সৌমিত্র সেন
Add Zee News as a Preferred Source
মহাষ্টমীতে দেবী দুর্গার সামনে কুমারী পুজো হয়। কথিত আছে, কুমারীপুজো ছাড়া যথাবিধি হোম-যজ্ঞ করেও দুর্গাপুজোর সম্পূর্ণ ফল পাওয়া যায় না। তাই কুমারী পুজো দুর্গাপুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি এক আচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সারদাদেবীকে ষোড়শী জ্ঞানে পূজা করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ বলেওছিলেন, শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর প্রকাশ। পরে বেলুড় মঠে স্বামী বিবেকানন্দের হাতে শুরু হওয়া দুর্গাপুজোতেও কুমারী পুজো অতি বিশিষ্ট স্থান পায়। বহু কাল ধরে মানুষ এই পুজোটি দেখতে মঠে যান। কিন্তু এত জনপ্রিয় একটি আচার কেন পালিত হয়, তা কি আমরা কখনও খোঁজ করে দেখেছি?
কুমারী পুজার দার্শনিক তত্ত্ব হল-- নারীতেই পরমার্থ দর্শন ও পরমার্থ অর্জন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যে ত্রিশক্তির শক্তিতে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি, স্থিতি লয় সাধিত হচ্ছে, সেই ত্রিবিধ শক্তিই বীজাকারে কুমারীতে নিহিত বলে মনে করা হয়। কুমারী প্রকৃতি বা নারী জাতির প্রতীক। কুমারী আবার পূর্ণনারীর বীজাবস্থাও। এই কুমারীতে দেবীভাব আরোপ করে দেবীর সাধনা করা হয়।
পড়ুন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা
পুরাণমতে, কুমারী পূজার উদ্ভব হয় বাণাসুর বধ করার মধ্য দিয়ে। বাণাসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করেন। বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। দেবগণের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী পুনর্জন্মে কুমারীরূপে অবতীর্ণ হন ও বাণাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু বলে মনে করা হয়।
কুমারী পূজায় কোনও জাতি-ধর্ম-বর্ণ ভেদ নেই। দেবীজ্ঞানে যে-কোনও কুমারীই পূজনীয়। তবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যার পুজোই সর্বত্র প্রচলিত। তবে কোথাও বলা নেই যে, ব্রাহ্মণকন্যাই কেবল পূজ্য। এক্ষেত্রে ১ থেকে ষোলো বছর বয়সী যে কোনো কুমারী মেয়ের পুজো করা যায়। বয়সের ক্রমানুসারে পুজোর সময়ে কুমারীদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়:
এক বছরের কন্য-- সন্ধ্যা
দু'বছরের কন্যা-- সরস্বতী
তিন বছরের কন্যা-- ত্রিধামূর্তি
চার বছরের কন্যা-- কালিকা
পাঁচ বছরের কন্যা-- সুভগা
ছ'বছরের কন্যা-- উমা
সাত বছরের কন্যা-- মালিনী
আট বছরের কন্যা-- কুব্জিকা
ন'বছরের কন্যা-- কালসন্দর্ভা
দশ বছরের কন্যা-- অপরাজিতা
এগারো বছরের কন্যা-- রূদ্রাণী
বারো বছরের কন্যা-- ভৈরবী
তেরো বছরের কন্যা-- মহালক্ষ্মী
চোদ্দো বছরের কন্যা-- পীঠনায়িকা
পনেরো বছরের কন্যা-- ক্ষেত্রজ্ঞা
ষোলো বছরের কন্যা-- অন্নদা বা অম্বিকা
আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: পুরাণ-কাব্য বাদ দিলে এই কলিকালে কে প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করলেন, জানেন?
মাদুরাইয়ের মীনাক্ষীদেবীর মন্দিরে ও কন্যাকুমারীতে মহা ধুমধামের সঙ্গে কুমারী পুজো হয়ে থাকে। কুমারীপুজোর আগে সাধক তথা পূজক কুমারীকে নতুন বস্ত্র ও ফুলে সাজান, কুমারীর পায়ে দেন আলতা, কপালে সিঁদুর। সেকালে মুনিঋষিরা কুমারীপুজোর মাধ্যমে প্রকৃতিকেই পুজো করতেন বলে মনে করা হয়। প্রকৃতি মানে নারী। প্রকৃতিরই আর এক রূপ কুমারীদের মধ্যে দেখতে পেতেন তাঁরা। তাঁরা বিশ্বাস করতেন, মানুষের মধ্যেই রয়েছে ঈশ্বরের অযুত প্রকাশ। সেই প্রকাশেরই আবহমান কাল ধরে অভিবন্দনা করে চলেছে মানুষ।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)