Durga Puja 2022: কী এই দুর্গার বোধন? কেন বছর-বছর প্রতি ষষ্ঠীতে দুর্গার ঘুম ভাঙাতে হয়?
Durga Puja 2022: দেবলোকে দক্ষিণায়ন মানে রাত্রি, আর রাত্রি হল নিদ্রালগ্ন; দেবতাদেরও নিদ্রার কাল। ঘুমন্ত দেবতার পুজো কী করে সম্ভব? পুজো করতে গেলে তাই তাঁদের ঘুম ভাঙানো আগে জরুরি।
সৌমিত্র সেন
পঞ্জিকা অনুযায়ী, ষষ্ঠীর দিন সকালে, মানে আজ দেবী দুর্গার ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ এবং আজই সন্ধেবেলায় ষষ্ঠিবিহিত পূজা, যাকে আমরা দেবীর বোধন বলে উল্লেখ করি। 'বোধন' মানে, জাগরণ। 'বোধন' শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ-- 'বোধ'+'অনট' ধাতু= জাগ্রত করা। কিন্তু কেন জাগ্রত করা? দেবীর চৈতন্যেই তো জারিত হয়ে রয়েছে সমস্ত নিখিল জগৎ; এহেন দেবীকে আবার আলাদা করে জাগানোর কী প্রয়োজন?
এ প্রশ্ন স্বাভাবিক। তবে তার ব্যাখ্যাও আছে। শরৎকালে দক্ষিণায়ন চলে। দেবলোকে দক্ষিণায়ন মানে রাত্রি, রাত্রি নিদ্রার সময়, তা দেবতাদেরও নিদ্রার কাল। অতএব এই আশ্বিনে দেবতারা নিদ্রাভিভূত থাকেন। আর ঘুমন্ত দেবতার পুজো কি সম্ভব? তাই পুজোর আগে দেবতার নিদ্রা ভাঙানো হয়। মানে, ঘুম থেকে ডেকে দেওয়া হয় দেবতাকে। দুর্গাপুজোর আগেও দুর্গাকে আগে ঘুম থেকে ডেকে দিতে হয়। ঘুম থেকে ডেকে তোলার এই পদ্ধতিই হল বোধন। 'বোধন' মানে দেবীকে ঘুম থেকে তোলা এবং জাগরণাবস্থায় প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ, পুজোর জন্য তাঁকে প্রস্তুত করে নেওয়া বা পুজো নেওয়ার জন্য তাঁকে প্রস্তুত হতে সময় দেওয়া।
পড়ুন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা
ঘুম থেকে তুলতে না-হয় বোধন, বোঝা গেল। কিন্তু, ঘুম থেকে ডেকে তুলতেই-বা হয় কেন?
সে-কাহিনী অল্পবিস্তর সকলের জানা। রাম-রাবণের যুদ্ধ চলছে। রাবণ দেবীদুর্গারও উপাসক। ফলে, যুদ্ধক্ষেত্রে দুর্গা তাঁর ভক্তকে রক্ষা করবেনই। দেবীর রক্ষাকবচ ভেদ করে রাম তা হলে কীভাবে রাবণকে বধ করবেন? অথচ, দৈববাণী আছে, রামের হাতেই রাবণবধ ঘটবে! উপায়? আর দেবী তো তখন নিদ্রিতা। রাম অগত্যা ব্রহ্মার শরণ নিলেন। ব্রহ্মা নিদ্রিতা দেবীর ধ্যান করে এ বিষয়ে দেবীর মনোগত ইচ্ছা জানলেন। দেবী বলেছেন, তাঁর বোধন করতে হবে, তা হলেই তিনি জাগ্রতা হবেন, আর তখনই তিনি রাবণবধে রামকে সাহায্য করতে পারবেন। ব্রহ্মার পরামর্শে তখন দেবীর বোধন হল রামচন্দ্রের হাতে। যাকে আমরা 'অকালবোধন' বলেই জানি। কেননা, দুর্গা পূজিতা হতেন বসন্তে। সত্য যুগে মহামায়ার পুজো করেছিলেন রাজা সুরথ, তাঁর সঙ্গী ছিলেন সমাধি বৈশ্য। এর পরে ত্রেতা যুগেও রাবণ চৈত্রেই দুর্গার আরাধনা করেছেন।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: না জেনেই বরাবর অসুর সম্প্রদায়কে অপমান করে এসেছি আমরা! এবার বন্ধ হোক...
কিন্তু এই ত্রেতাতেই রামের হাতে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটল। আজও সেই ব্যতিক্রমই নিয়মে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গিয়েছে। আজও দক্ষিণায়নেই নিদ্রিতা দেবীর ঘুম ভাঙিয়ে, তাঁর বোধন করে তাঁকে জাগরণে প্রতিষ্ঠা করে তবে তাঁর পূজা আরাধনা করা হয়। রাম দেবী পার্বতীর কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে বিল্ববৃক্ষতলে দেবীর বোধন করলেন। শরৎকাল দেবপূজার শুদ্ধ সময় নয় বলে রামকর্তৃক দেবী পার্বতীর বোধন 'অকালবোধন' নামে পরিচিত হল। উল্লেখ্য, শাস্ত্রমতে বসন্তকাল দুর্গাপূজার প্রশস্ত সময় হলেও, আধুনিক সময়ে শারদীয়া দুর্গাপূজাই অধিক প্রচলিত।