দেবস্মিতা দাস: পিতৃপক্ষের শেষক্ষণ ও মাতৃপক্ষের সূচনাকালের সময়কেই মহালয়া বলা হয়। মহান কিংবা মহত্বের আলয় (আশ্রয়) থেকেই এই শব্দের উৎপত্তি। সনাতন ধর্ম অনুযায়ী, এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাকেই মহালয় বলা হয়ে থাকে। যদিও এই নামের একাধিক অর্থ হয়েছে। পুরাণ, শাস্ত্র ও আভিধানিক ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ দেখা যায়।  


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এই তিথির সময়কাল হল অমাবস্যা। পিতৃপক্ষের শেষ লগ্নেই প্রয়াত পূর্বপুরুষদের জন্য তর্পণাদির বিশেষ সময় হিসেবে ধরা হয়। যদিও এই দিনের শুভাশুভ নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। শুভ মহালয়া বলা যায় কি না তা নিয়েও দ্বিধাবিভক্ত সমাজ। তবে এর কোনও পৌরাণিক কিংবা শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা নেই। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত কিংবা গুপ্ত প্রেস অনুযায়ী কোনও 'দিন'কে শুভ হিসেবে উল্লেখ করা থাকে না। যা থাকে তা হল 'শুভক্ষণ'। শ্রাদ্ধ কিংবা তপর্ণে অশুচির কোনও উল্লেখ থাকে না। শাস্ত্রজ্ঞদের মতে যেহেতু পিতৃপুরুষদের জলনিবেদনের মাধ্যমে তৃপ্ত করা হয়, তাই এই তিথিতে অশুভ বলাও কাম্য নয়।


আরও পড়ুন, Durga Puja 2021: অষ্টমীতে মা'কে ভোগ দেওয়া হয় আট রকমের ডাল ভাজা ও হলুদ-মুড়ি দিয়ে


যদিও এই তর্পণ কেবল পিতৃপুরুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তা নয়। তপর্ন মন্ত্রে বলা হয়ে থাকে, "যে বান্ধবা অবান্ধবা বা, যে অন্য জন্মনি বান্ধবাঃ। তে তৃপ্তিং অখিলাং যান্ত, যে চ অস্মৎ তোয়-কাঙ্খিণঃ।" অর্থাৎ বন্ধু ছিলেন কিংবা বন্ধু নন অথবা জন্মজন্মান্তরে বন্ধু ছিলেন তাঁদের জলের প্রত্যাশা তৃপ্তিলাভ করুক। আর তিথিটি শুভ কিংবা অশুভ তা বিচারের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে তর্পণ শব্দটির ব্যুৎপত্তি হয়েছে তৃপ ধাতুর থেকে। তৃপ + অনট, অর্থাৎ তৃপ্তিসাধন। যা অশুভ না ভাবা কাম্য। 


মহাভারতেও এই ক্ষণের উল্লেখ পাওয়া যায়। মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে উত্তরায়ণের সময়কালে মৃত্যু বরণ করতে অর্জুনের হাতে শরশয্যায় শায়িত ভীষ্ম পুণ্যতিথিটির অপেক্ষা করতে থাকেন।  আর কর্ণের মৃত্যু পরবর্তীতে পৃথিবীতে ফিরে আসা এবং আশ্বিনের অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপুরুষকে জলদান করে স্বর্গে ফিরে যাওয়ার কাহিনি আমাদের সকলেরই জানা। তাই এই তিথির গুরুত্ব যে শুধু ধর্ম মতে তা নয়, পুরাণ-শাস্ত্রেও এই গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।


মহালয়ার দিনের গুরুত্ব অনেকটাই। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে মহালয়ার পর প্রতিপদে যে বোধন হয় সে সময়ও সংকল্প করে দুর্গা পূজা করা যায়।যাকে বলে প্রতিপদ কল্পরম্ভা। মহাভারতের পাশাপাশি মহালয়ার ক্ষণের উল্লেখ পাওয়া যায় কৃত্তিবাসী রামায়ণেও। সেখানে লঙ্কা বিজয়ের আগে অকালে দেবীকে এই সন্ধিক্ষণে আরাধনা করেছিলেন শ্রী রামচন্দ্র। পরবর্তীতে যা বাসন্তী পুজো নামেই সর্বজনবিদিত। পুরাণ, শাস্ত্র, ইতিহাস বলে যে আলয়ে অন্ধকার ক্ষণ লয় হয়ে আলোকে উদ্ভাসিত হয়, সেই সময়ের গুরুত্ব অসীম হওয়াই স্বাভাবিক।


আরও পড়ুন, Durga Puja 2021: মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতে পুজো শুরু করলেন কৃষ্ণচন্দ্রের স্ত্রী রানি ভবানী


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)