স্বপনকুমার মণ্ডল


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ছবি যখন স্কুলে পড়ত তখন সে প্রথম প্রেমের চিঠি পেয়েছিল। অন্য মেয়েরা যা করে  সেও তাই করল। চিঠিটি গোপন করে পরে ছিঁড়ে ফেলল। যে প্রেমিক চূড়ান্ত প্রত্যাশা নিয়ে পথ চেয়েছিল, সে অপেক্ষায় অপেক্ষায় ক্লান্ত হয়ে অবশেষে আশা ত্যাগ করল। ছবি চিঠির ছেঁড়া টুকরো দুটি কোথায় ফেলবে বুঝে না পেয়ে ফাঁকা ক্লাসরুমে ঘুলঘুলির মধ্যে রেখে দিয়েছিল। প্রতিবছর ঐ ঘুলঘুলিতে চড়াই পাখির বাসা হত। ভালবাসার প্রস্তাব ছোট ছোট তিনটি ডিমের তলায় চাপা পড়ত। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে ধীরে ধীরে তারা বড় হত। তারপর পত্ পত্ করে পাখনা মেলে উড়ে যেত ছানারা। পড়ে থাকত ফাঁকা বাসা। আরও অনেকদিন কেটে গেল এইভাবে। ছবি স্কুলের সীমা পেরিয়ে চলে গেছে কলেজে। সেখানে কোন এক অরিন্দমের সাথে তার পরিচয় হল। পরিচয় ক্রমে ঘনিষ্ঠ  হতে হতে কয়েকবছর পর তারা বিয়ে করল। কিন্তু একদিন  স্কুলে একটি ঘটনা ঘটল। চড়াই পাখির সেই শূন্য বাসা দমকা হাওয়ায় উড়ে এসে পড়ল মেয়েদের বেঞ্চে মনিকার মাথায়। কি কান্ড! ক্লাস জুড়ে হই হই। চিঠির সেই দুটি টুকরো হাওয়ায় পাক খেতে খেতে পড়ল সামনের মেঝেতে। হাতে তুলে নিল সায়রী। খন্ড দুটি এক করে পড়ে সে তো অবাক। সবাইকে পড়ে শোনাল মজা করে।


কিন্তু লজ্জায় রাঙা  হয়ে গেল আর এক ছবি। লিখেছে সুনীল। কে সুনীল? প্রেম প্রস্তাব এত সুন্দর ভাষায় লেখার লোক এখন কোথায়! অতএব সুনীলকে খোঁজা চলতে থাকল। নানা হাত ঘুরতে ঘুরতে চিঠির ছিন্ন খন্ডদুটি প্রধান শিক্ষকের হাতে পৌঁছাল। চিঠির রং দেখে তিনি  চশমার ফাঁক দিয়ে পত্রবাহকের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন যাও, দেখছি। নবম শ্রেণির ছবি সকলের বাঁকাদৃষ্টি সহ্য করেছিল ক'টা দিন। দুদিন পর চিঠি হাতে নিয়ে প্রধান শিক্ষক ক্লাস নাইনের ঘরে এলেন। সবাইকে বসতে বলে যে গল্প শোনালেন, তা শুনে সবাই স্তম্ভিত হল। যে সুনীল এই চিঠি লিখেছিল, সে আর এই পৃথিবীতে নেই। বছর তিনেক আগে কোনও এক রাজনৈতিক  বিরোধে সুনীল মার্ডার হয়েছে। চড়াইপাখির বাসায় তার ভালবাসা সাক্ষী হয়ে ছিল এতকাল।


ছবি সন্তান সন্ততি নিয়ে ঘর সংসার সামলাচ্ছে। সুনীলের মত একটা লাস্ট বেঞ্চার ছেলের হারিয়ে যাওয়া সে কেমনভাবে নিয়েছিল জানা যায়নি।  


আর অপেক্ষা ব্রেইল এ লেখা তোমার একটা...।
                                ইতি...