প্রেম হোক বা খুন্তি, ছ্যাঁকা আজ নাই বা খেলেন!
প্রকৃতি আমাকে টানে না। টানেনি কোনও গাছ পাখি। প্রকৃতির মাঝে আমি কেবল সে নদীকেই চিনি। শুধু এ দিন কেন ভালবাসার কবুতরের ঠোঁটে লেগে থাকা লিপস্টিক-সম! কোন এক ভ্যালেন্টাইনস নামে খ্রিস্টান পাদ্রী ও চিকিত্সক
দিব্যেন্দু ঘোষ
ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত।
শান-বাঁধানো ফুটপাতে,
পাথরে পা ডুবিয়ে এ কাঠখোট্টা গাছ,
কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে হাসছে।
-সুভাষ মুখোপাধ্যায়
আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। হৃদয়ে ফুল ফুটুক আর না ফুটুক, শীতের রিক্ততা হারিয়ে বাংলার প্রকৃতিতে ফাগুন-ছোঁয়া। মনের পুলকিত বাগিচায় আগুনরাঙা বসন্তের সুর। সবুজ পাতার ফাঁকে শিমুল-পলাশের উঁকি, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গমের কোলাহল শুরুর অপেক্ষা। পারিজাত রঙের কোলাহল। পাতার আড়ালে আবডালে কুহুধ্বনির মতোই মাতাল মনে বাসন্তিক আলিঙ্গন।
ফের সেই কবির অনুভূতিতে ফিরে যাওয়া,
এ ফাগুনে সাজিয়েছি অঞ্জলি,
আমার হৃদয়ের থালা ভরে।
দেখা হোক, আদর হোক ভালবাসায়।
দুটি হৃদয় একটি থালায়,
শিমুল ও পলাশের ফুলে ফুলে।
কবি সুফিয়া কামালের কলম বলছে,
হে কবি! নীরব কেন
ফাগুন যে এসেছে ধ'রায়,
বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?
আজকে নাকি চোদ্দ ফেব্রুয়ারি। নাকি নয়, সত্যি। চারিদিকে শুধু ভালবাসা নিয়ে খেলা। স্মৃতিরা বিব্রত করে যুগলকে। গোলাপের রং আষ্টেপৃষ্টে বাঁধে আবেগ আর চুম্বনের কোলাজকে। প্রেমিকার চোখে ভালবাসা জমা। প্রেমিক প্রশ্ন সুধায়, কত ভালবাসা ওরা জমা করে রাখে? প্রেমিকার হাতে রক্তলাল গোলাপ তুলে দিয়ে ভ্রুকাঞ্চনে জমে অবারিত প্রশ্ন, ভালবাসো।
আরও পড়ুন- প্রেমের রাত,মেকআপে বাজিমাত
প্রেমিকার আলিঙ্গনে প্রেমিককে বার বার কবির মূর্ছনায় আশ্রয় নিতে হয়,
ভুলভাল ভেবে তোমাকে কি ভাবি নদীর মতন?
কোন দূর থেকে কেন ছুটে এসে মেশ মোহনায়?
মিলবেই যদি মোহনায় এসে কেন লোনা নও?
মিলতে পার না লোনা জলে তুমি তাই গর্জাও?
নাকি সেই গর্জন তোমার আমার সঙ্গম ধ্বনি?
কে বলেছে কবে সঙ্গমে সব এক হতে হয়?
আমরা না হয় মানুষের মত বিষকামীই,
মেলে না বলেই মিলনে কি এত সংগ্রাম নয়?
প্রকৃতি আমাকে টানে না। টানেনি কোনও গাছ পাখি। প্রকৃতির মাঝে আমি কেবল সে নদীকেই চিনি। শুধু এ দিন কেন ভালবাসার কবুতরের ঠোঁটে লেগে থাকা লিপস্টিক-সম! কোন এক ভ্যালেন্টাইনস নামে খ্রিস্টান পাদ্রী ও চিকিত্সক। তাঁর নামে বাঙালির বুকে আজও লাবডুব ধ্বনি। আজ নাকি উত্তর কলকাতার এক ক্যাফে লাভ-ডিসকাউন্ট দেয়। প্রেমিকাকে নিয়ে গেলে দশ শতাংশ। স্ত্রীকে নিয়ে গেলে পনেরো শতাংশ। আর বন্ধুনি ও বউয়ের দুই হাত পাকড়ে ক্যাফেতে পা ফেললেই ডিসকাউন্ট তড়বড় করে উঠে যায় পঞ্চাশ শতাংশে। আজ বউকে বলেই দিন বন্ধুনির কথা। আর বান্ধবীর কানে সলাজ ফিসফাসে বউয়ের কথা বলেই ফেলুন। হোক ভুল বোঝাবুঝি। বছরের আরও অনেক দিন তো রয়েছেই। প্রেমদিবসে সব দূরে সরিয়ে শুধু ডুব দিন প্রিয় মানুষের চোখে। বাকি যা ঘটে ঘটুক। প্রেমের ছ্যাঁকা খান, কিংবা খুন্তির, আপাতত সব ভুলে মেতে উঠুন অনন্য প্রেমযাপনে।