#মকরসংক্রান্তি: আউনি-বাউনি কোথাও না যেও, ৩ দিন ঘরে বসে পিঠেপুলি খেও!
অতীত লোকাচার যতদিন এবং যতটুকু ধরে রাখা যায় ততটাই লাভ। লাভ উত্তরপ্রজন্মের।
সৌমিত্র সেন
পৌষ সংক্রান্তির 'চার্ম' কি হারিয়ে যাচ্ছে? তা হয়ে পড়ছে কি কিঞ্চিৎ কৃত্রিম? হয়তো। আসলে নব্য জীবনযাপনের ধাপচাপে বাঙালি এখন অনেকাংশে ভুলতে বসেছে তার শিকড়। তাই কৃত্রিমতা এসে গ্রাস করছে সেসব। অথচ এককালে এসব যথেষ্ট আড়ম্বরের সঙ্গে ও গুরুত্বের সঙ্গেই উদযাপিত হত। পুরনো বাংলা সাহিত্যেও এই পৌষ সংক্রান্তির নানা দৃষ্টান্ত আছে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্য়ে বাঙালির ঘরের এই সব রীতি-উৎসব বারবার ফিরে এসেছে।
ঠিক কী হত? এই সংক্রান্তির আগে গাঁয়ে-ঘরে সব চেয়ে বেশি যেটা শোনা যেত তা হল, ঢেঁকির ওঠা-পড়ার শব্দ আর তার সঙ্গে ঢেঁকির গান। গ্রামে গ্রামে ঢেকিতে, গানের সুরের মধ্যে দিয়ে চাল গুঁড়ো করার ছবিও গ্রামবাংলার এক চিরন্তন ছবি হয়ে থেকেছে। দুঃসহ নগরায়নের ঠেলায় ধীরে ধীরে সেসব হারিয়ে যাচ্ছে।
হারিয়ে যাচ্ছে আরও একটি জিনিস। আউনি বাউনি। একালের ছেলেমেয়েরা হয়তো 'আউনি বাউনি' কী বস্তু ভেবে আশ্চর্যই হবে। আউনি বাউনি হল পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে ঘরে ঘরে যে উৎসব পালিত হয় তার অন্যতম প্রধান ও প্রাথমিক অংশ।
আমাদের বুঝতে হবে, পুণ্যস্নানের অনুষঙ্গ বাদ দিলে পৌষ সংক্রান্তি মূলত একটি শস্যোৎসব। এই উৎসব আদতে ছিল ক্ষেতের পাকা ধান প্রথম ঘরে তোলা উপলক্ষে কৃষক পরিবারে পালনীয় এক বিশেষ অনুষ্ঠান। এরই জেরে পৌষ সংক্রান্তির দিন দু-তিনটি ধানের শিষ বিনুনি করে 'আউনি বাউনি' তৈরি করা হয়। শহরাঞ্চলে আজকাল শিষের অভাবে দু-তিনটি খড় একত্রে লম্বা করে পাকিয়েও আউনি-বাউনি তৈরি করা হয়। এর সঙ্গে ধানের শিষ, মুলোফুল, সরষেফুল, গাঁদাফুল, আমপাতা ইত্যাদি বেঁধে দেওয়া হয়। এই আউনি বাউনি আগেকার দিনে ধানের গোলা, ঢেঁকি, বাক্স-পেঁটরা-তোরঙ্গ ইত্যাদির উপরে এবং ঘরের খড়ের চালে গুঁজে দেওয়া হত। এখন রান্নাঘরে চালের হাঁড়়িতে, ঘরে যে লক্ষ্মীপ্রতিমা বা পট পুজো করা হয় সেখানে এবং আলমারি ইত্যাদিতে দেওয়া হয়।
হারিয়ে যাবেই। সমাজের নিয়মই তাই। লোকাচারের কিছু কিছু জিনিস ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হবে। তবে সেসব যতদিন এবং যতটুকু ধরে রাখা যায় ততটাই লাভ। লাভ উত্তরপ্রজন্মের। তারা অন্তত তাদের অতীত ঐতিহ্যের একটা আভাস পাবে।
আরও পড়ুন: #মকরসংক্রান্তি: ৩ দশকের মাথায় শনি-সূর্যের মিলনের জেরে ভাগ্য সুপ্রসন্ন এই ৪ রাশির