সৌমিত্র সেন


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

দুর্গাপুজোর প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহূর্তই বাঙালির কাছে মূল্যবান, মহার্ঘ। ষষ্ঠীতে বোধনের পর থেকেই পুজোর দিনতিথিনক্ষত্রকে ঘিরে শুরু হয়ে যায় বাঙালির পুজো উদযাপন। সপ্তমী থেকে তার অঞ্জলি দেওয়ার শুরু। অষ্টমী দিনটি তো খুবই বিশিষ্ট। বাঙালি গোটা পুজোয় আর কিছু করুক বা না-করুক, অষ্টমীর অঞ্জলি দেবেই। কিন্তু এত কিছুর পরেও দুর্গাষ্টমীতে সন্ধিপুজোর আলাদা মাহাত্ম্য।    


কেন সন্ধিপুজোর এমন আশ্চর্য মাহাত্ম্য? কেন এই ক্ষণ এত মূল্যবান?


ঠিক এই সময়েই দেবী দুর্গা চণ্ড ও মুণ্ড নামে ভয়ংকর দুই অসুরকে নিধন করেছিলেন। আর এই পুণ্য ঘটনাটি মনে রাখার জন্যই প্রতি বছর অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণে সন্ধিপুজোর আয়োজন। দেবীর সেই অতি ভয়ংকর শক্তিকেই নতুন করে আরাধনা করা হয়। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট-- মোট ৪৮ মিনিট হল সেই বিরল মুহূর্ত, সেই মূল্যবান সন্ধিক্ষণ। এই সময়েই দেবী চণ্ড ও মুণ্ডকে বধ করেছিলেন। সন্ধিপুজোয় দেবীকে চামুণ্ডা রূপে পূজা করা হয়। সন্ধিপুজোর দুটি উপচার স্পেশাল। ১০৮ টি পদ্ম এবং ১০৮ টি প্রদীপ। সন্ধিপুজোয় বলিদানও রীতি। কোথাও ছাগবলি, কোথাও মহিষবলি, কোথাও আবার আখ-চালকুমড়ো বলিও হয়। 


পড়ুন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা


পুরাণ বলছে, ঠিক এই সময়েই, মানে, এই ৪৮ মিনিটের সময়লগ্নেই দারুণ যুদ্ধকালে দেবী অম্বিকার তৃতীয় নেত্র থেকে দেবী কালিকা প্রকট হলেন। অন্যত্র বলা হয়েছে, রক্তবীজের সমস্ত রক্ত এই সন্ধি-মুহূর্তেই খেয়েছিলেন দেবী চামুণ্ডা কালিকা। বলা হয়, সন্ধিক্ষণ চলাকালীন দুর্গার অন্তর থেকে সমস্ত মমতা অদৃশ্য হয়, তিনি ভয়ংকরা হয়ে ওঠেন। সন্ধিপুজোর অনেক মহিমা কীর্তন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সংযমী হয়ে উপবাসী থেকে সন্ধিপুজোর ব্রত পালন করলে মায়ের অমোঘ কৃপায় মৃত্যুকালে যমও স্পর্শ করতে পারে না। বলা হয়েছে, ভক্তিভরে সন্ধিপুজোর যথাবিহিত উপবাস ও পুজো করলে সারাবছর দুর্গাপুজো করার ফল মেলে।


আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: কেন দুর্গাষ্টমীতে কুমারী পুজোর রীতি? জেনে নিন শাস্ত্র কী বলছে...


আগে রাজা বা জমিদারদের আমলে সন্ধিপুজোর সূচনায় কামান দাগার বা তোপধ্বনির রেওয়াজ ছিল। ছিল একশো আটটি পশুবলির রেওয়াজও। রক্তে লাল হয়ে যেত পুজো-চত্বর। রাজার শাসনের অবসান এবং জমিদারিতন্ত্রের পতন ঘটায় কামান দাগার রেওয়াজ নেই বললেই চলে। কোনও কোনও পুজোয় পশুবলির বিষয়টি আজও আছে। সন্ধিপুজো হল বৈদিক দুর্গাপুজোর একটি বিশেষ তান্ত্রিক অঙ্গ। বৃহদ্ধর্মপুরাণ অনুসারে, রাম রাবণবধের জন্য দেবীর বোধন করেছিলেন আশ্বিনের কৃষ্ণা নবমীতে। অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণেই রাবণকে রাম বধ করেছিলেন। বৃহদ্ধর্মপুরাণের এই আখ্যান অবশ্যই প্রচলিত কাহিনির থেকে আলাদা। কেননা, প্রচলিত কাহিনি অনুসারে, আমরা সবাই জানি, দশমীতে রাবণকে বধ করেছিলেন রাম।


এবার অষ্টমীতে, মানে ৩ অক্টোবরে বেলা ৩টে ৩৬ মিনিট থেকে বিকেল ৪টে ২৪ মিনিট মধ্যে এই সন্ধিপুজোর মহার্ঘ তিথিটি পড়েছে। 


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)