তেলেভাজার দোকানে বিপ্লবের গন্ধ! নেতাজির স্মৃতিতে চপ খাওয়ায় লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ অ্যান্ড সন্স
হাতিবাগানের কাছে একশো বছর পুরনো তেলেভাজার দোকানে এলেই আজ বিনে পয়সায় পাওয়া যাবে গরমাগরম তেলেভাজা। ছোটদের জন্য বরাদ্দ দুটো করে চপ। আর পরিবারের জন্য চারটে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: আলু, ফুলকপির চপ, বেগুনি, ফুলুরি থেকে পেঁয়াজি- আজ সব ফ্রি। একটা পয়সাও দিতে হবে না। হাতিবাগানের কাছে একশো বছর পুরনো তেলেভাজার দোকানে এলেই আজ বিনে পয়সায় পাওয়া যাবে গরমাগরম তেলেভাজা। ছোটদের জন্য বরাদ্দ দুটো করে চপ। আর পরিবারের জন্য চারটে।
খাতায় কলমে কোনও হিসেব না থাকলেও অন্তত হাজার দশেক মানুষকে নেতাজির জন্মদিনে বিনে পয়সায় চপ খাওয়ায় ১৫৮ বিধান সরণীর লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ অ্যান্ড সন্স নামের তেলেভাজার দোকানটি। এটাই ওদের ট্র্যাডিশন। দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির বছর থেকেই এই রীতি শুরু হয়েছে যা আজও চলছে। দাদু থেকে নাতি, তিন পুরুষই নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিনে বিনে পয়সায় তেলেভাজা খাইয়ে আসছে এবং আজও খাওয়াচ্ছে।
আরও পড়ুন- কেন্দ্রে জোট সরকার এলে নেতাজির জন্মদিনকে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করবে: ফিরহাদ হাকিম
ভারত তখনও পরাধীন। সারা দেশজুড়ে স্বদেশি আন্দোলন একেবারে তুঙ্গে। মহাত্মা গান্ধী ও গান্ধীপন্থীরা একদিকে অসহযোগে নেমেছে, অন্যদিকে গণঅভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতাজিরা। পঞ্জাব, অন্ধ্র তো বটেই স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাও।
আরও পড়ুন- গানে গানে নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানালেন মন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লা
গোটা কলকাতা শহরে মিটিং মিছিল করছে কংগ্রেস, আর তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুভাষ চন্দ্র বসু। এমনিই এক মিটিংয়ে তেলেভাজার বরাত পেয়েছিল হাতিবাগানের লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ অ্যান্ড সন্স। সেই চপ খেয়েছিলেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। এমনও কথিত আছে ছাত্রাবস্থায় থাকাকালীনও তিনি এই দোকান থেকেই তেলেভাজা খেতেন। পরে এই দোকানই হয়ে উঠেছিল ‘আন্দোলনের এপিসেন্টার’। বিপ্লবীদের মধ্যে তথ্য দেওয়া নেওয়ার ক্ষেত্রেও না কি লিঙ্ক ম্যানের ভূমিকা পালন করেছিলেন এই দোকানের তত্কালীন মালিক খেদু সাউ। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উদ্দেশে নেতাজির পাঠানো গোপন চিঠিপত্র চালান হত এই দোকান থেকেই।
আরও পড়ুন- নেতাজির মৃত্যুদিন উল্লেখ করে টুইট! বিতর্ক উসকে দিল কংগ্রেস
একটা সময় পর্যন্ত এমন অনেক নথি সাউ পরিবারের কাছে ছিল। তবে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা অচিরেই হারিয়ে গিয়েছে। নেতাজির লেখা একাধিক হাতে লেখা চিঠিই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে রয়ে গিয়েছে ঐতিহ্য। হাতিবাগান থেকে কলেজ স্ট্রিট যাওয়ার পথে কিছুটা হাঁটলেই ডান হাতে পড়বে এই তেলেভাজার দোকান। বয়স একশোরও বেশি। ১৯১৮ সালে এই দোকানটি শুরু হয়, যা আজও নেতাজির স্মৃতি বয়ে নিয়ে চলছে।