ সাল থেকে মানুষের এত ভালবাসা পেয়েছি যে তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। মানুষ আমায় মনে রেখেছেন বলেই সব সময় তাঁদের কাছ থেকে এত ভালবাসা পাই আজও। আমি খুব ব্লেসড যে এত মানুষের ভালবাসা পেয়েছি।
প্রশ্ন – ব্যক্তিগত জীবনে কি সংযুক্তা দুষ্টের দমন করে থাকেন?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় – (একগাল হেসে) সেটা তো দুষ্টু লোকরা বলবে। আমি কীভাবে বলব? আমি খুব শান্ত মেয়ে। একেবারেই রাগী মানুষ নই। দুর্গার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে, তবে এই চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্য, তা আমাকে নিশ্চই ইনফ্লুয়েন্স করেছে। সেটা বলতে পারি।