মুখ্যমন্ত্রীর ৫ পাতার চিঠির পাল্টা পাঁচ পাতার পত্র দিলেন `অপমানিত` ধনখড়
নবান্ন-রাজভবন সম্পর্কের ফাটল কোনপথে এগোচ্ছে?
নিজস্ব প্রতিবেদন: পাঁচ পাতার চিঠি পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পাল্টা ৫ পাতার জবাব দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বৃহস্পতিবার রাতে রাজভবন থেকে পাঁচ পাতার একটি চিঠি প্রকাশ করা হয়। সেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ২২ পয়েন্টের চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, আগামিকাল এই নিয়ে মানুষের সামনে তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরবেন তিনি।
কী লিখেছেন রাজ্যপাল?
আপনি যে বারবার বলছেন রাজ্যপাল একজন মনোনীত সদস্য এটা দুঃখজনক। এতে বোঝা যায় সংবিধান সম্পর্কে কিছুই জানেন না!
মানুষের সমস্যা আপনি জানেন, রাজ্যে রেশন সরবরাহ নিয়ে হিংসার ঘটনাও জানেন
সংবিধানের আদেশ পালনে আপনি পুরোপুরি ব্যর্থ। এই ভয়ানক পরিস্থিতি সম্পর্কে বারবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও আপনার তরফে প্রচুর গাফিলতি আছে।
আপনি ও আপনার অফিসাররা সংবিধানের আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন।
আমার সমস্ত বক্তব্য যেন কৃষ্ণগহ্বরে ঢুকে যাচ্ছে, কোনও সাড়াই মিলছে না।
আমি দেখে আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি, যে ২১ তারিখের চিঠিতে আপনার ছোট্ট জবাবের বিষয়টি আপনার নজর এড়িয়েছে। আপনি লিখেছেন, রাজ্য সরকারের সব কর্মীরা এখন কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ব্যস্ত। আপনার কথা মানতে হলে আমাকে ঘুমিয়ে থাকতে হয়! এই মহামারী শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাজভবনেই হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়!
রাজ্যের এই চরম সঙ্কটের সময়, রাজ্যপাল ঘুমিয়ে থাকতে পারে না।
আপনার মন্ত্রীরা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যা খুশি তাই মন্তব্য করছে। আপনার নীরবতাই বলে দিচ্ছে, এতে আপনার সায় আছে।
আপনি যখন মানুষের কাছে সবটা তুলে ধরতে চাইছেন, তখন আমিও শুক্রবার তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ করব। .
তার আগে রাজ্যপাল পত্রাঘাত করেন মুখ্যমন্ত্রী। লিখেছেন,
২১ এপ্রিল আপনাকে চিঠি দিয়েআমি জানাই, রাজ্য সরকার সবরকম ভাবে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করছে।
সেই চিঠির প্রেক্ষিতে ২২ এপ্রিল সকালে আপনি যে এসএমএস পাঠিয়েছেন, তার ভাষা এবং শব্দচয়ন নজিরবিহীন।
আপনি ভুলে যাচ্ছেন, আমি রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। আপনি মনোনীত রাজ্যপাল। আমার ও আমার মন্ত্রীদের পরামর্শ আপনি উপেক্ষা করতেই পারেন, যেমন আপনি দায়িত্ব নেওয়ার দিন থেকেই করছেন
আপনি নিজেই বিচার করে দেখুন
১. আপনি সরাসরি আমাকে আক্রমণ করছেন।
২.আমার মন্ত্রী ও অফিসারদের আক্রমণ করছেন।
৩. আপনার বলার ভাষা, ধরণ, শব্দচয়ন অসংসদীয়।
৪. আপনি যে রাজ্যের রাজ্যপাল, সেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই সাংবাদিক বৈঠক করছেন
৫. বারবার, ধারাবাহিক ভাবে আপনি আমার প্রশাসন, মন্ত্রক এবং বিভিন্ন দফতরের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন।
আপনিই পরিষ্কার করে দিন, কে সাংবিধানিক ধর্মের সীমা পেরোচ্ছে, দুই সাংবিধানিক পদাধিকারীর মধ্যে ন্যূনতম সৌজন্যের সীমা লঙ্ঘন করছে। আমি বাধ্য হয়ে এই চিঠিপত্র জনসমক্ষে আনলাম। মানুষ বিচার করে দেখুন কে, কী করছে। দেখুন, কে সাংবিধানিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করছে।
কী থেকে সংঘাতের শুরু?
২০ এপ্রিল মমতাকে চিঠি লিখে রাজ্যপাল বলেন, করোনার মতো এতবড় ঘটনার পরেও রাজ্য সরকার আমার সঙ্গে কোনও আলোচনা করেনি। কঠোর মনোভাব ছেড়ে আলোচনার সহজ পরিবেশ তৈরি করুন। আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলার সময় বের করুন। যাতে রাজ্যবাসীর সমস্যার সুরাহা হয়।
২১ এপ্রিল সেই চিঠির জবাব দেন মমতা। লেখেন আপনি এটা জেনে নিঃসন্দেহে তারিফ করবেন, গোটা রাজ্য় প্রশাসন এখন কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় ব্যস্ত রয়েছে।
২২ এপ্রিল, বুধবার মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপাল এসএমএসে লেখেন,''আপনার উত্তরে আমি স্তম্ভিত। এটা আমার পদের প্রতি অপমানজনক। আমরা দুজনেই রাজ্যের সাংবিধানিক পদাধিকারী। একজন ব্যক্তির খামখেয়ালি সিদ্ধান্তে এটা চলতে পারে না। আপনার জবাব, রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের পদটিকেই অপ্রাসঙ্গিক করে দিচ্ছে। এটা হতে পারে না। আমার ধৈর্য্য এবং সবাইকে নিয়ে চলার মনোভাবকে আপনি ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করছেন। দয়া করে এই সঙ্কটের সময়ে আমাকে দ্রুত ফোন করুন। আমি চাইলে আপনার এই অবিবেচক এবং অসাংবিধানিক বক্তব্যের জবাব দিতে পারতাম, কিন্তু তা করতে চাইছি না।''
সবমিলিয়ে নবান্ন-রাজভবন সম্পর্কের ফাটল কোনপথে এগোচ্ছে? জল্পনার পারদ চড়ছে রাজনৈতিক মহলে।
আরও পড়ুন- ঝাড়গ্রামে পুলিস লাইনের ছাদ থেকে এলোপাথাড়ি গুলি কনস্টেবলের