Rasha Purnima: জেনে নিন কখন পড়ছে রাস পূর্ণিমার তিথি, কী কী নিয়ম মেনে উদযাপন করতে হবে এই উৎসব...
Rasha Purnima: বলা হয়, `রস` থেকেই `রাস` শব্দটি এসেছে। `রস` অর্থে সার, নির্যাস, আনন্দ, অমৃত ও ব্রহ্ম। তবে বৈষ্ণবদর্শনে `রস` বলতে মূলত মধুর রসকেই বোঝায়।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: কার্তিক মাস হিন্দু ক্যালেন্ডারে অতি শুভ একটি মাস। মনে করা হয়, কার্তিক মাসে শিব তিন অসুরকে বধ করেছিলেন। আর এ মাসের কার্তিকী পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠিত রাস-উৎসবও অতি বিশিষ্ট ধর্মীয় উদযাপন। বঙ্গজীবনের অন্যতম ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক উদযাপন এই রাস। রাস শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অংশবিশেষ। বৃন্দাবনে শ্রীরাধা-সহ অন্য গোপীদের সঙ্গে লীলা করেছিলেন তিনি। 'রাস' মানে, পরস্পর হাত ধরে মণ্ডলাকারে নৃত্য। রাস মূলত পাঁচরকম: মহারাস, বসন্তরাস, কুঞ্জরাস, দিব্যরাস, নিত্যরাস। রাসের অনেকগুলি পর্যায়ও আছে: গোপিনীদের কৃষ্ণ-অভিসার, কৃষ্ণের বংশীবাদন, গোপিনীদের নৃত্যগীত, শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধান এবং প্রত্যাবর্তন। বলা হয়, 'রস' থেকেই 'রাস' শব্দটি এসেছে। 'রস' অর্থে সার, নির্যাস, আনন্দ, অমৃত ও ব্রহ্ম। তবে বৈষ্ণবদর্শনে 'রস' বলতে মূলত মধুর রসই বোঝায়।
কখন পড়ছে রাসপূর্ণিমার তিথি?
তিথি অনুসারে, রাস পূর্ণিমা পড়েছে, আজ, ৭ নভেম্বর সোমবার। তিথি শুরু বিকেল ৪টে ১৫ মিনিটে। অর্থাৎ, রাসের তিথি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এই তিথি শেষ হবে আগামী কাল ৮ নভেম্বর, মঙ্গলবার বিকেল ৪টে ৩১ মিনিটে। এই তিথিতে নদীতে পুণ্যস্নানও করা হয়-- একে কার্তিক স্নান বলে।
আরও পড়ুন: Guru Nanak Jayanti: কার্তিক পূর্ণিমার এই পুণ্য লগ্নে অবতীর্ণ হলেন গুরু নানক...
কী ভাবে উদযাপন করা হয় এই পুণ্যতিথি?
নদীতে স্নান (কার্তিক স্নান)
এদিন অনেকেই উপবাস করেন
অনেকে সম্পূর্ণ উপবাস না করে জল, দুধ, সরবত, ফলের রস ইত্যাদি খেতে থাকেন
যাঁরা উপবাসে অক্ষম তাঁরা সাত্ত্বিক খাবার গ্রহণ করে দিনটি পালন করেন
এদিন আমিষ খাদ্যগ্রহণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ; নিষিদ্ধ নেশাদ্রব্য উপভোগও--যেমন, মদ্যপান বা ধূমপান
দিনটি কৃষ্ণের রাসলীলার উদযাপন, তাই এদিন অবশ্যই কৃষ্ণের বিশেষ পূজা বিধেয়
রাসপূর্ণিমার তাৎপর্য কী?
রাস হল কৃষ্ণের অন্যতম বৃন্দাবন লীলা। এর ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অসীম। তা আবহমান কাল ধরে চলে আসছে। তবে বঙ্গজীবনে রাস উদযাপনে নতুন করে উদ্দীপনা এনে দেন দু'জন-- শ্রীচৈতন্যদেব ও রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়। শ্রীচৈতন্য নবদ্বীপে রাস-উৎসবকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। শ্রীচৈতন্য ও তাঁর অনুগামীগণ রাসকে গৌড়ীয় বৈষ্ণব সাধনার অন্যতম এক অঙ্গই করে তুলেছিলেন। তবে শ্রীচৈতন্য নীলাচলে চলে গেলে এবং পরে তাঁর তিরোধান ঘটলে নবদ্বীপের রাস-মহিমা ধীরে ধীরে কমে।
এর প্রায় দু'শো বছর বাদে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র আবার নতুন করে রাসকে জনপ্রিয় করে তুললেন। মোটামুটি ধরা হয়, ১৭৫৩-৫৬ এই সময়-পর্বেই কৃষ্ণচন্দ্র রাস প্রবর্তন করেন। শ্রীচৈতন্যের রাস ও কৃষ্ণচন্দ্রে রাসের মধ্যে ফারাক ছিল। কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন শাক্ত। তিনি চাইতেন, তাঁর রাজত্বে শক্তিসাধনাই জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে হোক। যদিও বৈষ্ণবদের প্রতি তিনি বিদ্বেষভাবাপন্ন ছিলেন না। আবার এ কথাও ঠিক, তিনি শ্রীচৈতন্য ও তাঁর অনুগামীদের তেমন পছন্দও করতেন না। তাই রাস প্রবর্তন করলেও তিনি ব্যাপারটা একটু বদলে নিলেন। তাঁর প্রবর্তিত রাস ক্রমে 'শাক্তরাস' হিসেবে পরিচিত হল।
এখন অবশ্য এত দর্শনগত তাত্ত্বিক বিরোধ নেই। এখন রাস উৎসব সকলে নিজেদের মতো পালন করেন। রাস এখন গ্রামে-গঞ্জে বর্ণিল ভাবে পালিত হয়।